ওভারটাইম না দিলে আমার ঘুম হয় না

প্রকাশিত: ০৭ ডিসেম্বর, ২০১৯ ০৫:৪৭:৫১

ওভারটাইম না দিলে আমার ঘুম হয় না

একমাত্র প্রবাসীরাই নিজের উপার্জিত পুরো টাকা পরিবারকে দিয়ে তৃপ্তির হাসি হাসতে পারে। অনেকে বলে প্রবাসীরা মানুষ না ভিনগ্রহের প্রাণী। গতকাল বাসে চড়ে সিঙ্গাপুরের জুরং ইস্ট যাওয়ার পথে কলিমউদ্দিন নামের একজনের সাথে পরিচয় হয়। কথায় কথায় তার জীবন সম্পর্কে জানতে পারলাম। কলিমউদ্দিন সুদকে হারাম বলে জানে, তাই সুদকে ঘৃণা করত। যার বয়স এখন বন্ধুদের সাথে মাঠে খেলা নিয়ে মেতে থাকা।

সেই ছেলেটিই পরিবারকে সুখ দিতে উচ্চহারে সুদে ৮ লাখ টাকা ঋণ নিয়ে প্রবাসে। ভিনদেশে আসার পর কলিমউদ্দিন সুদ পরিশোধ করার জন্য উঠেপড়ে লেগে যায়। রাতে ঠিকমতো ঘুম হয় না। যদি একদিন কাজ বন্ধ দেয় কিংবা ওভারটাইম না দেয় ছেলেটি পাগল প্রায় হয়ে যায়। সে অফিসে উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের কাছে একগাদা কমপ্লেইন করে বসে। কারণ ওভারটাইম ছাড়া তারপক্ষে এত টাকার ঋণ পরিশোধ করা সম্ভব না।

প্রয়োজনে সে দেহে বিশ্রাম না দিয়ে ২৪ ঘণ্টা কাজ করবে তবুও সে ঋণ পরিশোধ করতে চায়। পরিবারের সবার মুখে হাসি ফোটাতে চায়। সে হয়ত জানে না, ঋণ পরিশোধের পর আরেক সমস্যা এসে সামনে দাঁড়াবে। প্রবাসীদের সমস্যা কোনোদিন শেষ হয় না। এ যেন শেষ হইয়াও হইল না শেষ। কথায় কথায় জুরং এসে দু’জন দু’দিকে চলে যাই। কিছুক্ষণ ঘোরাফিরা করে ব্যাংকের সামনে এসে দাঁড়াই। বাড়িতে কিছু টাকা পাঠাতে হবে।

ব্যাংকে লম্বা লাইন দেখে বাহিরে দাঁড়িয়ে কি করা যায় ভাবছি। এমন সময় দেখলাম কলমউদ্দিন ব্যাংক থেকে বের হয়ে আমাকে সালাম দিয়ে জিজ্ঞেস করল, ভাই আপনি এখনো আমার জন্য দাঁড়িয়ে আছেন? জবাব দিয়ে বললাম, তোমার জন্য আসিনি। বাড়িতে কিছু টাকা পাঠানো প্রয়োজন তাই এখানে দাঁড়িয়ে আছি। -আমার সাথে এলে তো এতক্ষণ টাকা পাঠিয়ে দিতেন। অসুবিধা নেই আগামীকাল পাঠাব।

এখন তোমার কথা বলো।আমার কথা আর কি বলব ভাই, বেতন পেয়ে বাড়িতে টাকা পাঠালাম। এখন সুখ অনুভব করছি। -তোমাকে দেখলে ক্লাস টেনে পড়া কিশোর মনে হয়, এখনো তোমার দাড়িগোঁফ উঠেনি তুমি বিদেশ এলে ক্যামনে ভাই।ও মজা করে জবাব দেয়, আমাকে বাচ্চা মনে করবেন না ভাই, দুই বছর হয়ে গেছে সিঙ্গাপুর এসেছি। গতকাল আমার ২০ বছর পূর্ণ হয়েছে। তবে পাসপোর্টে কিন্তু এখন আমার ২৭ বছর।

এ কথা বলেই সে নির্মল হাসি দিল।=কথায় কথায় আরও জানতে পারলাম, কলিমউদ্দিনের বাবা মারা যাবার পরই বড় ছেলে হিসেবে সংসারের সমস্ত দায়িত্ব নিয়ে সিঙ্গাপুর চলে আসে। এখন ঋণ পরিশোধ প্রায় শেষ পর্যায়। ঋণ শেষ হলেই বাড়ি করতে হবে ছোট দুই বোনকে বিয়ে দেওয়া এবং একমাত্র ছোট ভাইকে মানুষ করতে হবে।এই বয়সে তার ঘাড়ে এত দায়িত্ব শুনে আমি পাশাপাশি হাঁটতে হাঁটতে তার কাঁধে হাত রেখে বললাম ‘

তোমাদের মতো সন্তানরাই পিতামাতার গর্ব, দোয়া করি প্রতিটা পিতামাতাই যেন তোমার মত সন্তান পায়।’ মাস শেষে বেতন পাবার পর সমস্ত টাকা পরিবারের জন্য পাঠিয়েও প্রবাসীদের মুখে যে স্নিগ্ধ হাসি ফুটে উঠে তার পৃথিবীর সবচেয়ে দুর্লভ বস্তু। সর্বশ্রান্ত নি:স্ব, শূন্য করার মাঝেও যে তৃপ্তি আছে তা কলিমউদ্দিনকে না দেখলে কোনোদিনও উপলব্ধি করতে পারতাম না। একমাত্র প্রবাসীরাই নিজের উপার্জিত সমস্ত টাকা পরিবারে বিলিয়ে দিয়ে তৃপ্তির হাসি হাসতে পারে।‘

প্রজন্মনিউজ২৪/নাজিম উদ্দীন

এ সম্পর্কিত খবর

ঢাকা শিশু হাসপাতালে আগুন, নিয়ন্ত্রণে ৫ ইউনিট

দেশটা এখন আওয়ামী মগের মুল্লুকে পরিণত হয়েছে : মির্জা ফখরুল

ভোট দিতে গিয়ে শুনলেন তিনি মারা গেছেন, নিরাশ হয়েই ফিরলেন বৃদ্ধা

ইরানে হামলার পর নাগরিকদের ইসরায়েল ছাড়তে বলল অস্ট্রেলিয়া

মুস্তাফিজকে কেন পুরো আইপিএল খেলতে দিচ্ছে না বাংলাদেশ

খিলগাঁওয়ে পরিত্যক্ত ঘরে যুবকের ঝুলন্ত মরদেহ, পুলিশের ধারণা হত্যা

ছাত্রলীগ নেতার পর একই নারীর সঙ্গে ইউপি চেয়ারম্যানের ভিডিও ভাইরাল

কণ্ঠের সুরক্ষায় ঝাল-তৈলাক্ত খাবার পরিহারের পরামর্শ

৩টি ড্রোন ধ্বংস করল ইরান, নিরাপদে আছে ইসফাহানের পারমাণবিক স্থাপনা

আগামীকাল ফিটনেস পরীক্ষা, থাকছেন কি সাকিব?

পাঠকের মন্তব্য (০)

লগইন করুন



আরো সংবাদ














ব্রেকিং নিউজ