আন্দোলনের ট্রাম্পকার্ড নির্বাচনের আগ দিয়েই চালতে চায় বিএনপি

প্রকাশিত: ১৮ নভেম্বর, ২০১৬ ০২:০৪:১৫

আন্দোলনের ট্রাম্পকার্ড নির্বাচনের আগ দিয়েই চালতে চায় বিএনপি

সংলাপে সমঝোতার পথ খোলা রেখেই দাবি আদায়ে ফের রাজপথের আন্দোলনে যাওয়ার সাংগঠনিকভাবে প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি। তাই আপাতত নির্বাচন নিয়ে কোনো ভাবনা নেই দলটির। আওয়ামীলীগ যে প্রক্রিয়ায় নির্বাচন করতে চাচ্ছে, তাতে নিজেদের জয় নিশ্চিত করা ছাড়া অন্য কিছু মাথায় নেই বলেই বিএনপির ধারণা। যা বিএনপির কাছে এক প্রকার স্পষ্টই। ফলে কিছু দিন আগ পর্যন্ত বিএনপির মধ্যে নির্বাচনী প্রস্তুতির আবহাওয়া দেখা গেলেও এখন আর সে রকম কোনো লক্ষণ নেই বলেই মনে হচ্ছে। এমনকি আসন্ন জেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশ নেয়ার ব্যাপারেও দ্বিধাদ্বন্দ্ব রয়েছে দলটির হাইকমান্ড পর্যায়ে।

গণমাধ্যমে প্রকাশিত কিছু খবরেও জানা গেছে, সরকার যেহেতু কোনোভাবেই নির্দলীয় সরকারের দাবি মানছে না আবার সংলাপ হওয়ার সম্ভাবনাও ক্ষীণ হয়ে আসছে, তাই এই মুহূর্তে বিএনপির সামনে পথ একটাই- আর তা হলো রাজপথের আন্দোলন। অপরদিকে বিএনপিও মনে করে, আন্দোলনের মাধ্যমেই সরকারের পতন ঘটিয়ে দাবি আদায় সম্ভব। এ লক্ষ্য বাস্তবায়নেই বিএনপি সাংগঠনিকভাবে নিজেদের আন্দোলন উপযুক্ত করতে ‘ধীরে চলো’ নীতি অনুসরণ করে চলেছে।

সম্প্রতি সাত নভেম্বরের অনুমতি সাপেক্ষ্য জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবশ পালন করার প্রবনতাও প্রমান করে সরকারের সাথে এইমহুর্তে কোন বিরোধে যাচ্ছেনা বিএনপি। হয়তো আন্দোলনের ট্রাম্পকার্ডটা নির্বাচনের আগ দিয়েই চালতে চায় তারা। বিগত সময়ে ঘোষিত নানা কর্মসূচী পালনে সফলতার পরিবেশ যতটা উন্মক্ত ছিলো বর্তমানে ততটা নেই । আওয়ামীলীগের একাধিক নেতা নব মনোনিত ওবায়দুল কাদেরের উপস্থিতে এক সমাবেশে বিএনপির সমাবেশের প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিলে অনেকটা চুপষে যায় বিএনপি। সরে আসে সোহরাওয়ার্দীতে সমাবেশ করার সিদ্ধান্ত থেকে। প্রতিবাদে সোমবার ঘোষনা করা হয় সারাদেশে বিক্ষোভ সমাবেশের।

আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্যে বিএনপি নিশ্চিত হয়েছে, আওয়ামীলীগ যে কোনো মূল্যে আবারও ক্ষমতায় আসতে চায়। আর নিজেদের জয় নিশ্চিত হয় দলীয় সরকারের অধীনে এরকম একটি নির্বাচনী ছক ইতোমধ্যে তৈরি করে রেখেছে বর্তমান ক্ষমতাসীনরা। সেক্ষেত্রে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় রেখে বিশেষত শেখ হাসিনার অধীনে অনুষ্ঠিত কোনো নির্বাচনেই বিএনপির ক্ষমতায় আসার পথ তৈরি হবে না।

সম্প্রতি এক প্রতিবাদ সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস ক্ষমতাসীনদের প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, ‘বিএনপিকে বাদ দিয়ে দেশে কিছু করা আওয়ামী লীগের সাহসে কুলাবে না।’ যদিও নানা বিতর্ক থাকা সত্ত্বেও বিএনপিকে ছাড়াই সর্বশেষ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে।

একদিকে শেখ হাসিনার দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না বিএনপি, অন্যদিকে এইবার নির্বাচনে অংশ না নিলে তাদের রাজনৈতিক নিবন্ধন বাতিল হয়ে যাওয়ার শঙ্কা। নির্বাচন কমিশনের নির্বাচনী ধারায় উল্লেখ রয়েছে কোনো রাজনৈতিক দল পরপর দু’বার জাতীয় নির্বাচনে অংশ না নিলে তারা রাজনৈতিক দল নয়, সংগঠনে পরিণত হবে। আর যেহেতু বিএনপি ২০১৪ সালের নির্বাচনে অংশ নেয়নি তাই এবার অংশ নেয়াটা অনেকটাই ‘ডু অর ডাই’ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে আওয়ামীলীগ যদি আবারও তাদের অধীনে নির্বাচনের চেষ্টা করে তাহলে বিএনপির পক্ষ থেকে এবার কিছুটা ভিন্ন কৌশলী প্রতিরোধের মুখে পড়তে হতে পারে! এমনটাও মনে করছে অনেকে।

সম্প্রতি বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও বলেছেন, ‘বিএনপির পক্ষ থেকে বার বার সংলাপের আহ্বান বিএনপির দুর্বলতা নয়। বিএনপি সব সময়েই শান্তিপূর্ণ সমাধানের পক্ষে আর আওয়ামীলীগ গণতন্ত্রের ভাষা বুঝতে চায় না। তাই সরকার সমঝোতায় না আসলে বিএনপি হয়তোবা সংলাপের আশায় বসে থাকবে না। বরং আন্দোলনের মাধ্যমেই সব সমস্যার সমাধান করবে।’

তবে আন্দােলনের প্রশ্নে বিএনপির বর্তমান ভূমিকা কিছুটা হাস্যরসে পরিনত হয়েছে। তারা যেকােন কর্মসূচী ঘোষনার পর সিনিয়র নেতাদের মাঠে না থাকার বিষয়টি এখন সিলসিলায় পরিনত হয়েছে। ফলে মাঠপর্যায়ের নেতাকর্মীদের মাঝে কেন্দ্রীয় ও সিনিয়র নেতাদের নিয়ে ব্যাপক ক্ষোভও বিরাজ করছে। তার প্রমান কিছুদিন আগে ঢাকায় কেন্দ্রীয় কমিটির কাউন্সিলে দেখা গেছে। সেখানে সারাদেশ থেকে আসা কাউন্সিলরদের ঢাকায় বসবাসরত নেতাদের প্রকাশ্যে গালাগাল করতে দেখা গেছে। বলতে শোনা গেছে ৪ জানুয়ারীর নিবার্চনের পর টানা তিনমাসের অবরোধে মফস্সলে যেভাবে তারা পাখি উড়তে দেয়নি অনূরুপ ঢাকাকে অবরুদ্ধ করতে পারলে হয়তো বর্তমান সরকারও পরে যেতো। 

পাঠকের মন্তব্য (০)

লগইন করুন



আরো সংবাদ














ব্রেকিং নিউজ