করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ায় বাড়তি ওজন


করোনার সংক্রমণ রোধে চলছে লকডাউন। বেশির ভাগ মানুষ বাড়ির বাইরে বের হচ্ছেন না। অনেকে অফিসের কাজ সারছেন বাড়িতে বসে। তবে যা-ই করা হোক না কেন-বাড়িতে থাকলে খাওয়ার পরিমাণ বেড়ে যায়। এছাড়া করোনার এই পরিস্থিতিতে মানসিক চাপ বাড়ছে। মানসিক চাপের জন্য অনেকের মধ্যে খাওয়ার প্রবণতা বাড়ে। ফলে মেদও বাড়তে থাকে। এর সঙ্গে বাড়ে কোভিড-১৯-এর সংক্রমণের ঝুঁকিও।

বিজ্ঞানীদের মতে, ওজন বৃদ্ধি এবং এর সঙ্গে ডায়বেটিস, হাই প্রেশার বা হাই কোলেস্টেরল এর কোনটি থাকলে শরীরে সংক্রমণের প্রবণতা বেড়ে যায়। শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা দুর্বল হয়ে পড়ে। এর ফলে যে কোন ধরনের সংক্রমণের আশঙ্কা ও জটিলতা কয়েকগুণ বেড়ে যায়। এছাড়া যাদের অতিরিক্ত ওজন, তাদের মধ্যে অধিকাংশের মেটাবলিক সিনড্রোম থাকে বলে কোভিড-১৯ সংক্রমণের ঝুঁকি এবং জটিলতার আশঙ্কা থাকে অনেক বেশি। বেসাল মেটাবলিক রেট বা বিএমআই ৪০-এর বেশি হলে কোভিড-১৯ এর সংক্রমণে মৃত্যুর হার স্বাভাবিক ওজনের মানুষের তুলনায় প্রায় ৩ গুণ (২.৯ গুণ) বেশি। কেননা-

১. প্রয়োজনের অতিরক্ত মেদ জমলে রক্তচাপ বাড়ে। রক্তে চর্বি ভেসে বেড়ায়।

২. বাড়তি ওজন ফুসফুসের উপরে চাপ সৃষ্টি করে। শ্বাস নেওয়ার সময় ফুসফুস সম্পূর্ণভাবে প্রসারিত হতে পারে না। ফলস্বরূপ শরীরে সব সময়ই অক্সিজেনের সরবরাহ কম থাকে। ফুসফুস দুর্বল হয়ে পড়ে। একই সঙ্গে শ্বাসনালী কিছুটা সঙ্কুচিত হয়ে থাকে। কোভিড-১৯ এ সহজেই আক্রান্ত হয় শরীর।

৩. ওজন বেশি হলে শরীরের হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এর ফলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যেতে পারে। ফলে সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ে।

৪. স্বাভাবিকের থেকে বেশি ওজন হলে রক্তে ভেসে বেড়ানো চর্বি ধমনিতে আটকে যেতে পারে। তাই কোনভাবে কোভিড-১৯ আক্রান্ত হলে তাদের দ্রুত অবস্থার অবনতি হবার ঝুঁকি থাকে।

৫. যে কোন সংক্রমণ হলে রক্তের শ্বেত রক্তকণিকা সংক্রমণমুক্ত হতে সাইটোকাইন নিঃসরণ করে। ওজন বেশি হলে চর্বিতে বাধা পেয়ে এই নিঃসরণ শরীরের মধ্যে সাইটোকাইন ঝড় সৃষ্টি করে। এতে রোগীর অবস্থা দ্রুত গুরুতর হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে।

বাড়তি ওজনের মানুষ সংক্রমণের ঝুঁকি এড়াবেন কী উপায়ে? বাড়তি ওজন কোভিড-১৯-এর এক অন্যতম রিস্ক ফ্যাক্টর। তাই করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে ওজন ঠিক রাখার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা। এছাড়া যা করা প্রয়োজন-

১. কঠোরভাবে লকডাউন মেনে চলতে হবে। বাইরে গেলে অবশ্যই মাস্ক পরুন। বার বার সাবান বা হ্যান্ডওয়াশ দিয়ে হাত ধোয়ার অভ্যাস করুন।

২.দিনে দু’বার ব্যায়াম করে ক্যালোরি ঝরিয়ে ফেলার চেষ্টা করুন। বিশেষ করে কোমর ও পেটের মেদ কমানোর ব্যায়াম করতে হবে।

৩. ফুসফুসের কার্যক্ষমতা বাড়াতে নিয়মিত শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম করতে হবে।

৪. লো ক্যালোরি ডায়েট করুন। লেবু জাতীয় ফল, শাক-সবজি বেশি পরিমাণে খান। শর্করা ও ভাজা খাবার এড়িয়ে চলুন।

৫. থাইরয়েডের সমস্যা, উচ্চ রক্তচাপ বা ডায়বেটিস থাকলে অবশ্যই ওষুধের সাহায্যে নিয়ন্ত্রণে রাখুন।

৬. ঠান্ডা লাগাবেন না। খুব বেশি ঠাণ্ডা ঘরে থাকবেন না। দরজা-জানলা খুলে ঘরে পর্যাপ্ত আলো-বাতাসের চলাচল নিশ্চিত করুন।

৭. ভিটামিন সি ও ভিটামিন ডি-যুক্ত খাবার এবং সাপ্লিমেন্ট খেতে পারেন। আনন্দবাজার

প্রজন্ম নিউজ/ নুর