প্রকাশিত: ১০ জুন, ২০২০ ১২:২১:৫৮
ড. শাহাবুদ্দিন কয়েক মাস আগে উদ্যোগ নিয়েছিল বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক আইন বিষয়ে একটি গবেষণা গ্রন্থ বের করার। অল্প বয়েসে তার খ্যাতিতে মুগ্ধ হয়ে আমিও তাতে যোগ দিই। যোগ দেওয়ার আরও কারণ ছিল। বিশ-পঁচিশ বছর আগে আমার পিএইচডি সুপারভাইজার ছিলেন স্বনামধন্য প্রফেসর ফিলিপ স্যান্ডস। তিনি মহাজ্ঞানী ও মহাব্যস্ত। তবু আমাকে বলেছিলেন আমার পিএইচডি থিসিস অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস থেকে ছাপাতে, তিনি তাদের সুপারিশ করে দেবেন। আমি সেটা করিনি। শাহাবুদ্দিনের বইয়ের জন্য লেখা চাইতেই সেই থিসিসের কথা মনে পড়ল। খেটেখুটে সেটির একটি অংশ আপডেট করে তার কাছে পাঠাই। আংশিক রঙিন হয়ে সেটি ফেরত আসে শুদ্ধ করে দেওয়ার জন্য। এডিটরের লাল কালি। যত দেখি মুগ্ধ হই। ফিলিপকেও আমি দেখিনি এত অসাধারণ এডিটিং করতে।
সে মেধাবী জানতাম, তাই বলে এতটা।
২.
এ রকম অভিজ্ঞতা আরও হয়েছে আমাদের ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে। গত বছর প্রথমা প্রকাশনীর জন্য আমি মানবাধিকার বিষয়ে একটি বই লিখি। লিখে আমি নিজে মুগ্ধ, যাদের খসড়াটা পড়তে দিয়েছিলাম তারাও মুগ্ধ। এর কিছুদিন পর মাস্টার্স মৌলিক পরীক্ষায় সাইমী ওয়াদুদকে দেখি। সে আমাদের মুট কোর্ট টিমের লিডার, দেশে–বিদেশে নানা পুরস্কারে ভূষিত। কাজেই তাকে কঠিন কঠিন প্রশ্ন করি। সে অবলীলায় সবকিছুর উত্তর দেয়। আমার একটা প্রশ্নে অস্পষ্টতা ছিল বলে একটু বোধ হয় বিরক্তও হয়। মুগ্ধ আমি পরীক্ষার পর তাকে মানবাধিকারের খসড়াটি পড়তে দিই। এক মাস পরে তার অসাধারণ সব মন্তব্য পেয়ে পুরোপুরি হতচকিত হয়ে যাই। এত জুনিয়র একটা মেয়ে এত পরিণত মেধার, এত তার পড়াশোনা! তার মন্তব্য অনুসারে শেষ হয়ে যাওয়া বই আমি আবার লিখতে বসি কিছু অংশে।
সাইমীকে (এখন সে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের লেকচারার) আমি বলেছি সে বাংলাদেশের সেরা একজন আইনবিদ হবে, বিদেশে গেলে সেখানেও হবে সেরা। সে আমার কথা বিশ্বাস করেনি সম্ভবত। কিন্তু আমি জানি এটা হবেই।
৩.
