ভবিষ্যৎ বিশ্বায়নের রূপরেখা ঠিক করতে হবে

প্রকাশিত: ০৬ মে, ২০২০ ০২:২৯:০৫

ভবিষ্যৎ বিশ্বায়নের রূপরেখা ঠিক করতে হবে

 কোভিড–১৯ বিশ্বায়নের ধারাকে এগিয়ে নেওয়ার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরছেউইনস্টন চার্চিল একবার বলেছিলেন, ‘কোনো ঘটনার ওপর একসঙ্গে বহু লোক হামলে পড়লে বুঝতে হবে, খুব শিগগির তারা এমনভাবে সেখান থেকে আবার নিজেদের গুটিয়ে নেবে যেন কিছুই ঘটেনি।’ কোভিড-১৯–এর ক্ষেত্রে চার্চিলের এই বাণী মার খাচ্ছে। দেখা যাচ্ছে, এই মহামারির কারণে গোটা বিশ্ব এমন এক পরিস্থিতির মুখে পড়েছে, যাকে এড়িয়ে যাওয়া একেবারে অসম্ভব হয়ে পড়েছে। ২০০৮ সালের বৈশ্বিক মহামন্দা এবং ২০১৫ সালের ইউরোপে ধেয়ে আসা শরণার্থীর স্রোতের মতো এই মহামারি বিশ্বব্যবস্থার নাজুকতা ও হুমকি সামনে তুলে ধরেছে।

এই অবস্থায় রাষ্ট্রের প্রথম দায় হলো অস্তিত্বগত ঝুঁকি থেকে নিজ নাগরিকদের সুরক্ষা দেওয়া। তবে যেহেতু প্রতিটি রাষ্ট্রই এই বিধ্বংসী মহামারিকে মোকাবিলা করার সামর্থ্য রাখে না, সেহেতু বিশ্বায়নের ধারা এগিয়ে নেওয়ার প্রয়োজনীয়তাই ঘুরেফিরে আসছে। যুক্তরাষ্ট্রে টুইন টাওয়ারে হামলার পর যেভাবে নিরাপত্তা নিয়ে ভাবতে মানুষ বাধ্য হয়েছিল, ঠিক তেমনই কোভিড-১৯ হানা দেওয়ার পর এখন আমরা পারস্পরিক নির্ভরতার ব্যবস্থাকে নতুন করে কীভাবে সাজানো যায়, তা নিয়ে এখন ভাবতে বাধ্য হচ্ছি।

জাতীয়তাবাদ নাকি আন্তর্জাতিক সমন্বয় দিয়ে এই সংকট থেকে বের হওয়া যাবে, এমন প্রশ্ন এখন বড় হয়ে দেখা দিয়েছে। কিন্তু এটি একটি ভুল প্রশ্ন। পারস্পরিক নির্ভরশীলতা এবং আলাদা আলাদা রাষ্ট্রের নিজ নিজ কার্যক্রম কোনো রকম সংঘাতে না জড়িয়ে একসঙ্গে চলতে পারে কি না, সেটিই এখানে আসল বিষয়। বিশ্বের রাজনৈতিক পরিবেশ আজকে যেখানে এসে দাঁড়িয়েছে, সেখানে সীমান্ত আটকে রেখে বিচ্ছিন্ন হওয়ার সুযোগ প্রায় নেই। কিন্তু যাঁরা এটি করছেন, তাঁরা রোগ মোকাবিলায় যতটা না করছেন, তার চেয়ে বেশি করছেন রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিল করার জন্য। কোভিড-১৯ এমন এক সময় হানা দিয়েছে, যখন বিশ্ব ২০০৮ সালের মহামন্দার রেশ কাটিয়ে উঠতেও পারেনি। এই অবস্থায় সংরক্ষণবাদ জোরালো হলে বিশেষত বিশ্ব অর্থনীতি শুয়ে পড়বে। আগের চেয়ে মানুষের চলাচল সহজসাধ্য হওয়ায় লাখ লাখ মানুষের সামনে সুযোগ তৈরি হয়েছে।

কিন্তু এটি সরকারি ও বেসরকারি চাকরির ওপর চাপ সৃষ্টি করেছে। এক দেশ থেকে অভিবাসী হয়ে অন্য দেশে আসা ব্যক্তিদের কর্মসংস্থানের জোগাড় করতে গিয়ে আশ্রয় দেওয়া দেশগুলোকে চাপে পড়তে হচ্ছে। এটিকে আগে থেকেই জনতুষ্টিবাদীরা কাজে লাগাচ্ছিলেন। সীমান্ত আটকে দিয়ে সব ধরনের শরণার্থী ঢোকা বন্ধ করে দিয়েছিলেন। এখন কোভিড-১৯–এর কারণ দেখিয়ে সীমান্ত বন্ধ করে দিচ্ছেন। এক দেশ অন্য দেশের সঙ্গে পাল্লা দিতে গিয়ে বাণিজ্য ব্যবস্থার আদলই বদলে ফেলছেন। যেমন যুক্তরাষ্ট্র চীনের বিরুদ্ধে অনৈতিকভাবে বিশ্ববাজার নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার চেষ্টা করার অভিযোগ এনেছে। ট্রাম্প তো রীতিমতো চীনের বিরুদ্ধে বাণিজ্যযুদ্ধ ঘোষণা করেছেন।

এখন করোনাভাইরাসের কারণে অবস্থা এমনই দাঁড়িয়েছে যে বিশ্বায়ন ব্যবস্থাকেই পাল্টে ফেলার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। প্রয়োজনে সার্বভৌমত্বের সংজ্ঞাও বদলানোর কথা ভাবা যেতে পারে। যেমন ইউরোপের দেশগুলোর পারস্পরিক সহযোগিতা ও নির্ভরশীলতা নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনে ‘ইউরোপীয় সার্বভৌমত্ব’র কথা ভাবা যেতে পারে। অর্থাৎ গোটা ইউরোপকেই এমন একটি ব্যবস্থার মধ্যে আনা যেতে পারে, যেখানে আলাদা আলাদা রাষ্ট্র থাকলেও তাদের নিজেদের মধ্যে চলাচলে আরও সহজ ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।

কোভিড-১৯ এমন একটি দীর্ঘমেয়াদি সংকটের ইঙ্গিত দিচ্ছে, যেখানে কোনো একক দেশের পক্ষে একঘরে হয়ে সবকিছু সামাল দেওয়া সম্ভব হবে না। তাকে ভবিষ্যতে অন্যের ওপর আরও বেশি নির্ভর করতে হবে। সেই পারস্পরিক নির্ভরশীলতার বিশ্বায়ন ঠিক কোন আদলে হলে ভালো হয়, তা নিয়েই এখন সবাইকে ভাবতে হবে।

ইংরেজি থেকে অনূদিত। স্বত্ব: প্রজেক্ট সিন্ডিকেট
মার্ক লিওনার্ডইউরোপিয়ান কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশন্সের পরিচালক

projonmonews24/maruf

পাঠকের মন্তব্য (০)

লগইন করুন



আরো সংবাদ














ব্রেকিং নিউজ