পানি দূষণের ক্ষতিকর প্রভাব


দৈনিন্দন জীবনে বেঁচে থাকার প্রয়োজনে মানব জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বর্পূন এবং অপরিহার্য উপাদান হচ্ছে পানি। পানি ছাড়া কোন প্রাণী বেঁচে থাকতে পারে না।

আমাদের জীবনের প্রায় প্রতিটি কাজে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে পানির ভূমিকা বিদ্যমান। কিন্তু এই পানি যখন দূষিত হয় তখন তা হয়ে ওঠে বিষ পানের সমতূল্য। এই দূষিত পানি বয়ে আনে বিভিন্ন  রকম দূরারোগ্য ব্যাধি এবং অনেক সময় এর শেষ পরিণতি দাঁড়ায় মৃত্যু।

আমাদের জীবনের এই অত্যাবশ্যকীয় উপাদানটি প্রতিনিয়ত নানাভাবে দূষিত হচ্ছে।প্রতিদিন আমাদের অসংখ্য শিল্পকারখানার অপ্রয়োজনীয় বজ্র্য ফেলা হচ্ছে নদীতে,আর এই বিপুল পরিমান ব্রজ্য পানিতে নিক্ষেপের কারনে আমাদের নদী-নালার পানি মারাত্বকভাবে দূষিত হচ্ছে।

বিভিন্ন শহরের ড্রেনের লিংক রয়েছে আমাদের নদী গুলোর সাথে। আর এসব ড্রেন দিয়ে প্রতিদিন শহর অঞ্চলের বিভিন্ন হাসপাতালের এবং অসংখ্য টয়লেটের মানব বজ্র্য নদীতে গিয়ে পড়ছে।

যার ফলে পানি দূষন অতিমাত্রায় বেড়ে যাচ্ছে।বিভিন্ন প্রকার গৃহপালিত পশু গরু,মহিষ,ছাগল ইত্যাদি নদীর পানিতে ধোয়ানোর ফলে পানির দূষন ঘটছে। জমিতে অধিক ফসল উৎপাদনের জন্য এবং ক্ষতিকর পোকা দমনের জন্য বিভিন্ন প্রকার বিষাক্ত কীটনাশক এবং সার ব্যাবহার করা হচ্ছে। এসব্ বিষাক্ত কীটনাশক এবং সার বৃষ্টির পানিতে ধুয়ে নদী-নালায় গিয়ে মিলিত হচ্ছে। যার ফলে পানি দূষণ ঘটছে।

বিভিন্ন নদীতে তেলবাহী ট্যাংকার,সিমেন্ট ভর্তি জাহাজ, বিষাক্ত রাসায়নিক দ্রব্য পরিবহনকারী  বড় বড় লাইটার জাহাজ প্রতিনিয়ত পানিতে ডুবছে। এবং এসব জাহাজে থাকা তেল এবং বিষাক্ত রাসায়নিক দ্রব্য পানিতে মিশে পানি বিষাক্ত হয়ে ওঠে।  যার ফলে অসংখ্য মাছ মারা যায় এবং এ কারণে অনেক প্রজাতির মাছ বিলুপ্তির পথে।

বিভিন্ন নদী-নালা পুকুর ইত্যাদির উপরে অবৈধভাবে বিভিন্ন স্থাপনা গড়ে তোলার ফলে পানি দূষণ ঘটছে। হাওড়,বাওড় বিল নদী ইত্যাদিতে দুর্বৃত্তরা রাতের আধারে বিষ প্রয়োগে মাছ নিধন করছে যার ফলে পানি দূষন ঘটছে।

ভারত থেকে বাংলাদেশে বহমান বিভিন্ন নদীর মুখে বড় বড় বাঁধ নির্মান করা হয়েছে যার ফলে পানির স্বাভাবিক গতি মারাত্নকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। বড় বড় নদীগুলোতে গ্রীষ্মকালীন পানি প্রবাহ না থাকায় বড় বড় চর জেগে উঠছে।এবং নদীর গতিপথ পরিবর্তিত হয়ে যাচ্ছে।

সমুদ্র পথে পানির স্বাভাবিক গতি প্রক্রিয়া না থাকায় পানিতে লবনাক্ততার পরিমান বেড়ে যাচ্ছে যার ফলে পানি দূষিত হচ্ছে। অনেক নদী শুকিয়ে মৃতপ্রায়। আর এসব এলাকায় পানির সংকটের কারণে প্রাকৃতিক পরিবেশের বাস্তুসংস্থান বিনষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

পানির স্তর ধীরে-ধীরে মাটির অনেক নিচে নেমে যাচ্ছে। ফলে পানিতে আর্সেনিকের পরিমান ভয়াবহভাবে বেড়ে যাচ্ছে। আর এই আর্সেনিকযুক্ত পানি পান করার ফলে মানব দেহে বিভিন্ন কঠিন রোগ সংক্রমিত হচ্ছে এবং এতে  অনেক মানুষের অকাল মৃত্যৃ ঘটছে।

একসময়  যেই নদীগুলো ছিল জীবন্ত সবসময় পানির অবিরাম প্রবাহ বিদ্যমান ছিল । এবং সেই সব নদীতে অসংখ্য প্রজাতির মাছ পাওয়া যেত এখন সে সব নদীর অধিকাংশই গ্রীষ্মকালে থাকে মৃতপ্রায়।

এবং সেই নদীগুলোতে অসংখ্য প্রজাতির মাছের বিলুপ্তি ঘটেছে। অধিকাংশ নদীগুলোতে চর জেগে ওঠার ফলে অসময়ে দেখা দিচ্ছে প্রবল বন্যা,আর এসময় সকল রকম দূষিত বজর পর্দাথ পানিকে করে তুলছে মারাত্নক দূষিত।

এতে বিভিন্ন রকম পানিবাহিত রোগ ছড়াচ্ছে এবং অনেক মানুষ বিভিন্ন রকম রোগে সংক্রমিত হয়ে প্রাণ হারাচ্ছে। পানি দূষিত হওয়ার ফলে বিভিন্ন প্রজাতির সাপ,ব্যাঙ,ছোট মাছ,বড় মাছ ইত্যাদি বিলুপ্ত হচ্ছে।

নদীর তীরে বসবাসকারী অনেক প্রজাতির পাখি বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। এছাড়াও মাছরাঙ্গা,সারস,বকসহ অনেক প্রজাতির পাখি হূমকির সম্মুখিন। পুকুরে বিষ প্রয়োগের ফলে পুকুরের বাস্তুসংস্থান নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এতে বিভিন্ন রকম লতাপাতা,গুল্ম জাতীয় মূল্যবান উদ্ভিদ হারিয়ে যাচ্ছে।

এছাড়াও আরো অসংখ্য কারণে প্রতিনিয়ত পানি দূষিত হচ্ছে। শীঘ্রই যদি আমরা পানি দুষণের সমস্যাগুলোকে চিহ্নিত করে সমাধান করার চেষ্টা না করি তাহলে আমরা অনেক বেশী ক্ষতির সম্মুখিন হব।

এবং আমরা আরো অনেক প্রজাতির মাছসহ অন্যান্য অনেক প্রাণীকে হারিয়ে ফেলবো।

লেখক:মো:-নুরুজ্জামান  

প্রজন্মনিউজ২৪/জামান