পুলিশ বাহিনী এবং আওয়ামী লীগে কঠোর শুদ্ধি অভিযান জরুরি


আজ একটি ভালো সংবাদ দেখলাম। ঢাকা মহানগরীর কোন এক থানায়, একজন নিরীহ মানুষকে মিথ্যা মামলায় জড়িত করার অপরাধে একজন এসআই এবং একজন এএসআইকে বরখাস্ত করা হয়েছে।

পুলিশ কর্মকর্তাদের কাছে এ ধরনের আচরণ আশা করছে দেশের সকল জেলা, উপজেলা ও গ্রামের মানুষেরা। এ সংবাদ আমাকে ভীষণ ভাবে আশাবাদী করেছে। জনগণ নিশ্চয়ই এ সংবাদে খুশী হয়েছে। পুলিশের মধ্যে জবাবদিহিতার নীতি থাকলে পুলিশ বেপরোয়া হতে পারবে না।

সারাদেশ ভয়ংকর মাদকে ছেয়ে গেছে! গ্রামে গঞ্জেও পৌঁছে গেছে ইয়াবা, ফেন্সিডিল! বাচ্চা বাচ্চা ছেলে মেয়েরা প্রতিনিয়ত সেবন করছে! কিশোর তরুণ তরুণীরা জানে কোথায় কার কাছ থেকে মাদক কিনতে হবে। সিএনজি ড্রাইভার কিংবা রিকশাওয়ালাও মাদক বিক্রির স্পট চিনে! কিন্তু প্রকৃত বিক্রেতারা ধরা পরছে না!

অপরদিকে নিরীহ, সাধারণ মানুষকে মাদক মামলায় চালান দেয়া হচ্ছে। বিদেশ ফেরৎ লোক পাওয়া গেলেই পুলিশ তাদের ধরে নিয়ে মাদকের আসামি করে দেবে ভয় দেখিয়ে অর্থের বিনিময়ে দফারফা করছে! দরদামে না মিললে চালান দিয়ে দিচ্ছে!

এটি কোন একটি বিশেষ থানার চিত্র নয়, দেশব্যাপী চলছে এসব। গ্রামের চা দোকান থেকে শুরু করে অফিস আদালত সর্বত্র আছে এ নিয়ে প্রতিনিয়ত আলোচনা! যদি আইন সংশোধন করে, নতুন আইন করা যায়, কাউকে মাদকসহ গ্রেফতার করলে, যত পিস ইয়াবা কিংবা ফেন্সিডিল সহ গ্রেফতার করা হয়েছে -তার মধ্য থেকে দুই পিস রাসায়নিক পরীক্ষার জন্য পাঠিয়ে বাকি সব মাদক আসামির সাথে কোর্টে প্রেরণ করতে হবে। কোর্টেই থাকবে মাদক রাখার কক্ষ। এবং সাত দিনের মধ্যে কোর্ট প্রঙ্গনে বিচারক সাহেব তা ধংস করবেন, তাহলে মিথ্যা মামলার ব্যাপকতা কমতে বাধ্য।

কয়েক মাস ধরে জমানো মাদক ধ্বংসের দায়িত্ব পাওয়ার জন্য অনেক বড় লেনদেন হয়, আমরা কি তা জানি? কাউকে বিনা কারণে কোন ভাবেই হয়রানি করা যাবে না। পুলিশের আচরণের জন্য যেন সাধারণ মানুষ সরকারের উপর বিরক্ত না হয় তা নিশ্চিত করা উচিৎ।

হিন্দু , বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, নাস্তিক, উপজাতি ও মেথর সম্প্রদায়ের সুবিধার জন্য সাধারণ দোকানপাটে কোকাকোলা প্রাইটের মত বিয়ার ওয়াইন বিক্রি বৈধ করার সময় এসে গেছে। আর দেরী করা ঠিক হবে না, যুব সমাজ ধংস হয়ে যাচ্ছে।

একই রকম ভাবে আওয়ামী লীগ ও তার সকল অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনেও শুদ্ধি অভিযান প্রয়োজন। ছাত্রলীগ গত দশ বছরে ঝাকে ঝাকে আদর্শবান নেতা তৈরী করা উচিৎ ছিল। দেশের প্রতিটি কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের হয়ে উঠা উচিৎ ছিল বঙ্গবন্ধুর আদর্শের ধারক ও বাহক এবং দেশপ্রেমিক রাজনীতি সচেতন মানুষ। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় হচ্ছে ছাত্রলীগের নেতা কর্মীদের একটা বিশাল অংশ জানে না, বঙ্গবন্ধু দেশের জন্য কি করেছেন। দলের কর্মীদের তিনি কেমন করে ভালোবাসতেন। তিনি কত বছর জেলে ছিলেন।

তিনি জেলে থাকার পরও তার কর্মী সমর্থকেরা কিভাবে ভাষা আন্দোলন, গণ অভ্যুত্থান এবং মুক্তিযুদ্ধ সফল করেছে। এমনকি জানে না বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন কবে। ছাত্রলীগ নেতাদের দায়িত্ব হচ্ছে, কর্মী সমর্থকদের তৈরী করা, তাদের রাজনৈতিক দীক্ষাদান করা, তাদের হৃদয়ে বঙ্গবন্ধু যে নীতি আদর্শ অনুসরন করতেন তা মোমের আলোর মতো জ্বেলে দেয়া।

গত দশ বছরে তা হয়েছে বলে মনে হচ্ছে না। ছাত্রলীগের প্রতি আমাদের আবেগ হচ্ছে, কিশোর জীবনের প্রেমের মত। যা কখনো ভুলার উপায় নেই। এই প্রজন্মের ছাত্রলীগ নেতাদের বেশীর ভাগের অনুভূতি আমাদের মত তীব্র নয় বলেই আমার ধারণা। ছাত্রলীগে এখন কাউকে সদস্য প্রার্থী দেখিনা, সবাই সভাপতি কিংবা সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী! এই অদ্ভুত পরিস্থিতি আগে ছিলনা।

আওয়ামী লীগে যোগদানের নামে অনুপ্রবেশ ঘটছে সর্বত্র! অনুপ্রবেশকারীরা দেশে বিদেশে যুবলীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সহ বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনে সভাপতি/সাধারণ সম্পাদক হয়ে যাচ্ছে!

এরা পুকুর ভরাট, জমির দালালী, মাদক নিয়ন্ত্রণ, চোরাচালান, পরিবহনে চাঁদাবাজি, শালিস বিচার, কেউ বাড়ি করতে গেলে ইট বালু সাপ্লাই দেয়া ইত্যাদি করছে। সাধারণ মানুষ এতে বিরক্ত হচ্ছে। এরা অনেক শক্তিশালী এবং বিভিন্ন যায়গায় নীতি নির্ধারকও! কারা কেন এদের ঢুকিয়েছে, ঢুকাচ্ছে এবং পুনর্বাসিত করেছে, তাদের চিহ্নিত করতে হবে। এবং বিচার করতে হবে।

দলের সকল স্তরে এবং পুলিশ বাহিনীর নিচের দিকে শুদ্ধি অভিযান ভীষণ জরুরি। এবং তা এখনই করা উচিৎ। ইতিমধ্যে দেরি হয়েও গেছে। সময় গেলে সাধন হবেনা!

(ফেসবুক থেকে সংগৃহীত)

লেখক: যুব ও ক্রীড়া সম্পাদক, কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগ।

প্রজন্মনিউজ২৪/শেখ ফরিদ