ইমাম হত্যার প্রতিবাদে সাধারণ জনতার মানব বন্ধন


গাইবান্ধা  জেলা প্রতিনিধিঃ সুদের টাকা আদায়কে কেন্দ্র করে নিরীহ-অসহায় দরিদ্র  মসজিদের ইমাম দুই সন্তানের জনক আবুল কালাম আজাদকে(৩৮)বেদম মারপিটসহ নৃশংস হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। মুখে মাদক ঢেলে গলায় গামছা পেঁচিয়ে মরদেহ গাছে ঝুলিয়ে আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দেয়ার চেষ্টা। চিহৃিত জড়িতদের গ্রেফতারসহ শাস্তির দাবীতে পলাশবাড়ীতে সড়ক অবরোধ করে ২১ অক্টোবর(সোমবার)  বিশাল মানববন্ধন করা হয়েছে।

এ ব্যাপারে ৩ জনকে আসামী করে গাইবান্ধার  সাদুল্লাপুর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলার বিবরণ ও সরেজমিন তথ্যানুসন্ধানে জানা যায় সাদুল্লাপুর উপজেলার ৭নং ইদিলপুর ইউনিয়নের মহিপুর গ্রামের (উত্তরপাড়া) মৃত ইসমাইল হোসেনের ছেলে হত্যাকান্ডের শিকার হয়। এক মেয়ে ও এক ছেলের জনক  হতদরিদ্র আবুল কালাম আজাদ। জীবন-জীবিকার তাগিদে জীবদ্দশায় রাজমিস্ত্রির কাজসহ প্রতি শুক্রবার জুস্মার নামাজ পড়িয়ে দিন পার করে আসছিলেন তিনি।

সাদুল্লাপুরের বাসিন্দা হলেও পলাশবাড়ী এলাকার ৫নং মহদীপুর ইউনিয়নের দুর্গাপুর গ্রামের গাবেরদিঘী জামে মসজিদে শুধু প্রতি শুক্রবার জুম্মার নামাজের ইমামতি করতেন। এ সুবাদে কন্যাদায়গ্রস্থ পিতা আবুল কালাম মেয়ের বিয়ে সম্পন্ন করতে পলাশবাড়ী পৌর শহরের উদয়সাগর গ্রামের তারই এক ঘনিষ্ট পরিচিত বন্ধুর নিকট সুদ বিহীন শর্তে নগদ ২০ হাজার টাকা ধার নেন।

পরবর্তিতে মোটা অংকের সুদসহ দ্রুত টাকা পরিশোধে ওই বন্ধুর সাথে একাধিকবার পার্থক্যসহ নানা চাপাচাপিতে একপর্যায় ৫/৬ মাস আগে ৫ হাজার  সুদ বেশি দিয়ে মোট ২৫ হাজার টাকা প্রদানের মাধ্যমে ধার পরিশোধ করেন। ঘটনার দিন গত ১৮ অক্টোবর শুক্রবার সকাল ১১ টার দিকে দূর্গাপুর মসজিদে জুম্মার নামাজের ইমামতির উদ্দেশ্যে নিজ বাড়ী থেকে বেরিয়ে পড়েন।

এদিকে নামাজের মুখ্যসময় পর্যন্ত মসজিদে না পৌঁছায় মুসুল্লিরা তার বাড়ীতে খোঁজ নিলে সে অনেক আগেই মসজিদের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়েছেন বলে জানতে পারেন তারা। কিন্তু বিধিবাম আগে থেকেই ওঁতপেতে বসে থাকা দাদনচক্র তাকে অপহরন করে অন্যত্র নিয়ে যায়। হত্যার শিকার কালামের পরিবার সম্ভাব্য বিভিন্ন স্থানে সন্ধান করে তাকে না পেয়ে নিরুপায় হয়ে পলাশবাড়ী থানায় একটি জিডি করেন।

পরদিন শনিবার সকালে ঘটনাস্থল একই ইউনিয়নের গোবিন্দরায় দেবত্তর গ্রামের চ্যারেঙ্গা এলাকার নবীর  মাষ্টারের গাছের বাগানের  একটি আম গাছের উঁচু ডালে ঝুলানো হাজী গামছা দিয়ে পেঁচানো অবস্থায় তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। সোমবার ২১ অক্টোবর সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত প্রায় দুই ঘন্টাব্যাপী উভয় উপজেলার যথাক্রমে ইদিলপুর ও মহদীপুর ইউনিয়ন এলাকার প্রতিবাদমুখর সর্বস্তরের বিপুল সংখ্যক নারী-পুরুষ স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহনে পলাশবাড়ী- গাইবান্ধা সড়কের ঠুটিয়াপাকুর নামক স্থানে এক বিশাল  মানববন্ধনসহ সড়ক অবরোধ করে।

এসময় সড়কের উভয় পাশে স্বাভাবিক যান চলাচলে মারাত্মক বিঘ্ন সৃষ্টি হয়। আলিম পাশ, নামাজী- পরহেজগার-ধর্মভীরু,সৎ ও নিরীহ স্বভাবের অসহায় সাধারন  রাজমিস্ত্রিকে মিথ্যা অর্থ পাওনার অভিযোগে হত্যার সাথে জড়িত কুখ্যাত সুদারু জনৈক শাহারুল,শরিফুল ও মিলন নামীয় চিহৃিতদের গ্রেফতারসহ দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী জানান। মানববন্ধনে সমেবেতরা উত্তেজিত হয়ে স্লোগানের মাধ্যমে একসময় সড়ক অবরোধ করে।

এসময় উপস্থিত মহদীপুর ইউপি চেয়ারম্যান তৌহিদুল ইসলাম মন্ডল,ইদিলপুর ইউপি চেয়ারম্যান রাব্বি  আব্দুল্লাহ এর সহযোোগীতায়, ক্ষুব্ধ-উত্তেজিত জনতাকে শান্ত করতে গাইবান্ধার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার(এ-সার্কেল) মোহাম্মদ আবদুল আউয়াল, পলাশবাড়ী থানা অফিসার ইনচার্জ মো.মাসুদুর রহমান,সাদুল্লাপুর থানা অফিসার ইনচার্জ মাসুদ রানা, আসামীদের দ্রুত গ্রেফতার করতে সচেতন এলাকাবাসির স্বতঃস্ফূর্ত সহযোগিতা কামনা করে বক্তব্য রাখেন। পরে অবরোধ প্রত্যাহার করলে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।এ সময় প্রতিনিধির সাথে কথা হলে আসামীদের গ্রেফতারে জোর তৎপরতা অব্যাহত রয়েছ।

প্রজন্মনিউজ২৪/মামুন/হোসাইন আজাদ