করোনার নিঠুর প্রতিশোধে কমেছে বায়ুদূষণ

প্রকাশিত: ৩১ মার্চ, ২০২০ ০৭:৫৬:১৬

করোনার নিঠুর প্রতিশোধে কমেছে বায়ুদূষণ

ভাইরাস আতঙ্কে বিশ্বব্যাপী মানুষ ঢুকেছে ঘরের কোণে। করোনা প্রতিরোধে বন্ধ রয়েছে সব ধরনের যানবাহন। বন্ধ রয়েছে সব ধরনের অফিস-আদালত। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া সব ধরনের দোকানপাটও বন্ধ। ফলে কমেছে কোলাহল। ফলে নিজের মতো করে যেন বাঁচার সুযোগ পেয়েছে রাজধানী ঢাকা।

ঢাকা শহরে ট্রাফিক জ্যাম, কালো ধোঁয়া আর গাড়ির হর্নের শব্দ, মানুষের কোলাহল সবমিলিয়ে ঢাকার পরিবেশ যেন হয়ে ওঠে বিষময়। ধুলা আর গাড়ির কালো ধোঁয়ায় ঢাকার আকাশ যেন কালো রং ধারণ করে। প্রায় এক সপ্তাহ ধরে সেই পরিবেশ আর নেই। আস্তে আস্তে যেন প্রকৃতি ফিরে পাচ্ছে তার সেই চিরচেনা রূপ। বসন্তের সাজে গাছে গাছে নতুন পাতা, ফুল শোভা পাচ্ছে। সেই সাথে কোকিলের কুহুতান আর পাখির কিচিরমিচির শব্দে রাজধানী ঢাকা যেন অন্য রূপে ফিরে এসেছে।

সোনারগাঁও হোটেলের পাশে হাতিরঝিলের যে গেট সেখানে আগে দেখা যেত কাগজসহ নানা জিনিসপত্র আটকে গিয়ে ময়লা পানি ঝিলের এ অংশে পড়তো। ফলে এই অংশের পানি প্রচণ্ড ময়লা ও দুর্গন্ধ থাকতো। তবে আজ এর ভিন্ন চিত্র দেখা গেছে। পানি নীল রঙ ধারণ করেছে এবং দুর্গন্ধও তেমনটা নেই।

কারওয়ান বাজারের কাঁচা বাজারে কাজ শেষ করে বাসায় ফিরছিলেন বৃদ্ধা মহিলা। তিনি বলেন, ‘আগের চেয়ে অনেক পরিষ্কার অইছে পানি। অহন দুর্গন্ধ নাই। আগের থেকে অনেক ভালো হয়ে গেছে।’

করোনা ভাইরাসের প্রকোপ ও সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ছুটির পর লাখো মানুষ ঢাকা ছেড়ে গ্রামে যাওয়ার ফলে অত্যন্ত বিষাক্ত পরিবেশও কিছুটা ভালোর দিকে। রাজধানীর জলাশয়ের ওপরও চাপ কমায় পরিচ্ছন্ন হতে শুরু করেছে অন্যান্য জলাশয়গুলোর পানি, সেই সঙ্গে কমছে দুর্গন্ধও।

এদিকে আজ সোমবার (৩০ মার্চ) বিকেল সাড়ে চারটায় যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বিশ্বের বায়ুমান যাচাই বিষয়ক প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ‘এয়ার ভিজ্যুয়াল’-এর বায়ুমান সূচক (একিউআই) ইনডেক্সে সূচকে মান ছিল ৬৫। যদিও পরিবেশ অধিদফতরের মানমাত্রায় ৫০ একিউআইকে স্বাভাবিক বায়ু বলা হয়।

রাজধানীসহ সারদেশে এমন নীরব নিঝুম পরিবেশ কল্পনা করাও দায়। কিন্তু অবাস্তব হলেও সত্য যে সব কিছু এখন প্রকৃতির নিয়ন্ত্রণে। মার্চের শুরুতেও ঢাকার বায়ু দূষণ নিয়ে চিন্তা ছিল। বলা যায় করোনার নিঠুর প্রতিশোধে কমছে বাতাসে দূষণ।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক শরীফ জামিল বলেন, মানুষের অবিবেচক আচরণে প্রকৃতি কতটা বিপর্যস্ত তা এই অল্প কয়েকদিনেই বোঝা গেল। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত বিপর্যয় মোকাবিলায় এই শিক্ষাকে কাজে লাগানোর জন্য করোনা দূর্যোগ মানব জাতিকে একটা সুযোগ করে দিয়েছে।

এ প্রসঙ্গে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের (পবা) সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী আবদুস সোবাহান বলেন, কক্সবাজারে পর্যটকদের ভীড়, ট্রলার, স্টিমারের চলাচলে শুশুক সাগর তীরে আসতো না। এখন সাগর শান্ত। সমুদ্র পাড়ের পরিবেশ ও কোলাহল মুক্ত। এটা আমাদের জন্য ভালো।

তিনি বলেন, বাতাসের গুনগত মান আরো ভালো হবে। উন্নয়ন প্রকল্পগুলো যেমন মেট্রোরেল কিংবা কাটা খোড়া সড়ক প্রকল্পগুলো এখনো চলমান কিংবা স্থিতি অবস্থায় আছে। এসব যায়গা থেকে ধুলা উড়ে বাতাসে মেশায় এখনো সন্তোষজনক অবস্থায় আসছে না বায়ূর মান।

পবার এই সাধারণ সম্পাদক বলেন, লকডাউন বাদে অন্য সময়েও সমন্বিত পরিকল্পনা গ্রহণের মাধ্যমে বায়ূর মান ভালো রাখা যায়। সেক্ষেত্রে পরিকল্পনা মাফিক আমাদের কাজ করতে হবে। পরিবেশের সুরুক্ষা হয় এমনভাবে উন্নয়ন কাজগুলো করতে হবে। ঢাকার চারপাশের ইটের ভাটাগুলো সরাতে হবে। ব্যক্তিগত যানবাহনের পরিমাণ কমিয়ে গণপরিবহনের সংখ্যা বাড়াতে হবে।

প্রজন্মনিউজ২৪/নুর

পাঠকের মন্তব্য (০)

লগইন করুন



আরো সংবাদ














ব্রেকিং নিউজ