শ্রমিকদের ক্ষোভ গার্মেন্টস শিল্পের জন্য শুভকর নয়:খাইরুল মামুন মিন্টু

প্রকাশিত: ০৮ অক্টোবর, ২০১৮ ০১:১৬:১৮ || পরিবর্তিত: ০৮ অক্টোবর, ২০১৮ ০১:১৬:১৮

শ্রমিকদের ক্ষোভ গার্মেন্টস শিল্পের জন্য শুভকর নয়:খাইরুল মামুন মিন্টু

তাওসিফ মাইমুন: গার্মেন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক খাইরুল মামুন মিন্টু বলেছেন যে, বর্তমানে চাউল, আটা, ডাল, তেল, বাড়ী ভাড়া, যাতায়াত, শিক্ষা, চিকিৎসা সহ সকল কিছুর দাম যেভাবে বেড়েছে তাতে চার জনের একটা শ্রমিক পরিবার আট হাজার টাকায় কোন ভাবেই খেয়ে পরে বেঁচে থাকা সম্ভব নয়। কোন রকম খেয়ে পরে বেঁচে থাকার জন্য গার্মেন্ট শ্রমিকেরা নুন্যতম মজুরী ১৬,০০০ টাকা করার দাবী জানিয়ে আসছিল। শ্রমিকদের দাবী উপেক্ষা করে গত ১৪ সেপ্টেম্বর’২০১৮ গার্মেন্ট শ্রমিকদের নুন্যতম মজুরী বেসিক ৪,১০০ টাকা বাড়ী ভাড়া, যাতায়াত ভাড়া, চিকিৎসা ভাতা, খাদ্য ভাতা সহ নুন্যতম মজুরী ৮,০০০ টাকা ঘোষণা করেছেন।

এর আগে ২০০৬ সালে শ্রমিকদের দাবী ছিল নুন্যতম মজুরী ৩,০০০ টাকা, ২০১০ সালে শ্রমিকদের দাবী ছিল নুন্যতম মজুরী ৫,০০০ টাকা, ২০১৩ সালে শ্রমিকদের দাবী ছিল নুন্যতম মজুরী ৮,০০০ টাকা। ২০০৬ সালে গার্মেন্ট শ্রমিকদের নুন্যতম মজুরী ১,৬৬২ টাকা ৫০ পয়সা, ২০১০ সালে গার্মেন্ট শ্রমিকদের নুন্যতম মজুরী ৩,০০০ টাকা, ২০১৩ সালে গার্মেন্ট শ্রমিকদের নুন্যতম মজুরী ৫,৩০০ টাকা ঘোষণা করার পর প্রতীবাদে গার্মেন্ট শ্রমিকরা কারখানা থেকে রাজপথে বেরিয়ে এসেছিল। পরবর্তিতে সরকার পুঃন বিবেচনা করে গ্রেড গুলোতে কিছু কিছু পরিবর্তন করে।

কিন্তু এবারের আন্দোলনের ধারা একটু ভিন্ন্য, নুন্যতম মজুরী ৮,০০০ টাকা ঘোষণা করা হয়েছে ৭নং গ্রেডে। এই গ্রেডে মোট শ্রমিকের ৫% আর ৯৫% শ্রমিক ৩/৪/৫/৬ এই গ্রেড গুলােতে মজুরী ঘোষণা করাহয়নি, যার কারণে কারখানা ভিত্তিক শ্রমিকদের আন্দোলন। সেইভাবে শ্রমিকদের অংশগ্রহণ নেই। বাংলাদেশে গার্মেন্টস কারখানাতে ৬৬১  টি বেসিক ইউনিয়ন এবং ৭২ টি ফেডারেশন আছে। বেশীর ভাগ ইউনিয়ন ও ফেডারেশন কারখানার মালিক ও সরকার অনুগত হওয়ার কারণে শ্রমিকরা বেতন বৃদ্ধির দাবী তুললেও দাবী আদায় না করেই শ্রমিকদের ঘরে ফিরতে হয়।

এবারের গার্মেন্ট শ্রমিকদের মজুরী বৃদ্ধির আন্দোলনের দিকে তাকালেই তার প্রমান পাওয়া যাবে। গার্মেন্ট শ্রমিকরা ২০১৬ সাল থেকে নুন্যতম মজুরী ১৬,০০০ টাকার দাবীতে আন্দোলন করে আসছে। এই আন্দোলন করতে গিয়ে হাজার হাজার শ্রমিক ছাঁটাই-নির্যাতন, মামলা-হামলার শিকার হয়েছে। বিপ্লবী ধারার শ্রমিক সংগঠন গুল ছাড়া কোন শ্রমিক সংগঠন শ্রমিকদের পাশে দাঁড়ায়নি।

