সাপ পরিবেশের জন্য কতটা উপকারী প্রাণী?


হঠাৎ সাপ দেখতে আঁতকে ওঠার প্রবণতা মানুষের সহজাত। এভাবে আঁতকে ওঠে মানুষরা একসময় হিংস্র হয়ে যান। তারপর লাঠি দিয়ে সাপটিকে হত্যা না করা পর্যন্ত শান্তি খুঁজে পান না কিছু মানুষ। অথচ পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় সাপের গুরুত্ব অপরসীম। এই বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যাটি থেকে যায় এক শ্রেণির মানুষ কিছুতেই মানতে চান না। তাদের ধারণা সাপ দেখলেই পিটিয়ে মারতে হবে।

বন্যপ্রাণী গবেষক ও আলোকচিত্রী আদনান আজাদ আসিফ দীর্ঘদিন থেকে সরীসৃপ প্রাণী, সাপ, কুমির প্রভৃতি প্রাণীর উপর গবেষণা করে চলেছেন। ছবিতে দেখা যাচ্ছে ফনা তুলে থাকা একটি বিষধর গোখরা সাপের মুখোমুখি তিনি।

কীভাবে এটি সম্ভব? এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, এটি খৈয়া-গোখরা। এই সাপটিকে আমি রেসকিউ (উদ্ধার) করে বন্যপরিবেশে অবমুক্ত করি। স্থানীয় মানুষকে সাপ সম্পর্কে ভুল তাদের ধারণাগুলোকে ভাঙাতে এই সাপটির সঙ্গে আমি কিছুটা সময় কাটাই।

ঘটনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, একটা বাড়ির মধ্যে এ সাপটিকে পাওয়া গিয়েছিলো। তখন আমি নওগাঁ ছিলাম। একটি বছর খানেক আগের ঘটনা। এই সাপটিকে মারতে মানুষ লাঠি-দা নিয়ে ছুটে যাচ্ছিলো। ঘটনাটি শুনে আমি তখন তাৎক্ষণাৎ ছুটে যাই এবং সাপটিকে ওই সংকটময় পরিস্থিতি থেকে উদ্ধার করি। এ ধরনের অনেক সাপকে আমি উদ্ধার করে প্রকৃতিতে অবমুক্ত করেছি।

আদনান আজাদ আসিফ আরও বলেন, তখন আমি স্থানীয় মানুষদের বলি যে, সাপকে বিরক্ত না করলে সাপ কখনোই মানুষকে কামড় বা ছোবল দেবে না। স্থানীয় জনগণ তখন আমার এ কথাগুলো বিশ্বাস করেনি। তখন আমি মনে মনে সিদ্ধান্ত নেই- এই খৈয়া-গোখরার সঙ্গে কিছুটা সময় কাটবো। সাপটিকে মাটিতে ছেড়ে দিয়ে তার পাশাপাশি থেকে তার সঙ্গে কিছুটা সময় কাটাই। তাদের বুঝাতে সক্ষম হই যে, সাপের জন্য আমি ভয়ের কিছু না বলেই যে আমাকে কিছু করছে না। এই ঘটনায় স্থানীয়রা অবাক হয়ে যায়। তারপর তাদের ভুল ভাঙিয়ে আমি সাপটিকে জনবসতি থেকে দূরের একটি ঝোপের মধ্যে ছেড়ে দেই।

আমাদের দেশে ৯৫ শতাংশ সাপেদের বিষ নেই। ওরা নির্বিষ বা বিষমুক্ত সাপ। বাকি মাত্র পাঁচ ভাগ সাপের যদিও বা বিষ রয়েছে তারা কখনোই তীব্র ভয় বা আঘাত না পেলে ছোবল দেয় না। পরিবেশের জন্য সাপ অত্যন্ত উপকারী প্রাণী। এই বিষয়ে আমাদের ব্যাপক সচেতনতা তৈরি করতে হবে বলে জানান আসিফ আদনান আজাদ।

প্রজন্মনিউজ২৪/দেলাওয়ার হোসাইন।