ইন্দুরকানীতে জীবন যুদ্ধে জয়ী ৫ জয়ীতা নারীর গল্প

প্রকাশিত: ০৯ জানুয়ারী, ২০২০ ০৬:৫৫:০৯

ইন্দুরকানীতে জীবন যুদ্ধে জয়ী ৫ জয়ীতা নারীর গল্প

ইন্দুরকানী (পিরোজপুর) প্রতিনিধিঃ মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের ইদ্যোগে জয়িতা অন্বেষনে বাংলাদেশ শীর্ষক কার্যক্রম বাস্তবায়নের লক্ষে উপজেলার সকল ইউনিয়ন হইতে পাঁচটি ক্যাটাগরীতে ৫ জন নারিকে নির্বাচিত করা হয়েছে।

আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষ ও বেগম রোকেয়া দিবস উদযাপন উপলক্ষে উপজেলা পর্যায়ে  ইন্দুরকানীতে ৫জন নারীকে নিজ নিজ কর্ম ক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের জন্য জয়িতা নির্বাচিত করা হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার হুসাইন মুহাম্মাদ আল মুজাহিদ জয়ীতা নির্বাচন কমিটির সভাপতি হিসেবে দায়ীত্ব পালন করেন। উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা নুরে জান্নাত ফেরদৌসির সঞ্চলনায় জয়িতা নির্বাচন অনুষ্ঠানে   প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা চেয়ারম্যান এ্যাডঃ এম মতিউর রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান দিলরুবা মিলন, রুহুল আমিন বাঘা সহ উপজেলার বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা ও সুশিল সমাজের নেত্রিবৃন্দ গন।

ইন্দুরকানী উপজেলার পত্তাশী ইউনিয়নের ইন্দুরকানী গ্রামের রোজিনা বেগম, স্বামী মুনতাজ আলী অর্থনৈতিক  ভাবে সাফল্য অর্জনকারী নারী হিসেবে জয়ীতা পুরস্কার পেয়েছেন তিনি। তিনি অর্থনৈতিক ভাবে সাফল্য অর্জনকারী একজন নারী। তিনি সন্তানদের নিয়ে আর্থিক ভাবে খুব খারাপ অবস্থায় দিন অতিবাহিত করেন। হঠাৎ শুনতে পেলেন উপজেলা মহিলা বিষয়ক দপ্তরের আইজিএ প্রশিক্ষন কেন্দ্র থেকে টেলারিংএ প্রশিক্ষন নেয়া যায়। তিনি অনেক কষ্টকরে ভর্তি হলেন আইজিএ প্রশিক্ষন কেন্দ্রে তিন মাস টেইলারিং শিখে নিজে একটি দোকান নিয়ে কাজ  শুরু করলেন আর তাকে পিছনে ফিরে তাকাতে হইনি এখন তিনি অর্থনৈতিক ভাবে সচ্ছল। স্বামী সন্তানদের নিয়ে সুখে আছেন।

উপজেলার কালাইয়া গ্রামের পারুল বেগম তিনি সফল জননি ক্যাটাহরীতে জয়িতা নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি সন্তানদের পড়া লেখা চালিয়ে নেয়ার জন্য আয়ার কাজ বেছেনেন। মানুষের বাসায় কাজ করে সন্তানদের পড়া লেখা চালিয়েনেন। এবং স্বামীর দরিদ্রতা থেকে মুক্তির জন্য নকশি কাথা সেলাইয়ের কাজ শুরু করেন। ১৯৯৩ সালে ইন্দুরকানী ডিগ্রী কলেজের অফিস সহায়ক পদে চাকুরিতে যোগদেন। তার বড় ছেলে বডার গার্ড বাংলাদেশ এ ল্যান্স নায়েক হিসেবে কর্মরত রয়েছেন ও ছোট ছেলে বাংলাদেশ সেনাবাহিনিতে কর্মরত। বড় মেয়ে এসএসসি পাশের পর বিয়েদেন এবং ছোটমেয়ে বর্তমানে অর্নাস প্রথম বর্ষের ছাত্রী।

