এক অন্যরকম ঈদের সকাল

প্রকাশিত: ২৮ মে, ২০২০ ০৮:৪৫:২২

এক অন্যরকম ঈদের সকাল

ঈদের দিন সকালে ঘরের দরজা খুলে ‘ঈদ উপহার’ লেখা সাদা প্যাকেট দেখে চমকে গিয়েছিলেন গাইবান্ধা জেলার সাদুল্লাপুর উপজেলার প্রবীণ শিক্ষক আবদুর রহমান। আরব্য রজনীর কোনো এক গল্পের মতোই মনে হচ্ছিল তাঁর কাছে। সেমাই, চিনি, দুধসহ আনুষঙ্গিক খাবার উপহার হিসেবে পেয়ে যারপরনাই খুশি তিনি।

পুরো পৃথিবী লড়ছে কোভিড-১৯ মহামারির বিরুদ্ধে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ মাস দুয়েক হয়েছে। ফলে কয়েক মাস ধরে বেতন নেই। অথচ শিক্ষকতা করে জীবন কাটিয়ে দেওয়া আবদুর রহমানের জীবনযাপনের জন্য ভরসা করতে হয় ওই বেতনের ওপরই। যেহেতু বেতন নেই, তাই আর্থিক সংকটের মধ্য দিয়েই দিনানিপাত করছিলেন পরিবার নিয়ে।

সব মিলিয়ে ঈদের আনন্দ ধরা দেয়নি তাঁর বাড়িতে। ঠিক এমন সংকটের দিনে মাসখানেকের খাবারসমেত ঈদের সেমাই-চিনি-দুধ এবং সুন্দর একটা চিঠি ঈদের দিনের আনন্দ বাড়িয়ে দিয়েছে কয়েক গুণ।

শুধু আবদুর রহমানই নন বরং রংপুর, গাইবান্ধা এবং নোয়াখালীর ২৩০টি শিক্ষক পরিবারসহ প্রায় দুই হাজার মানুষকে এ উপহার দেওয়া হয়েছে। সামাজিক উদ্যোগ ‘এসো সবাই’ এবং অর্গানিক খাদ্য সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ‘আমার ফুড’–এর পক্ষ থেকে এই উপহার দেওয়া হয়।

এমন উদ্যোগ নিয়ে এসো সবাই থেকে জানানো হয়, করোনাভাইরাসের কারণে তৈরি হওয়া দুর্যোগের সময় দেশের নিম্ন আয়ের মানুষ এবং অকুতোভয় স্বাস্থ্যকর্মীদের পাশে দাঁড়ানোর লক্ষ্যে বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে তারা। তারই অংশ হিসেবে আমার ফুডের সঙ্গে যৌথভাবে দেশের কিছু জেলার দরিদ্র শিক্ষকদের উপহার দেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়।

‘এসো সবাই’–এর বরাতে জানা যায়, এখন পর্যন্ত এ উদ্যোগের আওতায় আমার ফুডের মাধ্যমে সর্বমোট তিন হাজার মানুষের অন্তত দুই সপ্তাহের খাবার এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস সরবরাহ করেছে তারা।

শিক্ষকদের ঈদ উপহার দেওয়া প্রসঙ্গে আমার ফুড–সংশ্লিষ্টরা বলেন, সমাজের সর্বোচ্চ সম্মানজনক অবস্থানে থাকা এ মানুষগুলো সবার কাছে হাত পাততে পারেন না। অথচ গ্রামের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর অধিকাংশ শিক্ষক পরিবারই শুধু বেতনের টাকার ওপর নির্ভরশীল। কোভিড-১৯ মহামারির এ সময়টায় যেহেতু অনেকে বেতন, ভাতা পাচ্ছেন না, তাই তাঁদের পড়তে হয়েছে বিপাকে। তাঁদের কথা চিন্তা করেই এমন পরিকল্পনা করা হয়, যাতে ঈদের দিন সকালবেলা ঘরের দরজা খুলেই তাঁদের জন্য পাঠানো উপহার পেয়ে যান।

উল্লেখ্য, এসো সবাই করোনাকালীন একটি সামাজিক উদ্যোগ, যার মাধ্যমে এখন পর্যন্ত সারা দেশে ২০ হাজারের বেশি মানুষকে মাসিক খাদ্য সহায়তা দেওয়া হয়েছে। করোনার সম্মুখভাগে কাজ করা চিকিৎসকদের জন্য সেফটি ইকুইপমেন্ট নিশ্চিত করা হয়েছে ১৪টি জেলায়।

এসো সবাইর পক্ষ থেকে জানানো হয়, করোনাভাইরাস মহামারির মাঝেই ঘূর্ণিঝড় আম্পানের তাণ্ডবে দেশে সৃষ্টি হয়েছে নতুন সংকট। এই অবস্থায় তাদের কার্যক্রম আরও বেগবান করতে সবার সহযোগিতা একান্ত প্রয়োজন। আমাদের একটু মায়া হাসি ফোটাতে পারে অজস্র মুখে। তাই সবাই নিজ নিজ সামর্থ্য অনুযায়ী সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়া উচিত এখন। ‘এসো সবাই’-এর তহবিলে অনুদান।

প্রজন্মনিউজ২৪/মারুফ

পাঠকের মন্তব্য (০)

লগইন করুন



আরো সংবাদ














ব্রেকিং নিউজ