এরও বহু বছর আগে আইন বিভাগের সুপরিচিত তানিম শাওন একবার মাস্টার্সের মনোগ্রাম লিখে আমাকে চমকে দিয়েছিল। সে আর ড. শরীফ ভূইয়া, ড. কামাল হোসেনের চেম্বারের দুই স্তম্ভ এখন। শরীফের পড়াশোনা কেমব্রিজে, সেখানে তার শিক্ষক হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ড. কামাল সেখানে গিয়ে তাকে ধরে নিয়ে আসে নিজের চেম্বারে। শরীফ আমাকে বছর কয়েক আগে কেমব্রিজ থেকে বের হওয়া ডব্লিউটিও-এর ওপর একটা বই উপহার দেয়। আমি তার শুধু ইন্ট্রোডাকশন চ্যাপটার পড়ে ক্ষান্ত দিই। জীবনে কি কোনো দিন এত উঁচুমানের কোনো কিছু আমি লিখতে পারব? মনে হয় না। বাংলাদেশের আর একজনও পারবে কি না, জানি না।
আমার দীর্ঘ শিক্ষকতা জীবনে এমন আরও ছেলেমেয়েদের দেখেছি। শাহাবুদ্দিন আর সাইমীকে আমি সরাসরি পড়াইনি। বাকিদের পড়িয়েছি। এদের মধ্যে জোবায়দা খান লাকী নামে ডাবল ফার্স্ট হওয়া একটা মেয়ে ছিল আমার প্রথম দিককার শিক্ষকতা জীবনে। তাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গ্রহণ করেনি শিক্ষক হিসেবে, মেধার স্বীকৃতি সে পেয়েছে সুদূর কানাডায়। লাকীদের দুই ব্যাচ সিনিয়র ছিল জাভেদ হাসান মাহমুদ। নব্বই দশকে ল রিভিউ নামে যে সংগঠনটি আলোড়ন তুলেছিল মানবাধিকার চর্চার জগতে, সে ছিল তার একক স্থপতি। জাতিসংঘের বড় কর্মকর্তা সে এখন। জাতিসংঘে দাপটের সঙ্গে বিভিন্ন উচ্চপদে চাকরি করছে আইজ্যাক রবিনসন আর মনজুরুল কবীর কল্লোল নামে আমার দুই প্রখর মেধার প্রাক্তন ছাত্রও।
৪.
আমার শিক্ষকতা জীবনে এমন অবিশ্বাস্য মেধার অধিকারী ছাত্রদের পাই মাঝে মাঝে। তাদের থেকে উল্টো শিখি, তাদের থেকে সমৃদ্ধ হই। কী যে পরিতৃপ্ত হই তাদের দেখে! যদি ছাত্রছাত্রীরা ছাড়াতে না পারে তাদের শিক্ষকদের, তাহলে বুঝতে হবে থেমে আছে একটা জাতি। আমার শিক্ষকতা জীবনে অন্তত অর্ধশত ছাত্রছাত্রীকে দেখেছি, যারা নিঃসন্দেহে তাদের শিক্ষকদের চেয়ে এগিয়ে।
দুঃখের বিষয় হচ্ছে এদের সিংহভাগ এখন বিদেশে। এ দেশ তাদের মেধা, রুচি আর ব্যক্তিত্বকে ধারণ করতে পারেনি। ড. শরীফের মতো ছেলেরা তবু আছে দাঁতে দাঁত চেপে। তাদের কাছ থেকে যখন এ দেশের আইন আদালতের অবস্থা শুনি, দুঃখে বুক ফেটে যায়। আর বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থা তো নিজেই জানি। কী মুখে আমি আমার ছাত্রছাত্রীদের বলি দেশে থাকো।
আকাশ ভরা সূর্য-তারা। হায় সে আকাশটা আর আমাদের না।
projonmonews24/maruf
সেভ দ্য রোডের ১৫ দিনব্যাপী সচেতনতা ক্যাম্পেইন সমাপ্ত
রায়পুরে উপজেলা প্রশাসনের আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভা অনুষ্ঠিত
আইপিএল জুয়াড়ি সন্দেহে চারজন গ্রেফতার
চোরের হামলায় স্বামী- স্ত্রী আহত, মামলা হলেও গ্রেফতার হয়নি আসামী!
রাজধানীর বনশ্রীতে আবাসিক ভবনে আগুন
খালেদা জিয়া ডাল-ভাত খাওয়াতেও ব্যর্থ হয়েছিল : শেখ হাসিনা
সাংবাদিক গোলাম মোস্তফা সিন্দাইনী আর নেই
গাজা: বিমান হামলায় বেঁচে যাওয়া বালকের প্রাণ গেল সাহায্য নিতে গিয়ে
Severity: Notice
Message: Undefined index: category
Filename: blog/details.php
Line Number: 417
Backtrace:
File: /home/projonmonews24/public_html/application/views/blog/details.php
Line: 417
Function: _error_handler
File: /home/projonmonews24/public_html/application/views/template.php
Line: 199
Function: view
File: /home/projonmonews24/public_html/application/controllers/Article.php
Line: 87
Function: view
File: /home/projonmonews24/public_html/index.php
Line: 315
Function: require_once