নির্যাতনের বিভীষিকা মুছে নতুন উদ্দ্যোমে জীবন শুরু করে জয়িতা হলেন নাজমুন নাহার । বিয়ের পরে দুই বছর  সুখেই ছিলেন।  দুই বছর পরে স্বামী যৌতুকের জন্য নানা রকম শারিরিক মানুষিক অত্যাচার নির্যাতন শুরু করে তার উপর। সেই সময় তার একটি মৃত সন্তানের জন্ম হয়। তখন নির্যাতনের মাত্রা আরো বেড়ে যায়। স্থানিয় পর্যায় অনেক দেনদরবারে মিমাংসা ব্যার্থ হয়ে অবশেষে আইনের আশ্রায় নেনে তিনি। সময় গড়িয়ে তিনি আবার মা হন তার আরো একটি সন্তানের জন্মহয়। এই সময় নাজমুন নাহারের পিতা মারা যায় তার উপর  স্বামীর অত্যাচারের মাত্রা বেড়ে যায় বহুগুন। তখন তিনি গার্মেন্টেসে কাজনেন একসময় মারা যায় তার মা দিশেহারা হয়ে পড়েন তিনি। স্বামী হাবিবুর রহমান দ্বিতয় বিবাহ করেন। তাকে ছেলে সহ বাড়ি থেকে তাড়িয়েদেন। বর্তমানে দর্জিকাজ ও হাস মুরগী পালন করে সন্তানের পড়া লেখা সহ সাংসারিক খরচ বহন করছেন এই সফল নারি।

উপজেলার পত্তাশী গ্রামের মৃত আনিসুর রহমানের কন্য নিশাত নাছরিণ তিনি শিক্ষা ও চাকুরী ক্ষেত্রে সফলতা অর্জন করে নির্বাচিত হলেন জয়িতা। তিনি ময়ের পেটে থাকা অবস্থায় মারা জান তার বাবা। নানার বাড়িতে তিনি লালিত পালিত হন। যখন তার স্কুলে যাবার সময় হল মা তাছলিমা বেগম তাকে স্কুলে ভর্তি করেদেন। প্রথমিকের গন্ডি পেড়িয়ে উঠেন মাধ্যমিকে প্রয়োজন হয় টাকার। লেখা পড়ার খরচ পাবে কোথায় বিধবা মা। নিশাত শুরু করেন টিউশনি সেই থেকে মাধ্যমিকের গন্ডি পেরিয়ে উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ চুকিয়েছেন এই টিউশনির টাকায়। অদ্যম ইচ্ছা থাকলে একটি সাধারণ পিতা হারা মেয়ে উচ্চ ডিগ্রী নিতে পারে তার জলন্ত উদাহরণ নিশাত নাছরিন।

অবহেলিত নারি সমাজের উন্নয়নে  বিশেষ অবদানের জন্য ইন্দুরকানী গ্রামের নাজমুন নাহার জয়িতা নির্বাচিত হলেন। তিনি  সমাজের অবহেলিত সুবিধা বঞ্চিত নারিদের ভাগ্য উন্নয়নের জন্য কাজ করতে শুরু করেন ২০১৫ সাল থেকে। গঠন করেন নারি কল্যান সোসাইটি নামক একটি সংগঠন। তিনি সংগঠনটির চেয়ারপার্সন হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন অধ্যবদি। তার সংগঠন থেকে নারিরা সেলাই প্রশিক্ষন, বিউটি পার্লার, ব্লক বাটিক, কুঠির শিল্প প্রশিক্ষন সহ বিভিন্ন প্রকার প্রশিক্ষন নিয়েআ স্বাবলম্বী হচ্ছে। তিনি দরিদ্র নারিদের প্রশিক্ষন দিয়ে আথিক সাহায্য ও সেলাই মেশিন প্রদান করছেন। ২০১৯ অর্থ বছরে তিনি উপজেলার পাড়েরহাট আশ্রায়ন প্রকল্পে সুবিধা বঞ্চিত নারি শিশু ও কিশোরি মেয়েদের বিনা মুল্যে জরুরি ঔষধ, সেনিটারি নেপকিন, খাবার সেলাইন ও পরিবার পরিকল্পনা সামগ্রি বিতরন করেন। তার সংগঠন গর্ভবতি মা এবং শিশুদের স্বাস্থ্য সপরিচর্যা বিষয়ে উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে উঠান বৈঠক ও ওরিয়েন্টেশন সভা পরিচালিত করেন। বাল্য বিয়ে প্রতিরোধে নারি কল্যান সোসাইটির রয়েছে বিশেষ ভুমিকা।

প্রজন্মনিউজ২৪/হাসিব/রেজাউল

পাঠকের মন্তব্য (০)

লগইন করুন



আরো সংবাদ














ব্রেকিং নিউজ