নারায়ণগঞ্জে মরদেহ পড়েছিলো ৯ ঘণ্টা, এগিয়ে আসেনি কেউ


নারায়ণগঞ্জের জনপ্রিয় গিটারিস্ট হিরু (৩০) মারা গেছেন। সোমবার (৬ এপ্রিল) রাত দেড়টায় তিনি দেওভোগ চেয়ারম্যান বাড়ি (কৃষ্ণচূড়া মোড়) এলাকায় মারা যান। এদিকে তার মৃত্যুর পর কেউ লাশ ধরেনি এমনকি দাফনের জন্যও কেউ আসেনি বলে স্বজনরা জানায়। মৃত্যুর পর প্রায় ৯ ঘণ্টা তার লাশ বাড়ির সামনে পড়েছিলো।

তাদের অভিযোগ, গত ২৬ মার্চ থেকে জ্বর, ঠান্ডা, গলা ব্যাথা ও শ্বাসকষ্ট জনিত সমস্যায় ভুগছিলেন তিনি। এর মধ্যে নারায়ণগঞ্জের মেডিনোভা, ঢাকা মেডিকেলসহ বেশ কজন চিকিৎসকের কাছে চিকিৎসা নিলেও তারা কেউ করোনা ভাইরাসের পরীক্ষার পরামর্শ দেয়নি। নিজে থেকে আইইডিসিআর এর হটলাইনে প্রায় দুদিন চেষ্টা করেও করোনা টেস্টের ব্যবস্থা করতে পারেনি তার পরিবার।
  
সোমবার রাতে হিরুর অবস্থা সঙ্কটাপন্ন হলে পরিবারের লোকজন তাকে অ্যাম্বুলেন্সে করে ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালে নিয়ে যেতে চায়। তবে, তাতে বাধা দেয় এলাকাবাসী। প্রশাসনের অনুমতি ছাড়া এলাকা থেকে এ্যাম্বুলেন্স বের হতে দেয়া যাবে না অজুহাতে প্রায় ১ ঘণ্টা অ্যাম্বুলেন্স আটকে রাখে তারা।

এদিকে রোগীর জ্বর-সর্দি এবং শ্বসকষ্ট রয়েছে অর্থাৎ তার করোনার উপসর্গ! এমনটা জানতে পেরে অ্যাম্বুলেন্স চালকও গাড়ি নিয়ে পালিয়ে যায়।
 
এদিকে এ খবর পেয়ে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র-১ আফসানা আফরোজ বিভা ঘটনাস্থলে ছুটে যান তার টিমসহ স্থানীয় থানা পুলিশ নিয়ে। তিনি পরিবারের সদস্যদের সাথে কথা বলেন এবং সিটি করপোরেশনের ব্যবস্থাপনায় লাশ দাফনের উদ্যোগ গ্রহণ করেন। সিটি করপোরেশনের ব্যবস্থাপনায় লাশ দাফনের ব্যবস্থা করেন। 

প্যানেল মেয়র-১ আফসানা আফরোজ বিভা জানান, নিহতের স্বজনদের হোম কোয়ারেন্টাইন থাকতে বলা হযেছে। মৃতের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করা হবে। 

ফতুল্লা মডেল থানার পুলিশ পরিদর্শক (অপারেশন) তরিকুল ইসলাম বলেন, আমি নিজেই ঘটনাস্থলে গিয়েছিলাম। একজন প্যানেল মেয়রও ছিলেন। আমি তার মায়ের সাথে কথা বলেছি। 

তিনি জানিয়েছেন, এ্যাম্বুলেন্সে উঠানোর জন্য হিরুকে উঠানো হচ্ছিলো। এরমধ্যে চালক ও অ্যাম্বুলেন্সে থাকা অন্যরা বলছিলেন সে মারা গেছে তাকে আর ঢাকা নিয়ে কী হবে। 

এরপরই লাশ বাড়ির কাছে ফেলে রেখেছিল। করোনা আতঙ্কে কেউ আর কাছে আসেনি। তার লাশ দাফনের ব্যবস্থা করেছে সিটি করপোরেশন। সেখানে পুলিশের টিম রয়েছে। 

ওদিকে বেস গিটারিস্ট হিরো লিসানের আকস্মিক মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে তার সহকর্মীদের মাঝে। শোকে ম্হ্যুমান পরিবারের সদস্যা। নিহত হিরোর স্ত্রী ও এক বছরের এক সন্তান রয়েছে।

হিরোর লাশ যখন নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল তখন স্বজনদের কেউ ছিল না পাশে। বিদায় বেলায় শেষবারের মতো তার মুখটাও দেখতে পারেনি তারা।

প্রজন্মনিউজ২৪/নুর