রাঙ্গুনিয়ায় এখনো বিদ্যুতের আলো পৌঁছেনি


চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলা সদর থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরে ইসলামপুর ইউনিয়ন। এই ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ড দুই ভাগে বিভক্ত। এক অংশ ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ের পাশে। অন্য অংশ কার্যালয়ের পূর্ব দিকে তিন কিলোমিটার দূরে। এই এলাকার বাসিন্দাদের বেশির ভাগই ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর। দুর্গম পাহাড়ি এলাকাটিতে এখনো বিদ্যুতের আলো পৌঁছেনি। যাতায়াত ও স্বাস্থ্যসেবার ন্যূনতম সুযোগ থেকে বঞ্চিত এখানের বাসিন্দারা। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বৌদ্ধমন্দিরসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে এখানে।

গতকাল সোমবার দুপুরে এলাকাটিতে গিয়ে কথা হয় স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে। নানা দুর্ভোগের কথাই উঠে আসে তাঁদের বর্ণনায়। তাঁরা বলেন, এলাকায় বিদ্যুৎ নেই। যাতায়াত ব্যবস্থাও নাজুক। ঘাগড়া খাল পার হয়ে তাঁদের যাতায়াত করতে হয়। বৃষ্টিতে পানি বেশি থাকলে তাঁদের যাতায়াত বন্ধ হয়ে যায়। এলাকায় উৎপাদিত শস্য বাজারে নিতে কৃষকদের দুর্ভোগে পড়তে হয়।

স্থানীয় কৃষক মিঠুন মারমা বলেন, কয়েক দিন আগে তাঁর খেত থেকে সবজি তোলেন। বৃষ্টি হওয়ায় ঘাগড়া খালে পানি বেড়ে যায়। ফলে সবজিগুলো বাজারে বিক্রি করতে না পেরে এলাকায় সস্তা দরে বিক্রি করে দিতে হয়েছে তাঁকে। স্থানীয় বাসিন্দা কলিন মারমা বলেন, এই গ্রামে বিদ্যুৎ নেই। বিদ্যুতের সংযোগের জন্য এলাকার লোকজন দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানিয়ে আসছেন। যাতায়াত ব্যবস্থা অত্যন্ত খারাপ। ঘাগড়া খালের ওপর সেতু নির্মাণ করলে এখানকার বাসিন্দাদের দুর্দশা দূর হবে।

কথা হয় ধর্ম গোদা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী কলি চাকমার সঙ্গে। বিদ্যুৎ না থাকায় প্রচণ্ড গরমের মধ্যেই ক্লাস করতে হয় তাদের। সে বলে, ‘খুব বেশি গরম পড়লে ক্লাসে টিকে থাকা কঠিন হয়ে যায়। অতিরিক্ত গরমে অনেক সময় অসুস্থ হয়ে পড়ি।’

এ বিদ্যালয়ের শিক্ষক রুপেন কান্তি বড়ুয়া বলেন, ‘বিদ্যুৎ না থাকায় গ্রামের মানুষের ভোগান্তির শেষ নেই। বিশেষ করে শিক্ষার্থীদের বেশি সমস্যা হয়। অন্ধকারে প্রদীপের আলোতে লেখাপড়া করতে হয়। বিদ্যুতের সংযোগের জন্য আবেদন করেও কোনো ফল হচ্ছে না।’এদিকে নাজুক যাতায়াত ব্যবস্থার কথা তুলে ধরে উত্তর রাঙ্গুনিয়া ডিগ্রি কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মইচিং মারমা বলেন, পাঁচ কিলোমিটার পাহাড়ি পথ হেঁটে তাঁকে কলেজে যেতে হয়। অনেক সময় বৃষ্টি হলে কলেজে যেতে পারেন না।

স্কুলে যাওয়ার পথে কয়েকজন শিক্ষার্থীকে ধর্ম গোদা আমতলা নামক স্থানে বিশ্রাম নিতে দেখে কথা হয় তাদের সঙ্গে। সোনারগাঁও উচ্চবিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী অংসাংচিং মারমা ওই সময় বলে, ‘প্রতিদিন আমরা ৬০-৭০ জন শিক্ষার্থী ধর্ম গোদা থেকে তিন কিলোমিটার পাহাড়ি পথ হেঁটে স্কুলে যাই। এই পথটুকু এসে আমরা কিছুটা সময় বিশ্রাম নিই। অনেক সময় এত ক্লান্ত হয়ে পড়ি যে ক্লাসে মনোযোগ দিতে পারি না।’ সোনারগাঁও উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক গিয়াস উদ্দিন বলেন, এলাকায় কোনো হাইস্কুল না থাকায় প্রতিদিন হেঁটে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে এই স্কুলে আসে শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীরা যেন শিক্ষা থেকে বঞ্চিত না হয়, সে জন্য অতিরিক্ত ক্লাসের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

এলাকায় কোনো স্বাস্থ্যকেন্দ্রও নেই। সাধারণ চিকিৎসা পাওয়ার জন্যও দূরে যেতে হয়। এ প্রসঙ্গে স্থানীয় কর্মজীবী নারী কাংচংমালা তঞ্চঙ্গ্যা বলেন, এখানে কোনো স্বাস্থ্যকেন্দ্র নেই। সাধারণ চিকিৎসা কিংবা শিশুদের টিকা দিতে হলেও পার্বত্য অঞ্চল রাঙামাটির ঘাগড়া অথবা মগাছড়ি যেতে হয়। বেশি অসুস্থ ব্যক্তিকে কাঁধে করে ঘাগড়া খাল পার করে চিকিৎসার জন্য নিতে হয়।

এলাকার সমস্যা প্রসঙ্গে ইসলামপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ইকবাল হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘ধর্ম গোদা এলাকাটি দুর্গম হলেও এলাকার মানুষের নিয়মিত খোঁজখবর নিচ্ছি। বিদ্যুৎ সংযোগ ও যাতায়াতে যাতে এলাকার মানুষের অসুবিধা না হয়, সে লক্ষ্যে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাসুদুর রহমান বলেন, ‘এই এলাকার মানুষ যাতে পুরোপুরি নাগরিক সুবিধা পায়, সে জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ধর্ম গোদা গ্রামের এক নারী তাঁর প্রতিবন্ধী ছেলেকে নিয়ে কয়েক দিন আগে আমার কাছে এসেছিলেন। আমি তাঁর ছেলের প্রতিবন্ধী ভাতা ও প্রয়োজনীয় চিকিৎসার জন্য সহযোগিতা করেছি।’

প্রজন্মনিউজ২৪/নাজমুল