জীবন রক্ষাকারী ‘প্রথম’ ওষুধ ডেক্সামেথাসোন বাংলাদেশেও ব্যবহার হচ্ছে

প্রকাশিত: ১৭ জুন, ২০২০ ০৮:১৭:১০

জীবন রক্ষাকারী ‘প্রথম’ ওষুধ ডেক্সামেথাসোন বাংলাদেশেও ব্যবহার হচ্ছে

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত সংকটাপন্ন রোগীদের জীবন বাঁচাতে পারে সস্তা ও সহজলভ্য একটি ওষুধ—ডেক্সামেথাসন। যুক্তরাজ্যের বিজ্ঞানীরা বলছেন, করোনা মোকাবেলার ক্ষেত্রে এই ওষুধ বড় সাফল্য হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে। বাংলাদেশেও করোনা রোগীদের চিকিৎসায় এ ওষুধটি ব্যবহার করা হচ্ছে। এতে ভালো ফল পাওয়া যাচ্ছে বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন।

বিবিসি জানায়, করোনা চিকিৎসায় যেসব ওষুধের কার্যকারিতা নিয়ে বৃহৎ পরিসরে গবেষণা চলছে, সেগুলোর মধ্যে ডেক্সামেথাসনও রয়েছে। গবেষণায় দেখা গেছে, করোনায় আক্রান্ত যেসব রোগীকে ভেন্টিলেটর দেওয়া হয়, ডেক্সামেথাসন তাদের ৩৩ শতাংশের জীবন বাঁচাতে সক্ষম। এ ছাড়া যাদের অক্সিজেন প্রয়োজন পড়ে, ডেক্সামেথাসন প্রয়োগের ফলে তাদের মৃত্যুঝুঁকি কমে অন্তত ২০ শতাংশ।  

গবেষকরা বলছেন, করোনা মহামারির শুরু থেকে যদি যুক্তরাজ্যে এই ওষুধ ব্যবহার করা হতো, তাহলে আরো অন্তত পাঁচ হাজার মানুষের জীবন বাঁচানো যেত। এই ওষুধ অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে থাকা দেশগুলোর জন্য সবচেয়ে বড় আশীর্বাদ বলেও মনে করেন গবেষকরা।

গবেষকরা বলছেন, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত প্রতি ২০ জনের ১৯ জনকেই হাসপাতালে ভর্তি হতে হয় না। তারা বাড়িতেই সেরে ওঠে। যাদের হাসপাতালে নেওয়া হয়, তাদের বেশির ভাগই সুস্থ হয়ে যায়। কিন্তু যাদের ভেন্টিলেটর কিংবা অক্সিজেন দেওয়া হয়, তারা ঝুঁকিপূর্ণ। এসব রোগীর ক্ষেত্রে ডেক্সামেথাসন খুবই সহায়ক বলে প্রমাণিত হয়েছে।

ডেক্সামেথাসন এরই মধ্যে অনেক রোগীর ওপর প্রয়োগ করা হয়েছে। বিশেষ করে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হওয়ার পর যেসব জটিলতা তৈরি হয়, সেগুলোর মধ্যে কিছু জটিলতা এই ওষুধে দূর হয়ে যায়। 

ওষুধটির কার্যকারিতা যাচাই করেছে অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির একটি দল। গবেষণার অংশ হিসেবে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকা প্রায় দুই হাজার রোগীকে ডেক্সামেথাসন দেওয়া হয়। এর প্রভাব জানতে আরো চার হাজার রোগীর সঙ্গে তুলনা করা হয়, যাদের ওপর ওষুধটি প্রয়োগ করা হয়নি। তাতে দেখা গেছে, এই ওষুধ ভেন্টিলেটর রোগীদের মৃত্যুর ঝুঁকি ২৮ থেকে ৪০ শতাংশ কমাতে সক্ষম। অক্সিজেনের প্রয়োজন পড়ে, এমন রোগীদের মৃত্যুঝুঁকি কমায় ২০ থেকে ২৫ শতাংশ।

গবেষক মার্টিন ল্যান্ডরে জানান, ওষুধটি বিশ্বের সব দেশেই পাওয়া যায়। একজন রোগীকে সর্বোচ্চ ১০ দিন ওষুধটি সেবন করতে হয়। একজন রোগীর পেছনে খরচ হয় গড়ে পাঁচ পাউন্ড, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৫৩০ টাকা।

১৯৬০ সাল থেকে আর্থ্রাইটিস ও হাঁপানির মতো রোগের চিকিৎসায় ডেক্সামেথাসন ব্যবহৃত হয়ে আসছে। আইসিইউয়ে থাকা রোগীদের এটি দেওয়া হয় স্যালাইনের মাধ্যমে। অপেক্ষাকৃত কম গুরুতর রোগীদের দেওয়া হয় ট্যাবলেট হিসেবে।

এ বিষয়ে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের মেডিসিন বিভাগের প্রধান ও বাংলাদেশ মেডিসি সোসাইটির মহাসচিব অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবির কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমরা কয়েক দিন ধরেই কভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের ওপর ডেক্সামেথাসন প্রয়োগ করছি। এতে ফলাফলও মোটামুটি ভালোই পাচ্ছি।’

অন্যদিকে বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞ ও জাতীয় বক্ষব্যাধি ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ডা. কাজী সাইফুদ্দিন বেন নুর কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ডেক্সামেথাসন ওষুধটি এলার্জির জন্য আগে থেকেই ব্যবহার করা হয়েছে। পরবর্তী সময়ে করোনাভাইরাসের মহামারি শুরুর পর ক্ষেত্রবিশেষে আমরাও এই ভাইরাস আক্রান্ত রোগীদের জন্য ব্যবহার করে আসছি। তবে এই ওষুধ খুবই স্পর্শকাতর। যদি ডোজ ঠিক রাখা না যায়, তবে হিতে বিপরীত হতে পারে। সেই ক্ষেত্রে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে ফেলে।’

projonmonews24/maruf

পাঠকের মন্তব্য (০)

লগইন করুন