জয়াকে নিয়ে চুপিচুপি মতলব এঁটেছেন কবি শ্রীজাত

প্রকাশিত: ২৫ অগাস্ট, ২০১৯ ০১:২৬:০৭

জয়াকে নিয়ে চুপিচুপি মতলব এঁটেছেন কবি শ্রীজাত

আমি তাকে চিনি পর্দার মাধ্যমে, সে আমাকে চেনে দু’মলাটের মধ্যবর্তী অঞ্চল থেকে। আর সেই চেনাটাই যে সবচাইতে জরুরি চেনা, সে-কথা বুঝতে পারি, যখন আমাদের আলাপ হয় মুখোমুখি।

দেখা অবশ্য হয়েছিল প্রথমবার, শহর ম্যানহাটন-এর এক পাঁচতারা হোটেলের ঘরোয়া জমায়েতে, দু’একখানা বাক্য ছাড়া কোনও বিনিময় হয়নি। কিন্তু এটুকু বুঝেছিলাম, জয়া আপাদমস্তক একজন শিল্পী, যে তার শিল্পের কাছে সমর্পিত।

তারপর হয় প্রিমিয়র, না হয় হাজার লোকের পার্টির ভিড়ে কুশল বিনিময় চলেছে। নিজের অনুরাগের কথা জানাতে ভুলিনি আমি, সেও, কী ভাগ্যি, আমার লেখার প্রতি তার আস্থা জাহির করেছে প্রতিবার। কিন্তু বেশ অবাক হয়েছি আমি, কেননা কাজের সূত্রে যখনই কলকাতায় এসেছে জয়া, খোঁজ নিয়েছে আমার।

ফোনে বার্তা পাঠিয়ে ডাক দিয়েছে খোশগল্পের, প্রতিবারই। অবাক হয়েছি এই কথা ভেবেই যে, আমার রোজকার বন্ধুবৃত্তে যে-মানুষটা যাতায়াত করে না, যার সঙ্গে আমার কোনও কাজের সম্পর্কও নেই, সে নিজে কীভাবে টানা এতদিন ধরে নিখাদ আড্ডার আগ্রহ ধরে রাখছে? মাঝখানে সাক্ষাতের অভাবে ঢাকা’র একুশে বইমেলা থেকে একগুচ্ছ অসামান্য বই কিনে উপহার করে পাঠিয়েও দিয়েছে আমার বাড়ি।

আজ, এই মাঝবয়সে এসে মনে হয়, বন্ধু হতে গেলে সব সময়ে প্রতিদিনকার ওঠাবসা দরকার হয় না। দূরের কোনও একটা সুতোয় টান পড়লে যে-সাঁকো আপনি নড়ে ওঠে, তারও নাম বন্ধুত্ব। তাকে এমনি দেখা যায় না। কুয়াশা দিয়ে সে ঢাকা থাকে সারাক্ষণ।

‘অমুক দিন থেকে তমুক দিন এখানে আছি, তারপর আউটডোর। একদিন সময় হবে?’ – আন্তরিক এই আমন্ত্রণ আমার ফোনে এসেওছে একাধিক সময়ে, জয়ার তরফেই। মন বারবার সাড়া দিলেও, আড্ডা দেওয়া হয়ে ওঠেনি। সে নিজে দুই বাংলার ব্যস্ততম অভিনয়শিল্পীদের একজন, আমাকেও দিনমজুরি’র ছোটাছুটি নিয়ে থাকতে হয়।

তাই আড্ডার আগ্রহ থাকলেও, তারিখ কেবলই পিছিয়ে যাচ্ছিল। শেষমেশ আজ সেটা সম্ভব হল এবং আবারও, জয়ারই তোড়জোড়ে। আমার উল্টোদিকের পাড়া যোধপুর পার্কেই তার কলকাতার আস্তানা, সেখানে সন্ধে থেকে টানা অনেকক্ষণ গল্পে মেতে থাকা গেল অবশেষে।

ছবি থেকে উপন্যাস, থিয়েটার থেকে কবিতা, স্বপ্ন থেকে বাস্তব, কথার সুতো বুনতে বুনতে আমরা তৈরি করছিলাম সময়ের শীতলপাটি, যা বিছিয়ে দেবার বড় একটা সুযোগ আজকের এই ব্যস্ত জীবনে বন্ধুদের হয় না (অবশ্য বেরনোর আগে চুপিচুপি একখানা মতলবও এঁটেছি আমরা, সে-কথা এখনই বলবার নয়)।

ফেরার সময়ে যখন টিফিন বক্স হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলল, ‘মায়ের ঈদের রান্না, তুমি আর দূর্বাদি খেও কিন্তু’ – আমি রূপোলি পর্দার এক তারকাকে ছাপিয়ে, অসামান্য গুণী এক শিল্পীকে পেরিয়ে, নিতান্ত ও নিখাদ আটপৌরে একজন বাঙালিকে দেখতে পেলাম একঝলক, আয়না-জড়ানো জীবনে যার ছায়া আজও ছেড়ে যায়নি জয়াকে।

কবীর সুমন বহু আগের একখানা গানে লিখেছিলেন, ‘দূরেও রয়েছে বন্ধু মিষ্টি হেসে /হয়তো কোথাও, হয়তো অন্য দেশে’। আছেই তো। থাকেই, চিরকাল। কিন্তু সাঁকোকে ঘিরে যে-কুয়াশা, তার বোধহয় ক্ষমতা আছে, কাঁটাতারকে ঝাপসা করে মিলিয়ে দেবার। তাই না?

লেখক: কবি

(ফেসবুক থেকে সংগৃহীত)

প্রজন্মনিউজ২৪/শেখ ফরিদ

পাঠকের মন্তব্য (০)

লগইন করুন



A PHP Error was encountered

Severity: Notice

Message: Undefined index: category

Filename: blog/details.php

Line Number: 417

Backtrace:

File: /home/projonmonews24/public_html/application/views/blog/details.php
Line: 417
Function: _error_handler

File: /home/projonmonews24/public_html/application/views/template.php
Line: 199
Function: view

File: /home/projonmonews24/public_html/application/controllers/Article.php
Line: 87
Function: view

File: /home/projonmonews24/public_html/index.php
Line: 315
Function: require_once

বিভাগের সর্বাধিক পঠিত



ব্রেকিং নিউজ