করোনা থেকে আপনি পুরো জাতিকে মুক্তি দিন”


আল্লাহর পক্ষ থেকে দুনিয়াতে কখনো কখনো মহামারি আসে মানুষকে পরীক্ষার জন্য। আবার কখনো কখনো অবাধ্য মানুষকে শাস্তি দিতে। সে মহামারির কবলে পড়ে জীবন ও সহায়-সম্পদ হারান অপরাধী কিংবা নিরপরাধ সব মানুষ। কুরআনুল কারিমে এমন আজাবকে (মহামারি) ভয় করার কথা বলা হয়েছে-

‘তোমরা এমন শাস্তি থেকে দূরে থাক, যা বিশেষভাবে তোমাদের মধ্যে যারা জালিম, (শুধু) তাদেরকেই আক্রমণ করবে না। আর জেনে রেখ, নিশ্চয়ই আল্লাহ শাস্তিদানে খুবই কঠোর।’ (সুরা আনফাল : আয়াত ২৫)

আল্লাহর পক্ষ থেকে যখন কোনো অঞ্চলে আজাব বা গজব আসে তখন তা ওই অঞ্চলে বসবাসকারী ঈমানদার কিংবা বেঈমান সবাইকে আক্রমণ করে। প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাদিসে তা সুস্পষ্ট। হাদিসে এসেছে-

হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, ‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যখন আল্লাহ্‌ কোনো সম্প্রদায়ের উপর আজাব পাঠান তখন সেখানে বসবাসরত সবার উপরই সেই আজাব পতিত হয়। অবশ্য পরে প্রত্যেককে তার আমল অনুযায়ী উঠানো হবে।’ (বুখারি, মুসলিম, মুসনাদে আহমদ)

উল্লেখিত হাদিসটি প্রমাণ করে যে, যখন আল্লাহ তাআলা কোনো সম্প্রদায়ের গোনাহের কারণে তাদের উপর কোনো আজাব দেন তখন তা ভালো-মন্দ সবার উপরই নেমে আসে। মহামারি আক্রান্ত অঞ্চলে যদি কোনো নিরপরাধ ভালো মানুষও থাকে সেও ওই মহামারিতে আক্রান্ত হয়।

হজরত যায়নাব বিনতে জাহাশ রাদিয়াল্লাহু আনহা বিশ্বনবিকে প্রশ্ন করেন, আমাদের মাঝে সৎ লোক থাকা অবস্থায়ও কি আমরা ধ্বংস হয়ে যাব? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার উত্তরে বলেন, ‘হ্যাঁ’, যখন নোংরামির মাত্রা বেড়ে যাবে।

সুতরাং বোঝা যাচ্ছে যে, যখন গর্হিত ও গোনাহের কাজ প্রকাশ পাবে তখন সবার ধ্বংস অনিবার্য হয়ে পড়বে। তবে সৎ ও মন্দ লোকের মৃত্যুর ব্যাপারে অংশীদারিত্ব, নেকি ও শাস্তির ব্যাপারে অংশীদারিত্বকে অপরিহার্য করবে না। বরং তাদের প্রত্যেককে তাদের নিজ নিজ আমলের নিয়ত অনুযায়ী প্রতিদান দেয়া হবে। এ ক্ষেত্রে সৎ লোকের উপর আজাবের উদ্দেশ্য হবে তাদেরকে পবিত্র করা আর মন্দ লোকের জন্য শাস্তি দেয়া।’ (ফাতহুল বারী)

সুতরাং চলমান মহামারি করোনাভাইরাসে মহান আল্লাহর কাছে প্রার্থনা- হে আল্লাহ! আপনি মহামারি করোনাভাইরাস থেকে মুসলিম উম্মাহকে মুক্তি দিন। মহামারি করোনাভাইরাসকে আপনি মানুষের ওপর থেকে তুলে নিন।

মহামারি কারোনায় এখন পর্যন্ত অনেক মানুষের  প্রাণহানি ঘটেছে। এদের মধ্যে এমন অনেক মানুষ রয়েছে যারা আল্লাহর একান্ত প্রিয় বান্দা। তারাও রক্ষা পায়নি এ মহামারি থেকে। হাদিসের ঘোষণা অনুযায়ী তারা একদিকে পাবে শাহাদাতের মর্যাদা আবার অন্যদিকে পাবে তাদের আমল অনুযায়ী প্রতিদান।

সুতরাং মহামারি করোনায় কে মারা গেল আর বেঁচে থাকলো। কে ভালো লোক আর কে মন্দ লোক এসব বাচাই করার সুযোগ নেই। কোনো জাতির ওপর আল্লাহর আজাব নেমে এলে- কে ভালো, কে মন্দ তা পার্থক্য করা হয় না। এমনকি নেককার মানুষও বিপদ, আজাব ও মহামারি দ্বারা আক্রান্ত হতে পারে।

মুমিন ও কাফেরদে বিপদে রয়েছে পার্থক্য। কাফের অবাধ্য-অবিশ্বাসীদের জন্য বিপদ-আপদ আসে আজাবস্বরূপ। কিন্তু ঈমানদারের জন্য বিপদ-আপদ-মহামারি রহমতস্বরূপ। হাদিসে এসেছে-

হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘মুসলিম ব্যক্তির ওপর যেসব বিপদ-আপদ আসে। আল্লাহ তাআলা এর দ্বারা তার পাপ দূর করে দেন। এমনকি যদি (সামান্য) কাঁটাও তার শরীরে ফোটে, এর দ্বারাও।’ (বুখারি)

এমন ধারণা করা ঠিক নয়, কেননা মহামারিতে কোনো নেককার ব্যক্তি আক্রান্ত হবে না এ মর্মে কোনো দিকনির্দেশনা কুরআন এবং হাদিসে আসেনি। বরং প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামই সবচেয়ে বেশি রোগ যন্ত্রণা ভোগ করেছেন। হাদিসে এসেছে-

হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন ‘আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর চেয়ে বেশি রোগ যন্ত্রণা ভোগকারী অন্য কাউকেও দেখিনি।’ (মুসলিম, মুসনাদে আহমাদ)

হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা একবার রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে প্লেগ রোগ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেন। জবাবে তিনি বলেন, এটি হচ্ছে এক ধরনের আজাব। আল্লাহ যার ওপর তা পাঠাতে ইচ্ছা করেন, পাঠিয়ে থাকেন। কিন্তু আল্লাহ এটিকে মুমিনদের জন্য রহমত বানিয়ে দেন। অতএব প্লেগ রোগে কোনো বান্দা যদি ধৈর্য ধরে, এই বিশ্বাস নিয়ে নিজ শহরে অবস্থান করতে থাকে যে আল্লাহ তার জন্য যা নির্দিষ্ট করে রেখেছেন তা ছাড়া আর কোনো বিপদ তার ওপর আসবে না, তাহলে সেই বান্দার জন্য থাকবে শহিদের সমান সওয়াব।’ (বুখারি)

প্রজন্ম নিউজ/নুর