পদ্মার এমন স্রোত আগে দেখেনি কেউ


রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়ায় পদ্মা নদীর ভয়াবহ ভাঙনে দুটি ফেরিঘাটসহ প্রায় ছয় শতাধিক বসতবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙনের হুমকিতে রয়েছে অন্যান্য ফেরিঘাটসহ শতশত বসতবাড়ি ও বিভিন্ন স্থাপনা। এতে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন স্থানীয়রা। ভাঙন আতঙ্কে অনেকে তাদের বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভেঙে সরিয়ে নিচ্ছে নিরাপদ স্থানে।

সরেজমিনে দেখা যায়, দৌলতদিয়া লঞ্চ ঘাটের সামনে দিয়ে ফেরিঘাট বরাবর পদ্মা নদীতে তীব্র স্রোত বইছে। এতে গত কয়েকদিনের ভাঙনে ১ নম্বর ও ২ নম্বর ফেরিঘাটসহ সিদ্দিক কাজীপাড়া এলাকার প্রায় ছয় শতাধিক বসতবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙন হুমকিতে রয়েছে অন্য ঘাটসহ পুরো এলাকা। মুহূর্তের মধ্যে বালুর বস্তাগুলো পানির গভীরে নিয়ে যাচ্ছে পদ্মার স্রোত। ভয়াবহ ভাঙন আতঙ্কে নদীপারের বাসিন্দারা ঘরবাড়ি ও স্থাপনা সরিয়ে নিচ্ছেন। ভাঙন দেখতে উৎসুক জনতা নদীর পারে ভিড় করছেন।

এদিকে ভাঙন রক্ষার্থে পানি উন্নয়ন বোর্ড কাজ করলেও স্রোতের সঙ্গে পেরে উঠছে না। প্রয়োজনের তুলনায় তাদের লোকবলও কম। পুরো ঘাট এলাকা ভাঙন ঝুঁকিতে থাকলেও শুধু ১ নম্বর ও ২ নম্বর ফেরিঘাট এলাকায় বালুর বস্তা ফেলার কাজ চলছে।

অপরদিকে পদ্মায় তীব্র স্রোতের কারণে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌ রুটে যানবাহন ও যাত্রী পারাপারে পর্যাপ্ত ফেরি চলছে না। গত দুদিন ধরে বন্ধ রয়েছে লঞ্চ চলাচল। ফলে এ রুটের যানবাহন ও যাত্রীরা চরম ভোগান্তি পোহাচ্ছেন। পদ্মার ভাঙনে দিশেহারা পরিবারগুলো তাদের ঘরবাড়ি ঘাট এলাকার রাস্তার পাশে স্তূপ করে রেখেছেন। যাওয়ার জায়গা না থাকায় কেউ কেউ অস্থায়ী টঙ ঘর বানিয়ে খোলা আকাশের নিচে রয়েছেন। সবার চোখে মুখে হতাশার ছাপ।

ক্ষতিগ্রস্তরা জানান, ভাঙনের তীব্রতা এত বেশি যে মুহূর্তের মধ্যে সব ভেঙে নিয়ে যাচ্ছে। তড়িঘড়ি করে কোনো রকম ঘরবাড়ি সরিয়ে নিয়েছেন তারা। যাওয়ার জায়গা না থাকায় রাস্তার পাশে ঘরগুলো রেখেছেন। পদ্মার এমন ভয়াবহ স্রোত তারা এর আগে কখনও দেখেননি।

তারা আরও জানান, ভাঙন শুরু হওয়ার পর পানি উন্নয়ন বোর্ড কাজ শুরু করেছে। কিন্তু সেটা ঘাট রক্ষার জন্য, বসতবাড়ি রক্ষার জন্য নয়। তারপরও যে পরিমাণ বস্তা ফেলা প্রয়োজন সে তুলনায় কোনো কাজ হচ্ছে না। ঘাট ও এলাকা রক্ষা করতে হলে হাজার হাজার বালুর বস্তা ফেলতে হবে। ভাঙনে সব হারালেও এখন পর্যন্ত কোনো জনপ্রতিনিধি তাদের পাশে দাঁড়াননি বলে অভিযোগ নদীপারের মানুষের।

ভাঙন দেখতে আসা লোকজন জানান, স্রোত ও ভাঙন দেখে তারা ভয় পাচ্ছেন। এমন ভাঙন আগে তারা দেখেননি। মুহূর্তের মধ্যে পানির ঘূর্ণিতে সব ভেঙে দেবে যাচ্ছে। আর স্রোতের শব্দ তো ভয়ঙ্কর। ভাঙন ঠেকাতে পানি উন্নয়ন বোর্ড যে কাজ করছে তাতে কোনো লাভ নেই। শুধু শুধু সরকারের কোটি কোটি টাকা নষ্ট।

ঢাকামুখী যাত্রীরা জানান, দৌলতদিয়া ঘাট এলাকায় তাদের দুর্ভোগ নতুন না। তবে এবারের চিত্র সম্পূর্ণ আলাদা। লঞ্চ বন্ধ, ফেরি কোনো রকম চলছে। এতে তাদের পারাপারে নানা রকম সমস্যা হচ্ছে। ঘাটে এসে ভাঙন পরিস্থিতি দেখে চেনা যাচ্ছে না এটা কোন জায়গা।

যানবাহনের চালকরা জানান, নদীভাঙন ও ফেরি চলাচল কমে যাওয়ায় তাদের দৌলতদিয়া প্রান্তে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দিনের পর দিন আটকে থাকতে হচ্ছে। এতে যাত্রী ও মালামাল নিয়ে খুব সমস্যা হচ্ছে। এছাড়াও পরিবহন খরচ বেড়ে যাচ্ছে।

আরিচার বিআইডব্লিউটিএ’র উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. মকবুল হোসেন বলেন, হঠাৎ করে স্রোত বৃদ্ধি পাওয়ায় দৌলতদিয়া লঞ্চ ঘাটের উজানে থাকা চরটি ভেঙে যাওয়ার কারণে স্রোত সরাসরি ১ ও ২ নম্বর ফেরি ঘাটে আঘাত করে। ফলে ১ অক্টোবর ভাঙন দেখা দেয় ১ নম্বর ঘাটে। ওই দিন পানি উন্নয়ন বোর্ড ভাঙন রোধে ১ ও ২ নম্বর ঘাটের আপ ও ডাউনে কাজ শুরু করে। কিন্তু চেষ্টার পরেও ১ ও ২ নম্বর ঘাটসহ ওই এলাকা বিলীন হয়ে গেছে। বর্তমানে ছয়টি ঘাটের চারটি ঘাট চালু আছে।

তিনি আরও জানান, প্রবল স্রোতের কারণে কয়েকদিন ধরে এ রুটে লঞ্চ চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। বিআইডব্লিউটিএ’র চেয়ারম্যান এসেও ঘাট পরিদর্শন করে গেছেন। স্রোতের তীব্রতা কমে গেলে লঞ্চ চলাচল স্বাভাবিক হবে।