লঞ্চে স্বাস্থ্যবিধির বালাই নেই, পা ফেলানোই দায়!


করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় ৬৬ দিন পর স্বাস্থ্যবিধি মেনে লঞ্চ চলাচলের অনুমতি দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। সেই সঙ্গে লঞ্চের তুলনায় যাত্রীর বেশি থাকায় বেগ পেতে হচ্ছে প্রশাসনকে। সরকারি নির্দেশনা উপেক্ষা করে লঞ্চে গাদাগাদি, ঠাসাঠাসি করে যাত্রী তুলে বরিশাল নৌবন্দর ত্যাগ করছে। যার কারণে করোনা ভাইরাস সংক্রমনের শঙ্কা প্রকাশ করেছে যাত্রীসহ সংশ্লিষ্টরা। তবে এসব অভিযোগ স্বীকার করছেন না লঞ্চ মালিক কর্তৃপক্ষ। বিষয়টি নিয়ে নির্বিকার বিআইডব্লিউটিএ’সহ সরকারের বিভিন্ন সংস্থা।

যাত্রীদের অভিযোগ, নির্ধারিত সময়ের আগেই লঞ্চঘাটে যাত্রীর ভিড়ে পা ফেলার জায়গা থাকে না। এরপর যাত্রীরা কে কার আগে লঞ্চে উঠতে পারে—এর প্রতিযোগিতা চলে। মুহূর্তে লঞ্চের ডেক ও ছাদ যাত্রীতে টইটম্বুর হয়ে যায়। এতে লঞ্চে পা ফেলার জায়গা থাকে না।

বিআইডব্লিউটিএ সূত্রে জানা গেছে, বরিশাল-ঢাকা রুটে বর্তমানে চলাচল করছে ৩০টি লঞ্চ। নিয়ম অনুসারে এর অর্ধেক লঞ্চ ঢাকা সদর ঘাটে ও অর্ধেক লঞ্চ বরিশাল নৌ-বন্দর লঞ্চঘাটে থাকার কথা। কিন্তু রোটেশন পদ্ধতিতে মালিকরা দুই প্রান্তে মিলে কখনোই ৮/১০টির বেশি লঞ্চ চালান না। ফলে যাত্রীরা ন্যূনতম সেবা দূরে থাক, লঞ্চে পা ফেলার জায়গাও পান না। করোনার এই মৌসুমেও চলছে এই রোটেশন প্রথা। প্রথম দিন মাত্র ৩টি লঞ্চ বরিশাল থেকে ছেড়ে গেছে। এছাড়া অপর প্রান্ত (সদরঘাট) থেকে মাত্র ৬টি লঞ্চ ছেড়ে বরিশালে এসেছে। যাত্রী চাপ বেশী থাকায় সরকার নির্দেশিত স্বাস্থ্য বিধি উধাও হয়ে গেছে এখানে। কিন্তু দুই প্রান্তে সমান পরিমাণ লঞ্চ থাকলে বা পরিবহন করলে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করা সম্ভব হতো। তবে এক্ষেত্রে লাভ কম হতো লঞ্চ মালিকদের। তাই তারা সব লঞ্চ চলাচল না করিয়ে অল্প লঞ্চ দিয়ে যাত্রী পরিবহন করাচ্ছে। যার কারণে তারা লঞ্চে বেশী যাত্রী আনা নেয়া করাতে পারছে। আর বেশী মুনাফা পাচ্ছে। যদিও রোটেশন প্রথা নেই বলে দাবি করে লঞ্চ মালিকরা। এছাড়া বাসে যেভাবে ৬০ ভাগ বেশি ভাড়া নেয়া হচ্ছে তারা সেটা করছে না বলে দাবি করেন তারা।

সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের বরিশাল জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক কাজী এনায়েত হোসেন শিবলু বলেন, আমরা কেবল একটা দাবি জানাই, অন্য দিনগুলোয় না হলেও অন্তত করোনার এই সময়ে যেন রোটেশন ভেঙে লঞ্চ চালান মালিকরা। এতে খানিকটা হলেও দুর্ভোগ লাঘবের পাশাপাশি সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করা যাবে। 

বরিশাল সাংস্কৃতিক সংগঠন সমন্বয় পরিষদের সাবেক সভাপতি ও আইনজীবী এসএম ইকবাল বলেন, ৫ বছর আগেও এই রুটে ১০-১২টি লঞ্চ চলত। এখন চলে ২৮-৩০টি। মালিকদের যদি এতই লোকসান, তাহলে ফি বছর লঞ্চের সংখ্যা বাড়ছে কেন? এ ঘটনাই প্রমাণ করে, লোকসানের যেসব কথা বলা হচ্ছে, তা পুরোপুরি মিথ্যা। তারা অতি লাভের আশায় রোটেশন করে যাত্রী পরিবহন করছে।

শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাত বরিশাল প্রেসক্লাবের সভাপতি ও প্রবীন আইনজীবী মানবেন্দ্র বটব্যাল বলেন, লঞ্চ মালিকরা যাত্রীদের জিম্মি করে রোটেশন প্রথা চালু করেছে। আদালত এই রোটেশন প্রথাকে অবৈধ ঘোষণা করলেও তা মানছেন না লঞ্চ মালিকরা। এমনকি এই না মানার প্রবণতা দূর করতে এগিয়ে আসছে না কোন সরকারি সংস্থা। প্রতিদিন উভয় প্রান্ত থেকে ১০টি করে ২০টি লঞ্চ চলাচল করলে সরকার যে স্বাস্থ বিধির কথা বলেছে তা বাস্তবায়ন সম্ভব হতো। কিন্তু মালিকরা মুনাফার কারণে আগের নিয়ম বহাল রাখায় ঝঁকিপূর্ন হয়ে উঠবে এই রুট।

বাংলাদেশ নৌ চলাচল (যাত্রী পরিবহন) সংস্থার কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি ও সুন্দরবন নেভিগেশনের চেয়ারম্যান, বরিশাল চেম্বার অব কমার্সের প্রেসিডেন্ট সাইদুর রহমান রিন্টু বলেন, ‘ঢাকা বরিশাল নৌ রুটে ৩০টি নয় ২৩টি লঞ্চ চলাচল করে। 

বিআইডব্লিউটিএ বরিশালের নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাবের যুগ্ম পরিচালক আজমল হুদা মিঠু সরকার জানান, লঞ্চ মালিকদের স্বাস্থ্য বিধি মেনে লঞ্চ পরিচালনার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবে লঞ্চের সংখ্যা কম রয়েছে। অন্তত ৭টি করে লঞ্চ চলাচল করলে স্বাস্থ্য বিধি রক্ষা করা যাবে। এ বিষয়ে তাদের বার বার বলা হচ্ছে।

বরিশাল জেলা প্রশাসক এসএম অজিয়র রহমান বলেন, সকালেও এই বিষয়ে লঞ্চ মালিকদের সাথে মিটিং করেছি। সেখানে স্বাস্থ্য বিধি রক্ষায় কঠোর নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। করোনা সংক্রমন এড়াতে সামাজিক দুরত্ব নিশ্চিতের বিকল্প নেই। লঞ্চ মালিকরা বলেছেন তারা লঞ্চের সংখ্যা বাড়াবেন।

প্রজন্ম নিউজ/ নুর