শনিবার থেকে সচল হবে বুয়েট: শিক্ষামন্ত্রী


আগামী শনিবার থেকে আবারও সচল হবে বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) এমন আশাবাদ ব্যক্ত করে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেছেন, আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা ক্লাসে ফিরবেন এবং তাদের দাবিগুলো পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়ন করা হবে। বুয়েটের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে টানা চার ঘণ্টার রুদ্ধদ্বার বৈঠক শেষে আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে বুয়েট ক্যাম্পাসে উপস্থিত সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন মন্ত্রী।

দীপু মনি বলেন, ‘আন্দোলন স্থগিতে সম্মতি জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। আগামী শনিবার থেকে তারা আন্দোলন ছেড়ে ক্লাসে ফিরবেন।’ ‘বুয়েটের সাত হলের তিনজন করে প্রতিনিধির সঙ্গে আমাদের ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। তাদের সব দাবিই যৌক্তিক। কিছু দাবি একাডেমিক কাউন্সিল (বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন) বাস্তবায়ন করতে পারবে। আবার কিছু দাবি মন্ত্রণালয়ের অধীন। সেগুলো দ্রুত আমরা বাস্তবায়নের চেষ্টা করব।’

প্রসঙ্গত, গত শনিবার থেকে ১৬ দাবি নিয়ে আন্দোলন শুরু করেন বুয়েট শিক্ষার্থীরা। দাবি আদায়ের লক্ষ্যে ক্লাস-পরীক্ষা বাদ দিয়ে তারা নেমে আসেন রাস্তায়। ভিসি ও প্রশাসনবিরোধী স্লোগানে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে বুয়েট ক্যাম্পাস।

গত বুধবার বেলা ১টায় পঞ্চম দিনের মতো আন্দোলন শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। দুপুরে বুয়েট শহীদ মিনারের সামনে বিভিন্ন বিভাগের সহস্রাধিক শিক্ষার্থী সমাবেত হন। এরপর তারা মিছিল নিয়ে স্লোগান দিতে দিতে উপাচার্য ভবনের সামনে গিয়ে অবস্থান নেন।

চলমান আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের দাবি-দাওয়া শুনতে বৃহস্পতিবার বুয়েট ক্যাম্পাসে যাওয়ার ইচ্ছা পোষণ করেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি। এজন্য বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বুয়েট ক্যাফেটেরিয়ার সামনে জড়ো হয়ে মন্ত্রীর অপেক্ষায় থাকেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। বেলা ১১টার দিকে আসার কথা থাকলেও বেলা ১টা পর্যন্ত তিনি আসেননি। শিক্ষামন্ত্রীর আসা নিয়ে ‘বিভ্রান্তি’ তৈরি হলেও বিকাল সাড়ে ৩টায় উপস্থিত হন তিনি।

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বৈঠক শেষে শিক্ষামন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, শিক্ষার্থীদের যেসব দাবি একাডেমিক কাউন্সিল বাস্তবায়ন করতে পারবে, সেগুলো আমরা লিখিতভাবে দেয়ার অনুরোধ জানিয়েছি। আমরা ভিসি মহোদয়কে অনুরোধ করব, সেগুলো দ্রুত বাস্তবায়ন করতে। যেসব দাবি মন্ত্রণালয়ের অধীন অর্থাৎ খেলার মাঠ, ভবন উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ- সেগুলো আমরা দ্রুতগতিতে করে দেয়ার চেষ্টা করব।

‘পাশাপাশি ফলাফল, র‌্যাংকিং, বৃক্ষ রোপণ- যেগুলো বুয়েট প্রশাসনের অধীন সেগুলোও দ্রুত মেনে নেয়ার অনুরোধ জানিয়েছি। ভিসি মহোদয় আমাদের আশ্বাস দিয়েছেন। আমরা আশা করি, দ্রুত সময়ের মধ্যে এসব দাবি বাস্তবায়ন হবে।’

দীপু মনি বলেন, ‘আমরা শিক্ষার্থীদের তাদের সব দাবি লিখিতভাবে দিতে বলেছি। তারা শুক্রবার সেগুলো লিখিতভাবে দেবেন বলে জানিয়েছেন।’

‘শিক্ষার্থীরা এ সময় তাদের দাবিগুলো বুয়েটের নোটিশ বোর্ডে টাঙানোর দাবি জানান। আমরা তাদের প্রস্তাব মেনে নিয়েছি। সেগুলো নোটিশ বোর্ডে টাঙিয়ে দেয়া হবে।’ তিনি বলেন, আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের লিখিত দাবিগুলো পাওয়ার পর কাল (শুক্রবার) থেকে সেগুলো পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়নের চেষ্টা করা হবে। ‘বুয়েট আমাদের সকলের গর্বের একটি প্রতিষ্ঠান। যেহেতু সব দাবি মেনে নিয়েছি সেহেতু আমরা আশা করি শিক্ষার্থীরা শনিবার থেকে আবারও ক্লাসে ফিরবেন এবং সচল হবে বুয়েটের স্বাভাবিক পরিবেশ’- আশাবাদ ব্যক্ত করেন মন্ত্রী।

এর আগে বিকেল সাড়ে ৩টায় শিক্ষামন্ত্রী বুয়েট ক্যাম্পাসে উপস্থিত হয়ে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বলেন, বুয়েট আমাদের গর্বের একটি প্রতিষ্ঠান। এ প্রতিষ্ঠান নিয়ে আমরা সবাই গর্ব করি। যারা এখানে পড়াশোনা করেন তাদের অভিভাবকরাও সন্তানদের জন্য গর্ববোধ করেন। শিক্ষামন্ত্রী বলেন, শিক্ষার্থীদের যেসব দাবি তার সবগুলোই যৌক্তিক। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এসব বিষয় নিয়ে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন হয়। তবে উপাচার্য চাইলেই শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে তার সমাধান করতে পারতেন।

দীপু মনি উপস্থিত শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে আরও বলেন, শিক্ষার্থী ও উপাচার্যের সঙ্গে একধরনের ফারাক তৈরি হয়েছে। এ কারণে কয়েক দিন ধরে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করছেন। আমরা আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সব সমস্যার সমাধান করব। মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক শেষে শিক্ষার্থীরা বলেন, বৈঠক ফলপ্রসূ হয়েছে। আমরা পজেটিভ।

বৈঠকে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি, শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, বুয়েট উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. সাইফুল ইসলাম, শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের (ইইডি) প্রধান প্রকৌশলী দেওয়ান মোহাম্মদ হামজালা, ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক, বুয়েট ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।