প্রধানমন্ত্রী মাহদির পদত্যাগ ঘোষণার পরও থামছে না শিয়াদের বিক্ষোভ


উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে দেশটির পার্লামেন্টে জরুরি অধিবেশন বসতে পারে আজ রাজপথ না ছাড়ার আহ্বান শিয়া নেতা মুকতাদার।

প্রধানমন্ত্রী মাহদির পদত্যাগের ঘোষণার পরও বিক্ষোভ ইরাকে প্রবল সরকারবিরোধী বিক্ষোভের মুখে শুক্রবার ইরাকের প্রধানমন্ত্রী আদেল আবদুল মাহদি পদত্যাগের ঘোষণা দিলেও দেশটিতে শনিবারও বিক্ষোভ অব্যাহত ছিল। এদিন দুর্নীতিগ্রস্ত প্রশাসনযন্ত্রের পরিবর্তন ও বিদেশি শক্তি; বিশেষ করে ইরানের প্রভাব হ্রাসের দাবিতে রাজধানী বাগদাদসহ গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলোতে বিক্ষোভ দেখিয়েছে আন্দোলনকারীরা। এদিকে, উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে আজ (রোববার) দেশটির পার্লামেন্টের জরুরি অধিবেশন বসার কথা রয়েছে। সংবাদসূত্র : আল-জাজিরা, রয়টার্স

প্রধানমন্ত্রী মাহদির পদত্যাগের ঘোষণাকে দাবি আদায়ের 'প্রথম ধাপ' হিসেবে অ্যাখ্যা দিয়েছে আন্দোলনকারীরা। মোস্তফা নামের এক বিক্ষোভকারী প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের প্রসঙ্গে বলেন, 'এটি আমাদের প্রথম বিজয়। আমরা আরও বিজয়ের অপেক্ষায় আছি। আন্দোলনে যারা শহীদ হয়েছেন, এই বিজয় তাদের।'

এর আগে বৃহস্পতিবার দেশটিতে সরকারবিরোধী বিক্ষোভে একদিনেই ৫০-এর বেশি বিক্ষোভকারী নিহত হন। দেশটিতে গত মাস থেকে শুরু হওয়া সরকারবিরোধী এ বিক্ষোভ-সহিংসতা এরই মধ্যে চার শতাধিক ইরাকির প্রাণ কেড়ে নিয়েছে; শুক্রবার অন্তত ১৫ জন নিহত হয়েছে।

ইরাকের শিয়া সম্প্রদায়ের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুলস্নাহ আলি আল-সিসতানি বিক্ষোভকারীদের ওপর নিরাপত্তা বাহিনীর বল প্রয়োগের কঠোর সমালোচনা করার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই পদত্যাগের ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী মাহদি। বিক্ষোভ দমনে মাহদি সরকারকে 'ব্যর্থ' অ্যাখ্যা দিয়ে নতুন একটি সরকার গঠনেরও আহবান জানিয়েছিলেন তিনি।

শুক্রবার ইরাকি প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে পাঠানো এক বিবৃতিতে বলা হয়, এমপিরা যেন নতুন একটি সরকার গঠন করতে পারেন, তা করতেই পদত্যাগপত্র জমা দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন মাহদি। বিবৃতিতে তিনি কবে পদত্যাগ করবেন তার উলেস্নখ ছিল না।

বিক্ষোভ শুরু হওয়ার পর মাহদি আগেও একবার পদত্যাগের আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন। কিন্তু এবার আয়াতুলস্নাহ আলি সিসতানির 'নতুন সরকার গঠনের' আহ্বানের পর তার পদ ছেড়ে দেয়ার ঘোষণা আসা সময়ের ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছিল।

প্রভাবশালী শিয়া নেতা সিসতানিকে সাধারণত রাজনৈতিক বিষয়ে মন্তব্য করতে দেখা যায় না। তবে যেকোনো বিষয়ে তার মন্তব্যের গুরুত্ব অপরিসীম। মাহদির সরকার 'গত দুই মাস ধরে চলমান ঘটনা মোকাবিলায়' ব্যর্থ হয়েছে জানিয়ে শুক্রবার কারবালার একটি মসজিদে জুমার খুতবায় সিসতানি বলেন, 'যে পার্লামেন্ট থেকে বর্তমান সরকার হয়েছে, তাদের অবশ্যই বিকল্পের কথা ভাবা উচিত এবং ইরাকের স্বার্থ অনুযায়ী কাজ করা উচিত।' শিয়া এ নেতা বিক্ষোভকারীদেরও সহিংসতা এড়াতে এবং তাদের ভেতর লুকিয়ে থাকা 'দুষ্কৃতকারীদের' বের করে দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

গত বছরের হিসাব অনুযায়ী, ইরাকে তরুণদের মধ্যে বেকারত্বের হার প্রায় ১৬ শতাংশ। জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, দেশটির প্রায় ৬৭ লাখ নাগরিকের মানবিক সহায়তা প্রয়োজন। রাজপথ না ছাড়ার আহ্বান শিয়া নেতা মুকতাদার

এদিকে, ইরাকের শিয়া নেতা মুকতাদা আল-সদর তার সমর্থকদের রাজপথ না ছেড়ে বিক্ষোভ চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। দেশটির প্রধানমন্ত্রী আবদেল আবদুল মাহদির পদত্যাগের ঘোষণা দেওয়ার পর এই আহ্বান জানান তিনি। সরকারের ওপর চাপ বাড়াতে ইরাকি জনগণকে রাস্তায় অবস্থান করতে বলেন এই শিয়া রাজনীতিক।

ভবিষ্যৎ সরকারে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য একজন প্রার্থীর পক্ষে বিক্ষোভকারীদের একমত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন মুকতাদা। গত নির্বাচনে তার জোটই সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন পায়। তিনি জানান, গত দুই মাসব্যাপী আন্দোলনের প্রথম ফল হচ্ছে প্রধানমন্ত্রী মাহদির পদত্যাগের সিদ্ধান্ত। শিয়া নেতা মুকতাদা আরও বলেন, 'জাতিগত ও সাম্প্রদায়িকতার ভিত্তিতে মন্ত্রিসভা নিয়োগ করা উচিত হবে না নতুন প্রধানমন্ত্রীর।'

এ সময় বিক্ষোভকারীদের আন্দোলন অব্যাহত রাখতে ও রাস্তা না ছাড়তে আহ্বান জানান সদর। আর ইরাকি জনগণকে তাদের নিজেদের ভবিষ্যৎ নির্ধারণে সুযোগ দেওয়া রাষ্ট্রগুলোকে 'ইরাক বান্ধব দেশ' বলে অভিহিত করেন তিনি। কর্মসংস্থানের সংকট, নিম্নমানের সরকারি পরিষেবা এবং দুর্নীতির অভিযোগ তুলে গত ১ অক্টোবর বাগদাদের রাজপথে নামে কয়েক হাজার বিক্ষোভকারী। নির্দিষ্ট কোনো রাজনৈতিক দলের অনুসারী না হয়েও অনিয়মের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধের আওয়াজ নিয়ে রাজপথে নামে তারা। বিশেষ করে শিয়া অধু্যষিত দক্ষিণাঞ্চলীয় বেশ কয়েকটি শহরে বিক্ষোভ ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। এখন পর্যন্ত এই বিক্ষোভে অন্তত ৪০৬ জন নিহত হয়েছে।

প্রজন্মনিউজ২৪/জাহিদ