শেয়াল ধরার গল্প

প্রকাশিত: ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ ০১:৫৭:৪২ || পরিবর্তিত: ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ ০১:৫৭:৪২

শেয়াল ধরার গল্প

এমনিতে শীতকাল তার উপর হিমালয় থেকে নেমে আসা তীব্র সত্যপ্রবাহ।চারিদিক একেবারে নিরব-নিঝুম একান্ত প্রয়োজন ছাড়া কেউ বাড়ির বাহির হচ্ছে না।চারিদিকে জাঁকিয়ে বসেছে তীব্র শীত একটু সামনে তাকালেই সবকিছু অদৃশ্যমান মনে হয়।সবাই লেপকাঁথা মুড়ি দিয়ে ঘরের কোনায় নিরবে অবস্থান করছে।

পশুপাখিরা সবাই যার যার গৃহে অবস্থান করছে।আহারের খোজে বাইরে বের হওয়ার কোন তাড়া নেই।যদিও ক্ষুধার রাজ্য হাঙ্গামা শুরু করে দিয়েছে।এমন অলস মুহূর্তেও কিছু দুষ্টু বালক সকল প্রতিকূলতাকে জয় করে তাদের লক্ষ নিয়ে বেড়িয়ে পড়ে।তারা জানে এই মুহূর্তে দুষ্টু শেয়ালের দল তাদের গর্তের ভিতরে অবস্থান করছে।

তা্ই সহজে শেয়াল ধরার এটাই মোক্ষম সুযোগ।এই চঞ্চল বালকদের দলে রয়েছে রিফাত,নাইম,মানিক,মনির,মিলন,জাকির সহ আরো বেশ কয়েকজন।তাদের গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে ছোট্ট একটি নদী।নদীর পাড়ে রয়েছে বালুচর এবং ছোট ছোট বিভিন্ন রকমের ঝোপ।

এসব ঝোপের পাশের রয়েছে ছোট বড় বিভিন্ন রকমের গরত ।এসব গর্তে শিয়াল পন্ডিতের দল ঝাঁক বেঁধে বসবাস করে।বালকের দল শেয়াল ধরার জন্য তাদের সাথে কিছূ সরঞ্জাম নিয়ে বেড়িয়ে পরে যেমন কোদাল,দা,কাটা বাঁশ,জাল,আগুন জ্বালানোর জন্য শুকনো খড়ি দেয়াশলাই ইত্যাদি।

বালকেরা জানে যে বালুচরে শেয়াল গুলো একটি গর্তের ভেতর যা্ওয়া-আসা করার জন্য সেই গর্তের চারিদিকে আরো কয়েকটি ‍মুখ তৈরী করে।তাই তারা গর্তের দুটো মুখ বাদে বাকী মুখ গুলোকে বালু দিয়ে বন্ধ করে দেয়।এবং একটি মুখে তারা জাল ও বাঁশ দিয়ে ফাঁদ তৈরী করে।

এবার অপর একটি মুখে শুকনো খড়ি, শুকনো গোবর  এবং আগুন দিয়ে তীব্র ধোঁয়ার সৃষ্টি করে, এবং সেই ধোঁয়া কৃত্তিম বাতাসের মাধ্যমে গর্তের ভিতরে প্রবেশ করায়।আর সেই ধোঁয়া যখন গর্তের ভিতরে প্রবেশ করে তখন শেয়াল মশায়দের নাক,চোখ,মুখ বন্ধ হয়ে আসে এবং তাদের গর্তের ভিতরে সেকি ছোটাছুটি শুরু হয়।

পন্ডিত মশায়রা তো বূঝতে পারে গর্তের অপর মুখে তাদের জন্য ফাঁদ অপেক্ষা করছে।কিন্তু ধোঁয়ার তীব্র জ্বালায় তাদের গর্তের ভিতর থেকে বেড়িয়ে ফাঁদের ভিতরে প্রবেশ করতেই হয়।

আর যখনি শেয়াল জালের ভিতর আটকা পড়ে তখন বালকদের হৈ-হুল্লোর আর সেকি আনন্দ।তারা এবার জালসহ শেয়ালকে টানতে-টানতে গ্রামের দিকে নিয়ে চলে।গ্রামের ছোট বাচ্চারা তো শেয়ালমামাকে বন্দী অবস্থায় দেখে মহা আনন্দিত।কেউ কেউ আবার ভয়ে কান্না কাটি ও শুরু করে।

গ্রামের মহিলারা তো  শেয়াল পন্ডিত কে ভীষন একচোট গাল দিয়ে নিল।দুষ্টু শেয়াল তাদের কারো ছাগল ধরে নিয়ে গেছে, কারো বাচ্চাসহ মুরগী নিয়ে গেছে আরো কত কী।সারাদিন বন্দী থাকার পর বিকেলবেলা শেয়ালের অবস্থা কাহিল হয়ে পড়ে ।খবর পেয়ে কয়েকজন সাঁওতাল এসে পড়ে শেয়ালটিকে কেনার জন্য।

এবার গ্রামের মুরুব্বিরা বলে, পশুপাখি আমাদের অনেক উপকার করে তাদের মারতে নেই,এবং তাদের বিক্রি করা অন্যায়।তারা আরো বলেন, শেয়ালের যথেষ্ট শিক্ষা হয়েছে,তাকে এবার ছেড়ে দেওয়া হোক।

সন্ধ্যাবেলা বালকেরা শেয়াল পন্ডিতকে জাল থেকে মুক্ত করে দেয়।মুক্ত হওয়ার পর শেয়ালের কি ছুট। এবং কিছুদুর যাওয়ার পর সন্ধ্যার নিরবতা ভেঙ্গে ভেসে আসে তার মুক্তি পা্ওয়ার মহা আনন্দের ডাক হুক্কা-হুয়া।

লেখক:মো:নুরুজ্জামান

প্রজন্মনিউজ২৪/জামান   

 

পাঠকের মন্তব্য (০)

লগইন করুন





ব্রেকিং নিউজ