আশরাফুলের সেরা টেস্ট দলে অধিনায়ক সাকিব, রাখেননি নিজেকে


দেশের হয়ে অভিষেক টেস্ট খেলেননি। তারপরও নিজের অভিষেকে সর্বকণিষ্ঠ টেস্ট ব্যাটসম্যান হিসেবে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে শতরান করে এখনও চিরস্মরণীয় মোহাম্মদ আশরাফুল। শুধু ক্যারিয়ারের প্রথম টেস্টে মাত্র ১৭ বছর বয়সে সেঞ্চুরি করাই নয়, ব্যাটসম্যান আশরাফুলের টেস্ট-ওয়ানডেতে অনেক কীর্তি আছে, সাফল্য-অর্জনে তিনি অনেকের ওপরে।

তবে কঠিন সত্য হলো প্রতিভা, নিখুঁত ব্যাটিং টেকনিক, পেস-স্পিনে সমান দক্ষতার সঙ্গে শটস খেলার সহজাত প্রতিভার তুলনায় তার রেকর্ড ও পরিসংখ্যান জীর্ণশীর্ণ। ক্যরিয়ারের একটা পর্যায়ে হঠাৎ অন্ধকার পথে পা বাড়িয়েছেন। ম্যাচ ফিক্সিংয়ে জড়িয়ে নিষিদ্ধ হয়ে নিন্দিত, সমালোচিতও হয়েছিলেন এ নন্দিত ব্যাটসম্যান। তারপরও মোহাম্মদ আশরাফুল বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসের সবচেয়ে ‘ট্যালেন্টেড’ উইলোবাজ হিসেবে সমাদৃত। অতি বড় সমালোচকও মানেন আশরাফুলই বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসের এখন পর্যন্ত সেরা ন্যাচারাল ট্যালেন্ট। কিন্তু শুনে অবাক হবেন, এই অসাধারণ উইলোবাজ নিজেকে বাংলাদেশের সবসময়ের সেরা টেস্ট দলে রাখেননি।

সোমবার দুপুরে জাগো নিউজের সঙ্গে আলাপে নিজের খেলা ও দেখা বাংলাদেশের সর্বকালের সেরা টেস্ট দল সাজাতে গিয়ে আশরাফুল নিজেকে বাইরে রেখেছেন। তার ব্যাখ্যা হলো, আমি যেহেতু সেরা দল নির্বাচন করছি, তাতে নিজেকে রাখি কী করে? তবে নিজেকে দেশের ইতিহাসের সেরা টেস্ট দলে থাকার যোগ্য দাবিদারই মনে করেন আশরাফুল।

বাংলাদেশের সর্বকালের সেরা টেস্ট দলে আশরাফুলের প্রথম পছন্দ তামিম ইকবাল। তার ভাষায়, ‘তামিম অটোমেটিক চয়েজ। যেকোন সময় প্রথম পছন্দ। এখন তামিমের সঙ্গী হিসেবে আমি বেছে নিয়েছি জাভেদ ভাইকে (জাভেদ ওমর বেলিম)। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের হয়ে যারা টেস্টে ওপেনার হিসেবে খেলেছেন, তার মধ্যে একমাত্র তামিম ছাড়া আর কেউ ২০ বছরে ৪০ টেস্ট খেলতে পারেননি। ইমরুল কায়েস-শাহহরিয়ার নাফীসরা যা পারেনি, জাভেদ ভাই তা পেরেছেন। তিনি ঐ সময়ে ৪০ টেস্ট খেলেছেন। যেটা মোটেও সহজ কাজ ছিল না।’

আশরাফুলের জোর দাবি, ‘আমাদের ঐ সময়ের প্রতিপক্ষ দলগুলো ছিল এখনকার চেয়ে অনেক বেশি বিপজ্জনক। সেখানে জাভেদ ভাই খেলেছেন, দলের প্রয়োজনে একদিক আগলে রাখার কাজটি করেছেন আন্তরিকতা ও বিশ্বস্ততার সাথে। আমার মনে হয় আমাদের সবসময়ের সেরা টেস্ট দলের ওপেনিং জুটিতে তামিমের সাথে জাভেদ ভাই ভালো যায়।’

