একাত্তরের আল বদর নেতা নিজামী ও মুজাহিদ দুজনই বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডে দোষি। গত বছরের নভেম্বরে মুজাহিদের পর গত বুধবার নিজামীকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে আদালতের দণ্ড কার্যকর করা হয়।
মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী দল জামায়াত ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর বাংলাদেশের রাজনীতিতে পুনর্বাসিত হয়। দলটির আমির নিজামী ও সেক্রেটারি জেনারেল মুজাহিদ ২০০১ সালের খালেদা জিয়ার সরকারে মন্ত্রী ছিলেন।
নিজামীকে প্রথম কৃষিমন্ত্রী করা হয়েছিল, পরে শিল্প মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে পাঠানো হয়েছিল তাকে। মুজাহিদ ছিলেন সমাজকল্যাণমন্ত্রী।
দুজনের নামই মন্ত্রণালয়গুলোর ওয়েবসাইটে সাবেক মন্ত্রীদের তালিকায় রয়েছে। এর মধ্যে সমাজকল্যাণে মুজাহিদের নামের সঙ্গে যুদ্ধাপরাধের দণ্ডের উল্লেখ রয়েছে।
জাপানে অধ্যয়নরত তানভীর আহমেদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এদের নামে কেন ওয়েবসাইটে থাকছে, তা আমার বোধগম্য নয়। জাতির সূর্য সন্তানদের ত্যাগের এই বাংলাদেশে তাদের নাম থাকতে পারে না। এটা আমাদের জন্য লজ্জাকর।”
বাংলাদেশের সংবিধানের ৬৬ ধারার ২ (ঘ), (ঙ) উপধারায় বলা হয়েছে, যদি কোনো ব্যক্তি ১৯৭২ এর বিশেষ ট্রাইব্যুনাল কিংবা আদালত কর্তৃক মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত হয়ে থাকে সেই ক্ষেত্রে তার সাংসদপদ বাতিল হয়ে যায়।
৩ নম্বর উপধারায় বলা হয়েছে, যদি কেউ এই ধরনের অভিযোগে অভিযুক্ত হয় সেই ক্ষেত্রে সে যদি রাষ্ট্রপ্রতি, প্রধানমন্ত্রী, স্পিকার, ডেপুটি স্পিকার, একজন মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী হোন তারা প্রজাতন্ত্রের কোনো সুযোগ-সুবিধা ভোগ করতে পারবেন না।
.
সংবিধানের এই অনুচ্ছেদের কথা উল্লেখ করে সায়তামা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফয়জুল সিদ্দিক বলেন, “ওদের গাড়িতে জাতীয় পতাকা দেওয়ায় আমরা যে কলঙ্ক পেয়েছি, তা ভবিষ্যতে আর চলতে দেয়া যায় না।
“তাদের আর বাংলাদেশের মন্ত্রী পদের মর্যাদা থাকতে পারে না। মন্ত্রণালয় ও জাতীয় সংসদে তাদের নাম রাখা মানে রাজাকারদের মনে রাখা। আমরা চাই না এই জাতি আর এই কলঙ্কিত মানুষদের মনে রাখুক।”
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায়ের পর্যবেক্ষণে যুদ্ধাপরাধীদের মন্ত্রী হওয়ার বিষয়ে বলা হয়ছিল, “তৎকালীন সরকার কর্তৃক এই অভিযুক্তকে মন্ত্রী হিসাবে নিয়োগ দেওয়া একটা বড় ধরনের ব্লান্ডার ছিল। পাশাপাশি এটা ৩০ লাখ শহীদ ও সম্ভ্রম হারানো দুই লাখ নারীর প্রতি ছিল সুস্পষ্ট চপেটাঘাত। এই লজ্জাজনক ঘটনা পুরো জাতির জন্য অবমাননাকর।”
ওসাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক বাঙালি শিক্ষার্থী বলেন, নিজামীর ফাঁসির পর বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদেশি বন্ধুদের সঙ্গে আলোচনা করতে গিয়ে বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হয়েছিল।
“তারা জানতে চেয়েছে, যারা লাখ লাখ মানুষকে হত্যা করতে উৎসাহ দিয়েছিল, তারা কীভাবে তোমাদের দেশে মন্ত্রী থাকতে পারে?”
মালয়েশিয়ার গবেষণারত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শামীম হোসেন টেলিফোনে বলেন, “আমরাও বিদেশিদের কাছে এই বিষয়টা নিয়ে সমালোচিত হচ্ছি।”