সে সময় যেসব শ্রমিক নেতা গ্রেফতার হয়েছিলেন দু-এক জন বাদে তারা আসলে শ্রমিকদের আন্দোলনের বিরুদ্ধে ছিলেন। কেও কেও পুলিশকে ধমকদিয়ে বলেছিলেন, বামপন্থি শ্রমিক সংগঠনগুলকে কেন সভা-সমাবেশ করার অনুমতি দিয়েছিল। আজকে শিল্পাঞ্চলে শ্রমিকদের যেভাবে মুখবন্ধ করে অবরুদ্ধ পরিস্থিতি করে রাখা হয়েছে।  তার জন্য কিছু শ্রমিক সংগঠন দায়ী। ২০১৮ সালে ১৪ জানুয়ারী নুন্যতম মজুরী বোর্ড  গঠনের পর মোটা মুটি প্রায় সব শ্রমিক সংগঠন ১৬,০০০ টাকা আদায় না  হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন।

কিন্তু গত ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮ তারিখ গার্মেন্ট শ্রমিকদের নুন্যতম মজুরী বেসিক ৪,১০০ টাকা,বাড়ী ভাড়া, যাতায়াত ভাড়া, চিকিৎসা ভাতা, খাদ্য ভাতা সহ নুন্যতম মজুরী ৮,০০০ টাকা ঘোষণা করার পর কারখানার মালিক ও সরকার অনুগত শ্রমিক সংগঠন গুল সরকারকে ধন্যবাদ দিয়ে নুন্যতম মজুরী ৮,০০০ টাকা শ্রমিকদের মেনে নেওয়ার কথা বলে তারা আন্দোলন থেকে সরে এসেছেন। বামপন্থি শ্রমিক সংগঠন গুলো নিম্নতম মজুরী ১৬,০০০টাকার দাবিতে এখনো ঢাকা প্রেসক্লাব কেন্দ্রীক আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। ৬৬১টি কারখানাতে বেসিক ইউনিয়ন যারমধ্যে বেসিরভাগ কারখানা বন্ধ।

আর যেকয়টি কারখানা চালু আছে তাদের ট্রেড ইউনিয়নের যেবার্গেনিং সেই ক্ষমতা তাদের নেই। বামপন্থি শ্রমিক সংগঠনগুলোর গার্মেন্ট কারখানা গুলতে তেমন একটা বেসিক ইউনিয়ন নেই, ইউনিয়ন করার উদ্যোগ নিলেও সরকার এবং গার্মেন্ট মালিকরা মিলে সেই ইউনিয়নের রেজিষ্ট্রেশন দেন না। বামপন্থি  শ্রমিক সংগঠন গুলর কারখানা ভিত্তিক কমিটি, শিল্পাঞ্চলে ইউনিটি কমিটি, আঞ্চলিক কমিটির মাধ্যমে শ্রমিকদের অধিকার আদায়ে আন্দোলন গড়ে তোলে।

২০১৬ সালের পর থেকে ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশের কঠোর ভূমিকার কারণে বামপন্থি শ্রমিকসংগঠন গুলো কারখানা ভিত্তিক কমিটির কার্যক্রম চালাতে পারেনি। যার কারণে শ্রমিকরা কারখানা ভিত্তিক সংগঠিত হতে পারেনি বলেই গার্মেন্ট শ্রমিকরা নুন্যতম মজুরী  বেসিক ৪,১০০ টাকা, বাড়ী ভাড়া, যাতায়াত ভাড়া, চিকিৎসা ভাতা, খাদ্য ভাতা সহ নুন্যতম মজুরী ৮,০০০ টাকা ঘোষণা করার পর মেনে না নিলেও তারা আন্দোলনে আসতে পারছেনা।

কিন্তু শ্রমিকদের মধ্যো যে ক্ষোভ জন্ম নিচ্ছে তা শিল্পের জন্য শুভকরনয়। তাই গার্মেন্ট শিল্পে শ্রমিকদের ক্ষোভ বিস্ফোরণ হওয়ার আগেই গার্মেন্ট শ্রমিকদের জন্য ঘোষিত নুন্যতম মজুরীর  পুনঃ বিবেচনা করে মজুরী ঘোষণা করা হোক।

প্রজন্মনিউজ২৪/রাকিব

পাঠকের মন্তব্য (০)

লগইন করুন



A PHP Error was encountered

Severity: Notice

Message: Undefined index: category

Filename: blog/details.php

Line Number: 417

Backtrace:

File: /home/projonmonews24/public_html/application/views/blog/details.php
Line: 417
Function: _error_handler

File: /home/projonmonews24/public_html/application/views/template.php
Line: 199
Function: view

File: /home/projonmonews24/public_html/application/controllers/Article.php
Line: 87
Function: view

File: /home/projonmonews24/public_html/index.php
Line: 315
Function: require_once

বিভাগের সর্বাধিক পঠিত



ব্রেকিং নিউজ