৫২ পণ্য সম্পর্কে জানেন না ক্রেতা-বিক্রেতারা!


বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশনের (বিএসটিআই) পরীক্ষায় প্রমাণিত নিম্নমানের ও ভেজাল ৫২টি পণ্য সম্পর্কে এখনো জানেন না ক্রেতা-বিক্রেতারা। যদিও হাইকোর্টের এক আদেশে এসব পণ্য বাতিল ঘোষণা করে সোমবার (১৩) থেকে আগামী ১০ দিনের মধ্যে বাজার থেকে প্রত্যাহার করে নিতে বলা হয়েছে।

কিন্তু নিষিদ্ধ এই ৫২টি পণ্য সম্পর্কে ক্রেতা ও বিক্রেতারা ওয়াকিবহাল না হওয়ায় রাজধানীর বাজারগুলোতে দিব্যি পাওয়া যাচ্ছে। মানহীন এসব পণ্য আগের মতোই কেনাবেচা করছেন ক্রেতা-বিক্রেতারা।

সোমবার রাজধানীর মহাখালী, বাড্ডা, শাহজাদপুরের কাঁচাবাজার ঘুরে ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে। বাজারগুলোতে বাতিল হওয়া ৫২টি পণ্যই পাওয়া যাচ্ছে।

পণ্যগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- ড্যানিশের হলুদের গুঁড়া, প্রাণের হলুদের গুঁড়া, তানভির ফুডের ফ্রেশের হলুদের গুঁড়া, এসিআইয়ের ধনিয়ার গুঁড়া, প্রাণের কারি পাউডার, ড্যানিশের কারি পাউডার, সিটি ওয়েলের তীর সরিষার তেল, গ্রিন ব্লিচিংয়ের জিবি সরিষার তেল, শবনমের পুষ্টি সরিষার তেল, বাংলাদেশ এডিবল ওয়েলের রূপচাঁদা সরিষার তেল ও প্রাণের লাচ্ছা সেমাই ও মোল্লা সল্টের আয়োডিনযুক্ত লবণ।

এ বিষয়ে বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের খবরে জানতে পেরেছেন- আদালত ৫২টি পণ্য বাতিল ঘোষণা করেছেন। সেগুলো বাজার থেকে প্রত্যাহারের কথাও তারা জানতে পেরেছেন। তবে কোন কোম্পানি এবং পণ্যগুলো কী কী, এ সম্পর্কে তাদের কোনো ধারণা নেই। তাই পণ্যগুলোর বিষয়ে এখনো তারা কোনো ব্যবস্থা নিতে পারছেন না। এছাড়া কোম্পানি ও সরকারের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে তাদের কাছে কোনো তথ্যও আসেনি।

মহাখালী কাঁচাবাজারের লক্ষ্মীপুর জেনারেল স্টোরের মালিক কাশি নাথ ঘোষ বলেন, কোন ৫২টি পণ্য আদালত বাতিল করছেন, তা আমাদের কাছে এখনো পরিষ্কার না। তাই সব পণ্যই আমরা এখনো বেচাকেনা করছি। তবে বাতিল পণ্যগুলোর সুনির্দিষ্ট তালিকা পাওয়ার পর কোম্পানিকে এগুলো ফিরিয়ে দেব। কোম্পানি এসব পণ্য আমাদের কাছ থেকে ফিরিয়ে নিতে বাধ্য।

তবে আরও কয়েক জন দোকানির সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বাতিল এই ৫২টি পণ্যের মধ্যে কয়েকটি সম্পর্কে তারা জানতে পেরেছেন। এগুলো ফিরিয়ে নিতে কোম্পানিকে ইতোমধ্যে তারা বলেছেন।

বাড্ডার শাহজাদপুরের কাঁচাবাজারের মল্লিকা জেনারেল স্টোরের দোকানি হাফিজ আহমেদ বলেন, আমি ইতোমধ্যে প্রাণের হলুদের গুঁড়া মসলা, কারি পাউডার, লাচ্ছা সেমাই, রূপচাঁদা সরিষার তেল ও মোল্লা সল্টের আয়োডিনযুক্ত লবণ বিক্রি করা বন্ধ করে দিয়েছি। ক্রেতারাও আর এসব পণ্য কিনতে চাচ্ছেন না। কোম্পানিকেও বলেছি এসব পণ্য ফিরিয়ে নিতে।

অন্যদিকে কয়েকজন ক্রেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তারাও দোকানিদের মতো খবরে দেখেছেন ৫২টি পণ্য বাতিল ঘোষণার কথা। তবে সবগুলো পণ্য ও কোম্পানির নাম এখনো না জানতে পারায় তারা কিছুটা দ্বিধায় আছেন। তবে এ বিষয়ে দ্রুত জানার চেষ্টা করছেন। নামগুলো জানার পর তারা আর এসব পণ্য কিনবেন না।

মহাখালী কাঁচাবাজারে বাজার করতে আসা ক্রেতা মো. জয়নাল বলেন, বাতিল হওয়া পণ্যগুলোর নাম এখনো জানি না। তবে শুনেছি প্রাণ ও ড্যানিশের কয়েকটি পণ্য বাতিল হয়েছে। তবে সোমবার বাতিল হওয়া সবগুলো পণ্যের নাম জানব। জানার পর এসব ভেজাল ও নিম্নমানের পণ্য কেনা থেকে বিরত থাকব।

এদিকে, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর ইতোমধ্যে বাতিল হওয়া পণ্য সম্পর্কে ক্রেতা ও বিক্রেতাদের জানাতে প্রচারণা চালাচ্ছে বাজারে বাজারে গিয়ে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পণ্যগুলো প্রত্যাহার না করা হলে কোম্পানি ও দোকানিদের অর্থদণ্ডের সম্মুখীন হতে হবে বলে জানিয়েছে অধিদফতর।

অধিদফতরের ঢাকা জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আব্দুল জব্বার মণ্ডল বলেন, বাতিল হওয়া এই ৫২টি পণ্য নিয়ে আমরা সোমবারও বৈঠক করেছি। আমরা আগামী কয়েকদিন লাগাতার এ বিষয়ে ক্রেতা ও বিক্রেতাদের জানাব। আর সময় পার হয়ে গেলে বাজারে এসব পণ্য পাওয়া মাত্রই জরিমানা করা হবে।