গাইবান্ধা জেলা প্রতিনিধি: উওর বঙ্গের রেলওয়ের গাইবান্ধা-বোনারপাড়া রেল ত্রিমোহিনী রেলওয়ে জংশন স্টেশনটি বন্ধ করে দিয়েছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। ফলে এই স্টেশন থেকে দুর দুরান্তে যাতায়াতকারী রেল যাত্রীদের নানা সমস্যা সংকট পোহাতে হচ্ছে। এই রেল স্টেশনটি পুনরায় চালু করার জন্য ঐ অন্চলের সর্বস্তরের মানুষ দীর্ঘদিন যাবত দাবী জানালেও তাতে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ কোন কর্ণপাতই করছেন না।
ত্রিমোহিনী জংশন স্টেশন বন্ধ করা হলেও এই স্টেশনে এখনও প্রতিদিন সান্তাহার-লালমনিরহাট ও সান্তাহার-পঞ্চগড়ের মধ্যে চলাচলকারী ৭টি লোকাল আপ ও ডাউন ট্রেনের স্টপেজ রয়েছে। কিন্তু কোন ইন্টারসিটি ট্রেনের স্টপেজ নেই। টিকিট কাউন্টার না থাকায় যাত্রীরা টিকিক না করেই ট্রেনে উঠতে হচ্ছে এবং ট্রেনে উঠে টিকিট চেকারের কাছ থেকে টিকিট সংগ্রহ করতে হয়। স্টেশনে যাত্রীদের বসার জায়গা ও টয়লেট নেই।
এমনকি পানীয়জল ও বৈদ্যুতিক আলো না থাকায় এবং ট্রেন কখন আসবে তা জানার ব্যবস্থা না থাকায় ট্রেন যাত্রীদের চরম দূর্ভোগ পরতে হচ্ছে। তদুপরি নারী যাত্রীদের এক্ষেত্রে নিরাপত্তাসহ নানা সমস্যার সম্মুখিন হতে হয়। সরেজমিনে ত্রিমোহিনী জংশন স্টেশন পর্যবেক্ষন করে দেখা যায়, এই রেলওয়ে স্টেশনের স্টেশন মাস্টার ও টিকিট কাউন্টারের কক্ষে তালা ঝোলানো।
২০১৬ সালের মার্চ মাসে এই স্টেশনটি বন্ধ করে দেওয়ার পর থেকেই এখানকার স্টেশন মাস্টারসহ রেলের সব স্টাফ স্টেশন ছেড়ে চলে যায়। সেই থেকে অরক্ষিত অবস্থায় পড়ে আছে স্টেশন ও কাউন্টার কক্ষ। স্টেশন সংলগ্ন জমিয়ে রাখা মূল্যবান রেলের লোহার পাতসহ সব জিনিসপত্র খোয়া যাচ্ছে। স্টেশনের পাশের রেলওয়ের স্টাফ কোয়াটারটি পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থেকে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
স্টেশন ও স্টাফ কোয়াটারের জমি দখল করে তাতে ধান চাষ ও কলা চাষ সহ নানা ফসল চাষ করছে পার্শ্ববর্তী এলাকার প্রভাবশালী লোকজন। তদুপরি স্টেশনের আশেপাশের এলাকা দখল করে বাড়ি-ঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছে এইসব কথিত ক্ষমতাশীন দলের প্রভাবশালী লোকজন। উল্লেখ্য যে ত্রিমোহিনী জংশন স্টেশন থেকেই বালাসী ফেরীঘাট এবং বোনারপাড়া-সান্তাহার এই দুটি রেল সেকশনে রেল চলাচল অব্যাহত ছিল।
ব্রহ্মপুত্র নদের বালাসী-বাহাদুরাবাদঘাট হয়েই রেলওয়ে ফেরী পারাপারের মাধ্যমেই দেওয়ানগঞ্জ-জামালপুর-ময়মনসিংহ হয়ে রাজধানী ঢাকার সাথে ছিল উত্তরাঞ্চলের ৮টি জেলার রেল যোগাযোগ। যমুনায় বঙ্গবন্ধু সেতু দিয়ে রেল ও সড়ক যোগাযোগ চালু হওয়ার পর রেল কর্তৃপক্ষ এই রুটে ফেরী চলাচল বন্ধ করে দেয়। ফলে ত্রিমোহিনী-বালাসীঘাট রেলপথে রেল চলাচল বন্ধ হয়ে রেল লাইনও পরিত্যক্ত হয়ে যায়।
রেলওয়ে ফেরী চলাচল শুরু করে বিকল্প এই পথে পুনরায় আবারও ঢাকার সাথে উত্তরাঞ্চলের রেল চলাচলের জন্য উদ্যোগ নেয়া হলেও এখনও তা বাস্তবায়িত হয়নি। ফলে ময়মনসিংহ, জামালপুর ও দেয়ানগঞ্জ যাতায়াতের ক্ষেত্রে উক্ত অন্চলের যাত্রীদের ট্রেনযোগে সরাসরি যাওয়ার কোন ব্যবস্থা না থাকায় তাদের ঝুঁকি নিয়ে নৌকায় নদী পেরিয়ে দেয়ানগঞ্জ গিয়ে সেখান থেকে ঢাকাসহ ওই সমস্ত এলাকায় ট্রেনে যাতায়াত করতে হচ্ছে।
এব্যাপারে পঞ্চগড়গামি ৭নং আপ উত্তরবঙ্গ মেইল ট্রেনের গার্ড (ফিরোজ হাসান) বলেন, ত্রিমোহিনীতে সব লোকাল ট্রেনের স্টপেজ মাত্র ২ মিনিট। বন্ধ স্টেশন বলে এখানে সতর্ক থাকতে হয়, তবে কবে নাগাদ এই স্টেশন আবার চালু হবে তা তিনি জানেন না বলে তিনি জানালেন। ত্রিমোহিনী স্টেশনের কুলি সর্দার (মো. মিলন মিয়া) ও বোয়ালী ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের সাবেক মেম্বার (কাজী মো. আজিজার রহমান) এলাকাবাসির দাবী মোতাবেক অবিলম্বে স্টেশনটি চালু সহ রেল অবর্ণনীয় দুর্ভোগের কথা জানিয়ে প্রতিকারের দাবি জানান।
তারা উল্লেখ করেন, এ স্টেশনে ট্রেনের স্টপেজ ২ মিনিট হলেও ১ মিনিটের বেশী এই স্টেশনে ট্রেন থামে না। এতে যাত্রীদের ট্রেনে উঠানামা করতে বিশেষ করে বয়স্ক নারী-পুরুষ ও শিশুদের নিয়ে বিপাকে পড়তে হয়। এজন্য অন্ততঃ ২ মিনিটের বেশী ট্রেনের স্টপেজ দেওয়ার দাবি তাদের। যদি ঐ অঞ্চলে ট্রেন যোগাযোগ আবার চালু হয় তাহলে এলাকাবাসীর আনন্দের আর শেষ থাকবেনা।তারা আবার ভালোভাবে ট্রেন যোগাযোগের সুবিধাপাবে।
প্রজন্মনিউজ২৪ / আজাদ / মামুন