এসএসসি পরিক্ষায় নিয়মিত ছাত্রছাত্রীদের দেয়া হয়েছে পুরোনো সিলেবাসের প্রশ্ন


পরীক্ষার হলে নিয়মিত শিক্ষার্থীদের মধ্যে সরবরাহ করছেন অনিয়মিত ছাত্রছাত্রীদের পুরোনো সিলেবাসের প্রশ্ন। পরীক্ষার সময়ও ইচ্ছানুযায়ী বাড়াচ্ছেন বা কমাচ্ছেন শিক্ষকরা।

এ ছাড়া পরীক্ষার হলে ইচ্ছাকৃতভাবে খাতা বা প্রশ্ন বিতরণে দেরি এবং দায়িত্ব পালন বা পরিদর্শনের সময় উচ্চ স্বরে নিজেদের মধ্যে গল্প করা ছাড়াও কেন্দ্রে মোবাইল ফোন নিয়ে আসার মতো গর্হিত অপরাধ করছেন শিক্ষকরা। কোথাও কোথাও পরীক্ষার হলে নৈর্ব্যক্তিক অংশের প্রশ্নের উত্তর বলে দেওয়ার মতো ন্যক্কারজনক ঘটনাও ঘটিয়েছেন তারা।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন 'বাংলাদেশ পরীক্ষা উন্নয়ন ইউনিটের' (বেডু) ঊর্ধ্বতন বিশেষজ্ঞ রবিউল কবির চৌধুরী বলেন, একটি সফল পরীক্ষা সম্পন্ন করার দুটি অংশ রয়েছে। প্রথমটি প্রশাসনিক, দ্বিতীয়টি গুণগত মান। ভুল প্রশ্ন সরবরাহের ঘটনা পরীক্ষার ব্যবস্থাপনার সঙ্গে যুক্ত। এটি সংশ্নিষ্ট শিক্ষকদের গুরুতর অবহেলাজনিত ঘটনা। এটির সঙ্গে মূল্যবোধও জড়িত। তিনি বলেন, বেডু থেকে তারা শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দিয়ে এসব সমস্যা সমাধানের আপ্রাণ চেষ্টা করছেন। ট্রেনিং ম্যানুয়ালেও সবকিছু দেওয়া আছে। প্রশিক্ষণে যা শেখানো হচ্ছে, তার বাস্তব প্রতিফলন কর্তব্যকর্মে যদি না ঘটে, তার দায় প্রশিক্ষণার্থীর; প্রশিক্ষণের নয়।

এসএসসির প্রথম দিন গত ৩ ফেব্রুয়ারি সারাদেশে অনুষ্ঠিত হয় বাংলা প্রথম পত্রের পরীক্ষা। সেদিন দেশের বিভিন্ন স্থানে পরীক্ষার হলে শিক্ষকদের অবহেলায় ২০১৮ সালের পুরোনো সিলেবাসের প্রশ্নপত্র বিতরণের খবর পাওয়া যায়। কয়েকটি কেন্দ্রে ভুল ধরা পড়ার পর অবশ্য প্রশ্ন বদলে নতুন প্রশ্ন দেওয়া হয়। বরিশাল নগরীর হালিমা খাতুন বালিকা বিদ্যালয় কেন্দ্রের দুটি কক্ষে অর্ধশতাধিক পরীক্ষার্থীর পরীক্ষা ভুল প্রশ্নে নেওয়া হয়।

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, যদিও নিয়মিত ও অনিয়মিত পরীক্ষার্থীদের প্রশ্ন বিতরণ করার আগে তা আলাদা করা শিক্ষকদের দায়িত্ব, পরীক্ষার্থীরাও প্রশ্ন পাওয়ার পর একনজর তা দেখে নিলে এই ভুল ধরা পড়ে। কিন্তু এটি পরীক্ষার হলে দায়িত্বরত শিক্ষকেরই দায়। তাদেরই ভালোভাবে দেখে প্রশ্নপত্র বিতরণ করার কথা। তিনি বলেন, এমন ভুল কেউ অমনোযোগী হয়ে করেছে, নাকি তা নিছক ভুলেই হয়েছে- তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। কোনো শিক্ষকের ভুল শনাক্ত হলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে ভুল প্রশ্নে পরীক্ষা দেওয়া কোনো পরীক্ষার্থীরই ক্ষতি হবে না। সেসব খাতা বিশেষভাবে মূল্যায়ন করা হবে।

এসএসসি পরীক্ষায় গাইড বই থেকে হুবহু পরীক্ষার প্রশ্ন করার বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, এবার এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার জন্য প্রায় ছয় হাজার সেট প্রশ্নপত্র প্রণয়ন করা হয়েছে। তার মধ্য থেকে নির্বাচন করে দুই হাজার ৮৯০ সেট প্রশ্নপত্র ছাপানো হয়েছে। এ জন্য অনেক মডারেটর কাজ করেছেন। কে ভুল করেছে, তাৎক্ষণিক সে বিষয়টি শনাক্ত করা কঠিন হয়ে পড়ে। তিনি বলেন, গাইড বইয়ের অনেক প্রশ্ন কমন পড়তে পারে, তবে তা হুবহু মিলতে পারে না। তাই বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে। অপরাধ শনাক্ত করার পর সংশ্নিষ্ট শিক্ষকের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।  
প্রজন্মনিউহ২৪/জহুরুল হক