‘তিন নম্বর পজিশনে আমার একমাত্র পছন্দ হাবিবুল বাশার। বাংলাদেশের হয়ে শুরুর কয়েক বছর সুমন ভাই (হাবিবুল বাশার) যে পারফরম করেছেন, যত রান করেছেন, তাতে করে তিনি সবসময়ের সেরা দলে অবশ্যই জায়গা পাওয়ার দাবিদার। একইভাবে আমি সুমন ভাইয়ের পর মুমিনুল হককে রাখতে চাই। আমার মনে হয় মুমিনুলও চার নম্বরে সম্ভাব্য সেরা পছন্দ।’ পাঁচ নম্বরে আশরাফুলের পছন্দ একটু ভিন্ন। সাধারণত সবাই এই জায়গায় মুশফিকুর রহীম, সাকিব আল হাসান বা আশরাফুলকেই বেছে নেন। আশরাফুল তাদের কাউকেই পাঁচে রাখেননি। ঐ পজিশনে তার পছন্দ আমিনুল ইসলাম বুলবুল।

তার ব্যাখ্যা, বুলবুল ভাই তার অভিষেক টেস্টের ১৪৫ রানের ঐ অসামান্য ইনিংস খেলেই নিজেকে অমর করে রেখেছেন। আমার মনে হয় বাংলাদেশের সবসময়ের সেরা টেস্ট দলে বুলবুল ভাই সবসময় থাকার যোগ্যতা রাখেন। কারণ যখন বাংলাদেশ টেস্ট খেলে না, আমরা আন্তর্জাতিক ক্রিকেট মানেই শুধু ওয়ানডে খেলতাম, সেই সময়ে ভারতের প্রচণ্ড শক্তিশালি বোলিংয়ের বিপক্ষে সেঞ্চুরি করে বুলবুল ভাই দেখিয়ে দিয়েছিলেন আমরাও টেস্ট খেলতে পারি। আর ওটা ছিল আদর্শ টেস্ট ইনিংস। তাই পাঁচ নম্বরে আমার পছন্দ বুলবুল ভাই। আমি যতবার সেরা টেস্ট দল সাজাবো সবসময় বুলবুল ভাইকে রাখব।’

‘ছয়-সাতে আমার আরও দুটি পছন্দ আছে; সাকিব আল হাসান ও মুশফিকুর রহিম। যারা চোখ বুজে বাংলাদেশ দলে থাকবে। সাকিব ছয় নম্বরে খেলবে, আমার দলের অধিনায়কও সে। আমার দলে মোট সাতজন অধিনায়ক আছে। তবে দুর্দান্ত বোলিং আর অনাায়স সাবলীল ব্যাটিংয়ের সঙ্গে মাঠে বুদ্ধিদীপ্ত পদচারণার কারণে সাকিবকে আমার খুব পছন্দ। তাই আমার দলের অধিনায়ক সাকিব।আমি মুশফিককে উইকেটকিপার কাম ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলানোর পক্ষে। তাই তার ব্যাটিং অর্ডার একটু নিচে।’

‘টেস্ট ম্যাচ দেশের মাটিতে হলে আমার দলের ৮ নম্বর সদস্য মেহেদি হাসান মিরাজ। নয় নম্বর ক্রিকেটারটি মোহাম্মদ রফিক। যার মনোনয়ন নিয়ে আমার মনে হয় না কারও মনে এতটুকু সংশয় আছে। রফিক ভাইয়ের পর আমার পছন্দ মাশরাফি আর শাহাদাত হোসেন রাজিব। আমার মনে হয় তারা সেরা পেস বোলিং জুটি।’

‘তবে দেশের বাইরে খেলা হলে আমি মিরাজকে বাইরে রেখে শান্ত (হাসিবুল হোসেন শান্ত) ভাইকে নেবো। যদিও অল্পসময় খেলেছেন, তারপরও আমার মনে হয় আমাদের সবসময়ের সেরা টেস্ট দলে থাকার সবরকম যোগ্যতাই আছে শান্ত ভাইয়ের। দেশের বাইরে তো আর আমরা তিন স্পিনার খেলাবো না, সেখানে সাকিব আর রফিক ভাই-ই যথেষ্ট। তাই বিদেশের মাটিতে আমি মাশরাফি ও শাহাদাত রাজিবের সঙ্গে শান্ত ভাইকে রাখার পক্ষে।’

আশরাফুলের পছন্দের ও সেরা টেস্ট দল: তামিম ইকবাল, জাভেদ ওমর বেলিম, হাবিবুল বাশার সুমন, মুমিনুল হক, আমিনুল ইসলাম বুলবুল, সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহীম, মেহেদি হাসান মিরাজ, মোহাম্মদ রফিক, মাশরাফি বিন মর্তুজা এবং শাহাদাত হোসেন রাজিব।

(দেশের বাইরে হলে মেহেদি হাসান মিরাজের বদলে হাসিবুল হোসেন শান্ত।)

প্রজন্মনিউজ২৪/ফরিদ