‘ধর্ষকের’ সঙ্গে থানায় বিয়ে! প্রশাসনিক ব্যবস্থার দিকে নজর রাখছেন হাইকোর্ট


মামলা না নিয়ে ‘ধর্ষণের শিকার’ গৃহবধূর সঙ্গে পাবনা সদর থানা চত্বরে ‘ধর্ষকের’  বিয়ে দেওয়ার ঘটনায় প্রশাসন কি ব্যবস্থা নেয়, সেদিকে নজর রাখছেন হাইকোর্ট।

পাবনার আলোচিত ওই ঘটনা নিয়ে বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ বুধবার বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. খায়রুল আলমরে হাইকোর্ট বেঞ্চের নজরে এনে সংশ্লিষ্ট ওসির বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে স্বতঃপ্রণোদিত আদেশের আবেদন জানান সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জামিউল হক ফয়সাল।

এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী গাজী ফরহাদ রেজা ও আইনজীবী রোহানী সিদ্দিকা। আইনজীবী জামিউল হক ফয়সাল বলেন, ‘পাবনার বিষয়টি নিয়ে পত্রিকার প্রকাশিত নিউজ কোর্টের নজরে এনেছিলাম।’

তখন আদালত বললেন, ‘এ বিষয়ে তো ইতিমধ্যে প্রশাসন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। ওসিকে শোকজ করা হয়েছে। এটা নিয়ে আপনারা আবার কেন আসছেন?’

জবাবে জামিউল হক আদালতকে বলেন, ‘ওসিকে শোকজ করা হয়েছে ঠিকই। কিন্তু আজকের পত্রিকায় এসেছে, বিয়ের কাজী, যিনি বিয়েটা পড়াতে অসম্মতি জানিয়েছিলেন, সেই কাজী এবং ভিকটিমের পরিবারকে হুমকি দিয়ে যাচ্ছেন ওসির লোকজন। ওই ওসি যদি সেই থানায় দায়িত্বে বহাল থাকে তাহলে তদন্তটি ভিন্ন দিকে মোড় নিতে পারে, তদন্ত ভিন্ন দিকে প্রবাহিত হওয়ার সম্ভাবনা আছে।’

এসময় আদালত বললেন, ‘‘যেহেতু এটা প্রশাসনিক বিষয় এবং যেহেতু কর্তৃপক্ষ অ্যাকশন নিচ্ছে, দেখেন প্রশাসন কী ব্যবস্থা নেয়। যদি প্রশাসনের ব্যবস্থা সন্তোষজনক না হয়, তখন আপনারা আসলে আমরা বিষিয়টি দেখবো। আমরাও মিডিয়ার মাধ্যমে বিষয়টা নজরে রাখছি।”

মামলা না নিয়ে ‘ধর্ষণের শিকার’ গৃহবধূর সঙ্গে থানা চত্বরে ‘ধর্ষকের’ সঙ্গে বিয়ে দেওয়ার অভিযোগ ওঠার পর সোমবার পাবনা থানার ওসির ব্যাখ্যা চেয়েছে কর্তৃপক্ষ। সেই সঙ্গে ওই ঘটনায় মামলা নেওয়ার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে। গঠন করা হয়েছে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি।

গত শুক্রবার রাতে পাবনা সদর থানায় জোর করে এ দুজনের বিয়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ করেন ঘনটার শিকার ওই নারী। তবে যার বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ, তিনি নিজেকে নির্দোষ দাবি করে গণমাধ্যমকে বলেছেন, ‘রিমান্ডের ভয় দেখিয়ে’ পুলিশ তাদের বিয়ে দিয়েছে।

সোমবার পাবনার পুলিশ সুপার (এসপি) শেখ রফিকুল ইসলাম এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ‘পাবনা সদর থানার দাপুনিয়া ইউনিয়নে এক গৃহবধূকে দলবেঁধে ধর্ষণের ঘটনায় মামলা না নিয়ে ধর্ষণকারীর সঙ্গে বিয়ের ঘটনাটি বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচারিত হয়েছে।

এরপর পুলিশ ঘটনা তদন্তে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) গৌতম কুমার বিশ্বাসকে প্রধান করে তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করে। তদন্ত কমিটির রিপোর্টের পরিপ্রেক্ষিতে তাৎক্ষণিকভাবে থানায় ধর্ষণ মামলা হিসেবে মামলাটি নথিভুক্ত করার নির্দেশ দেওয়া হয়। সেই সঙ্গে সদর থানার ওসি ওবায়দুল হক থানা চত্বরে কেন এমন কাজ করলেন তার ব্যাখ্যা চেয়ে শোকজ নোটিশ দেওয়া হয়েছে।’

গত ২৯ অগাস্ট ওই নারীকে তার প্রতিবেশী রাসেল আহমেদ এক সহযোগীসহ পালাক্রমে ধর্ষণ করে। দুদিন পর তাকে একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের অফিসে নিয়ে তিনদিন আটকে রাখা হয় এবং সেখানে আরও ৪/৫ জন তাকে ধর্ষণ করে।

এরপর ওই নারী বাড়ি ফিরে স্বজনদের বিষয়টি জানালে ৫ সেপ্টেম্বর তাকে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে ওই গৃহবধূ নিজেই বাদী হয়ে পাবনা সদর থানায় লিখিত অভিযোগ করেন। কিন্তু আইনী ব্যবস্থা না নিয়ে পুলিশ রাসেলের সঙ্গে তার বিয়ের ব্যবস্থা করে বলে অভিযোগ করেন ওই নারী।

প্রজন্মনিউজ২৪/রেজাউল