উপলব্ধি


রায়হান চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্র। তার পিতা হারুন সাহেব বহুজাতিক কোম্পানিতে চাকরি করেন। তার মা আফরোজা হারুন তিনিও একটি প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকরি করেন। রায়হান তার শ্রেণীর মধ্যে একজন মেধাবী ছাত্র এবং সে কখনো মিথ্যা কথা বলে না। এই জন্য তার সহপাঠী ও শিক্ষকরা তাকে খুব ভালবাসেন। রায়হানকে প্রতিদিন তার পিতা স্কুলে নিয়ে যান। মাঝে মধ্যে তার মা তাকে স্কুলে নিয়ে যান।


রায়হানের পিতা হারুন সাহেব প্রতিদিন দেরি করে অফিসে যান। প্রতিদিনের মতো একদিন সকালে তিনি রায়হানকে স্কুলে নিয়ে যাওয়ার জন্য বের হলেন। এমন সময় তার অফিস থেকে তার ম্যনেজার তাকে ফোন করলেন । তিনি হারুন সাহেবকে জিজ্ঞেস করলেন, “হারুন সাহেব আপনি কোথায়?” আপনি এখনো অফিসে এলেন না। তিনি বলেন, “স্যার আমি তো রাস্তায় যানজটে আটকে পড়েছি। আমি দশ পনের মিনিটের মধ্যে অফিসে পৌছে যাব।” রায়হান মনে মনে চিন্তা করলো যে, আব্বু এই মাত্র আমাকে নিয়ে বাসা থেকে বের হলেন। অথচ তিনি তার স্যার কে বললেন যানজটে আটকা আছেন।


এর কয়েকদিন পর হারুন সাহেব রায়হানকে স্কুলে যাওয়ার জন্য তৈরী হতে বললেন রায়হান তৈরী হয়ে এলে বাবা ছেলে মিলে এক সাথে নাশতার টেবিলে বসলেন। এমন সময় হারুন সাহেব অফিস থেকে তার ম্যানেজার কল করলেন তিনি তাকে জিজ্ঞেস করলেন,“হারুন সাহেব আপনি কোথায়? আপনি এখনো অফিসে আসলেন না?” তিনি তার ম্যানেজার কে বললেন,“স্যার আমি আমার ছেলেকে নিয়ে স্কুলে আসছি। আমার আসতে একটু দেরী হবে।” রায়হান মনে মনে আবার চিন্তা করলেন আব্বু আমাকে নিয়ে এখনো নাস্তার টেবিলে অথচ তিনি তার ম্যানেজারকে বললেন তিনি  আমাকে নিয়ে স্কুলে আসছেন । এভাবে তিনি তার ম্যানেজারের সাথে প্রায় মিথ্যা বলতেন।


রায়হান মনে মনে চিন্তা করে যে, মনে হয় এভাবে মিথ্যা বলা কোন অপরাধ নয়। তাই প্রায় আব্বু মিথ্যা কথা বলেন। একদিন সন্ধ্যা বেলা হারুন সাহেব তার অফিস থেকে বাসায় ফোন করলেন। তখন বাসায় কেউ ছিল না। শুধু রায়হান একা। সে বাসায় একা একা বসে টেলিভিশন দেখছে। তার মা এখনো অফিস থেকে বাসায় ফিরেনি । বাসায় কেউ না থাকায় রায়হান ফোনটি রিসিভ করলো। হারুন সাহেব রায়হানকে জিজ্ঞেস করলেন, “আব্বু তোমার আম্মু কোথায়?” সে উত্তর দিল,“আম্মু রান্না ঘরে রান্না করছে। আর আমি পড়ার টেবিলে বসে অংক করছি।” হারুন সাহেবের ছেলের কথা শুনে ফোন রেখে দিলেন।


এর দু’ঘন্টা পর হারুন সাহেব বাসায় ফিরলেন । তিনি বাসায় ফিরে দেখেন রায়হান বসে টেলিভিশন দেখছে। তিনি তাকে জিজ্ঞেস করলেন,“আব্বু তোমার আম্মু কোথায়?” সে উত্তর দিল,“আম্মু মোবাইলে ফ্লেক্সি দেওয়ার জন্য নিচে গিয়েছে।” হারুন সাহেব ফ্রেশ হওয়ার জন্য বাথরুমে ঢুকলেন। বাথরুম থেকে বের হয়ে দেখলেন এখনো আফরোজা হারুন বাসায় ফিরেননি। তিনি রায়হান কে জিজ্ঞেস করলেন,“তোমার আম্মু কোথায়?” সে আমতা আমতা শুরু করলো। তিনি তাকে ধমক দিয়ে বললেন,“কী আমতা আমতা করছো তোমার আব্বু কোথায়?” সে বললো,“আম্মু এখনো অফিস থেকে বাসায় ফিরেননি।” তিনি তার মোবাইল হাতে নিয়ে তার স্ত্রীর নাম্বারে কল দিলেন। কিন্তু তার নাম্বার বন্ধ দেখাচ্ছে। তিনি তার ছেলেকে গালি গালাজ করতে লাগলেন ।


এর আধা ঘন্টা পর আফরোজা হারুন বিমর্ষ অবস্থায় বাসায় ফিরলেন। হারুন সাহেব তাকে জিজ্ঞেস করলেন,“এতক্ষন কোথায় ছিলে? এতো বিমর্ষ কেন?” তিনি বললেন, “আজ বাসায় ফেরার পথে আমাকে কিছু লোক কিডন্যাপ করতে চেয়েছিল। আমর মোবাইল সহ সব কিছু ওরা নিয়ে গেছে। আমি কোন রকম পালিয়ে এসেছি।” হারুন সাহেব আরো রাগানি¦ত হয়ে মিথ্যা কথা বলার জন্য রায়হান কে মারধর করলেন।


রাতে বিছানায় শুয়ে তিনি চিন্তা করতে লাগলেন। আমার যে ছেলে কোনদিনও মিথ্যা কথা বলেনি সে কেন মিথ্যা কথা বললো তার কারণ কী? চিন্তা করতে করতে তিনি আত্মোপলব্ধি করলেন যে তিনি তার ছেলের সামনে তার অফিসের ম্যানেজারের সাথে প্রায়ই যে মিথ্যা কথা বলেন এটা দেখে তার ছেলে এসব শিখেছে। তাই তিনি মনে মনে প্রতিজ্ঞা করলেন আজ থেকে তিনি আর কখনো মিথ্যা কথা বলবেন না । জীবনে কখনো না।

 

রিফাউল ইসলাম

শিক্ষার্থী, সরকারী বাংলা কলেজ