আম্মু আমি জন্মদিনে কেক কাটবো


কেউ মালিহা বলে ডাকে আবার কেউবা ডাকে মেঘলা নামে। অবশ্য পুরো নাম মিন্নাতুন মালিহা মেঘলা। প্রথম দুবছর ছোটখাটোভাবে জন্মদিন পালন হয়েছে তখন ও কিছুই বুঝতো না। এখন অবশ্য সবকিছু মোটামুটি বুঝতে শিখেছে। প্রতিবেশির বাচ্ছাকাচ্ছা এবং টেলিভিশন অনুষ্ঠানে  জন্মদিন পালন দেখে বেশ আনন্দিত হয়। এবার বেশ আগে থেকেই অর্থাৎ ৬-৭ মাস আগে একদিন সকালে বলছে, আম্মু ! একটা কথা বলবো ?
হ্যা! বলো আম্মু!
এবার আমি আমার জন্মদিনে কেক কাটবো!
আচ্ছা ঠিক আছে!

এদিকে মহামারি করোনাভাইরাস বিশ্বব্যাপী আধিপত্য বিস্তার করে চলেছে। লকডাউন, কোয়ারেন্টাইন, হোম কোয়ারেন্টাইন, আইসোলেশন, এমনকি আইসিইউ কোন কিছুর তোয়াক্কা না করে একাই প্রভাব বিস্তার করে চলেছে। বিশ্বের একটি রাষ্ট্রকে অপর রাষ্ট্রের সাথে করেছে বিচ্ছিন্ন। অর্থাৎ গোটা পৃথিবীটা আজ অচলাবস্থা প্রায়।
অন্যদিকে ২০ মে সুপার সাইক্লোন "আম্ফান" উপকুলে সবকিছু তছনছ করেছে।

এই দুই দুর্যোগ মিলিয়ে প্রতিবেশী, আত্বীয় - স্বজন সবাই খুবই পেরেশানিতে আছে। ওদিকে পূর্বথেকে জন্মদিনের কেক কাটার আবদার। তবে সব মিলিয়ে সিদ্ধান্ত হলো - জন্মদিনটা পালন করা যায়।


দিনটি ছিলো ৩১ মে, শনিবার। আজ মালিহার ৮ম জন্মদিন। সকাল থেকেইে তুলি, আঁখি, সাগর, সাবিনা ওরা এসে জিজ্ঞেস করছে কখন কেক কাটবি মালিহা ?

বিকেলে।

এদিকে সকাল থেকেই থেমেথেমে বৃষ্টির মাঝে একটু একটু রোদ। 

আম্মু! আম্মু!
মামারা কখন আসবে ? কেক নিয়ে আসবে কখন ?  কখন কেক কাটবো ? নানা প্রশ্ন ছোট্ট মালিহার। 

কিছুক্ষনের মাঝে কুয়েত থেকে আব্বুর ফোন পেয়ে.......
আব্বু কেমন আছো ? আমি আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। আব্বু আজকে আমি জন্মদিনের কেক কাটবো! মামারা আসবে, প্রতিবেশীরা আসবে, বান্ধবীরা আসবে। খুব মজা হবে তাই না আব্বু??

(মনে অনেক কষ্ট চেঁপে) হ্যাঁ!  
আম্মু অনেক মজা হবে! 

আব্বু তুমি বাড়ি আসবে কবে ?
এইতো আসবো!
না! না! তুমি আগামি বছরের মধ্যে আসবে এবং আগামি বছর আমার জন্মদিনে অনেক অনেক মজা করবো! আসবে তো ????

সকাল গড়িয়ে দুপুর, দুপুর গড়িয়ে বিকেল এমন সময় মালিহার আবার প্রশ্ন 
আম্মু! কখন কেক কাটবো ? 

এদিকে তুলি, আঁখি, প্রতিবেশীরা কেউ কেউ চলে এসেছে
সবাই অপেক্ষা করছে কেক নিয়ে আসলেই কেক কাটা শুরু হবে।

দাদুভাই - দাদীআপা আমার মামাকে একটু ফোন দাওতো, কখন কেক নিয়ে আসবে ?

সময়ই যেন কাটছে না মালিহার!  এদিকে বিকেলের পর সন্ধ্যা!

 হঠাৎ করেই আম্মুর ফোন বেঁজে উঠলো......
আস্সালামুআলাইকুম!
ওয়ালাইকুমআস্সালাম!
সালামের জবাব দিয়েই মামা বললো, আমরা কিছুক্ষনের মধ্যইে চলে আসছি.........

সবাই একসাথে আনন্দে চিৎকার শুরু হলো!

একটু অপক্ষোর পর হঠাৎ দুর থেকে যেন একটা আলো ভেসে আসছে, দেখতে দেখতে মটর বাইকটি বাড়ির সামনে এসে থামতেই সবার মাঝে আনন্দের ছড়াছড়ি!
মামারা এসেছে! মামারা এসেছে!  কোনমতইে যেন থামছেিলা না আনন্দের উল্লাস! এ যেন দীর্ঘদিনের আনন্দ উৎসবের প্রহর গোনার অপেক্ষার অবসান।

যাইহোক! এবার কেক কাটা শুরু হবে। পুর্ব থেকেই সাজানো ঘরটাতে একে একে সবাই উপস্থিত হলো। মালিহা সবার কাছে দোয়া চেয়ে দীর্ঘদিনের স্বপ্ন পুরণ করার মুর্হুতে সকলে একসাথে বলতে শুরু করলো......
 হ্যাপি বার্থ ডে! হ্যাপি বার্থ ডে মালিহা!
 সাথে বেলুন ফোটানোর ঠাস ঠাস শব্দের মাঝে সকলের গাঁ সাদা স্প্রেতে ভরে গেলো!
একেএকে সবাইকে ছোট্ট মালিহা নিজ হাতে কেক খাওয়ালো! 

শেখ ইয়াছিন আলম।
শিক্ষার্থী
অর্থনীতি বিভাগ
সরকারি বিএল কলেজ, খুলনা।