গ্রাম বাংলার অতি পরিচিত অপরুপ ফুল কচুরিপানা


সানোয়ারুল ইসলাম রনি, মীরসরাই প্রতিনিধি : প্রকৃতির অপরুপ দান। নোংরা আবর্জনা কচুরিপানা। যার ফুলে সুমোভিত হয়ে উঠে খাল-বিল, হাওড়-বাওড়, ছোট পুকুর জলাশয় কিংবা দীঘি। প্রকৃতির এই দানকোনেকে ঝামেলা মনে করেন। আবার এই ফুলে অনেকে আকৃষ্ঠ হয়ে প্রকৃতির এই অপূর্ব সুন্দর্য উপভোগ করেন অনায়াসে। অনেকে আবার শৈশবের খুনসুটির কথা মনে করে ভাবতে থাকেন। বিকেলে বিলের ধারে কচুরিপানাকে একত্রিত করে একটার উপর কয়েকটা রেখে সাঁকো তৈরী করে এপার থেকে ওপারে যাওয়া। প্রকৃতিতে এখন বসন্তকাল চলছে। এরপর দুয়ারে কড়া নাড়ছে গ্রীষ্মের। তারপর বর্ষা এভাবে চলছে ঋতু। বর্তমানে খাল-বিল, ঝিলের পানি অনেকটা কম। কিন্ত বিলের যেটুকু পানি জমে আছে তাতে দেখা  যাচ্ছে সবুজ পাতার বেষ্টনীর মাঝে পুটে আছে সাদার উপর হাল্কা বেগুনী রঙের কচুরিপানা ফুল। পড়ন্ত বিকেলে বিলের ধারের পাশের রাস্তা দিয়ে চলতে গেলে এমনই ফুলের দৃশ্য দেখা যাচ্ছে।এতে আকৃষ্ট হচ্ছে ফুল প্রেমি মানুষগুলো। গ্রাম বাংলার খাল-বিল, ছোট নদী ফোটে নোংরা জলে স্বর্গীয় এই কচুরিরপানা ফুল। নীলচে শিরা-উপশিরায় বিন্যস্ত হালকা বেগুনি রঙের মায়াবী এই ফুল হারানো শৈশবকে খুব কাছে টানে।

সকলের কাছে খুব পরিচিতি এক উদ্ভিদের নাম হচ্ছে কচুরিপানা। সূত্রে জানা যায়, ১৮ শ’ সালের শেষভাগে এক ব্রাজেলিয়ান পর্যটক কচুরিপানা আমাদের দেশে নিয়ে আসে। গ্রামাঞ্চলে এটিকে অনেকে “টাগাই” বলেও থাকে। এটির আদি জন্মস্থান দক্ষিণ আমেরিকায় বলে জানা যায়।

এর সাতটি প্রজাতি রয়েছে এবং বহুবর্ষজীবী। এটি দ্রুত বংশবৃদ্ধি করতে পারে। কচুরিপানার বায়ুকুঠুরি থাকায় সহজেই তা পানিতে ভাসতে পারে এবং এর ফুল অনেককেই আকর্ষিত করে। কচুরিপানার মূল পানি পরিশুদ্ধ করতে সাহায্য করে এবং এর ফুল বিভিন্ন পাখির বীজ বিস্তরণে সাহায্য করে।

দেখার দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বলা যায়, কচুরি ফুলের মতো এত চমৎকার ফুল খুব কম আছে। পরিমাণগত দিক দিয়েও এর মতো এত ব্যাপক বিস্তৃত ফুল খুব কমই দেখতে পাওয়া যায়। কবিগুরুর ভাষায়- বলা হয়েছে ‘দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া, ঘর হতে শুধু দু’পা ফেলিয়া।’ সত্যিকার অর্থেই যেখানে-সেখানে, ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা এক আগাছা উদ্ভিদ যার কিনা উপকারের চেয়েও অপকারী দিক কোনো অংশেই কম না, এমন এক অবহেলিত উদ্ভিদে এত নয়নাভিরাম, মনোমুগ্ধকর, চিত্তাকর্ষক ফুল যা প্রকৃতিপ্রেমীদের বিমুগ্ধ না করে পারে না।

কচুরিপানা দেখতে গাঢ় সবুজ হলেও এর ফুলগুলো সাদা পাপড়ির মধ্যে বেগুনি ছোপযুক্ত এবং মাঝখানে হলুদ ফোঁটা থাকে। সাদা এবং বেগুনি রঙের মিশেলে এক অন্যরকম আবহ তৈরি করে। সাদা পাপড়ির ¯’লে কোথাও হালকা আকাশি পাপড়িও দেখতে পাওয়া যায়।

পুরোপুরি ফুল ফোটার আগে একে দেখতে অনেকটা নলাকার দেখায়। পাপড়িগুলোর মাঝখানে পুংকেশর দেখতে পাওয়া যায়। প্রতিটি ফুলে ছয়টি করে পাপড়ি দেখা যায়। এলাকাভিত্তিক অনেকে একে একেক নামে চিনে থাকে। প্রায় সারা বছরই কচুরি ফুল ফুটতে দেখা যায়। কচুরি ফুললর মুগ্ধতায় আমাদের মধ্যে প্রকৃতি প্রেম জাগ্রত হোক।

কচুরিপানার ¯’ানীয় নাম র্জামুনী। যারা এর ব্যবহার ও উপকারিতা জানেন তাদের কাছে এটি একটি সম্পদ। আবার যারা এর ব্যবহার পদ্ধতি আয়ত্ব করতে পারেনি তাদের কাছে এটি একটি আগাছা ও বিড়ম্বনার। তাই এই সম্পদটির সর্বো”চ ব্যবহার নিশ্চিত করা সম্ভব হলে অনেক কৃষক উৎপাদন খরচ হ্রাস করতে পারবেন, কিছু কিছু ক্ষেত্রে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ারও সম্ভাবনা রয়েছে।

কচুরিপানার বহুমাত্রিক ব্যবহার:

কচুরিপানাকে অনেকে ভাসমান সবজি চাষ, মাছের খাবার, জৈব সার, গবাদি পশুর খাবার, রাস্তার গর্ত ভরাট করা, পিচ ঢালাইয়ের নতুন রাস্তায় পানি দেয়ার ও পিচ মজবুত করার জন্য,  সিমেন্টের খুটি মজবুত করা ও পানি ধরে রাখার জন্য, কচুরিপানার শিকড়ে বল তৈরি করে সেখানে বীজ অঙ্কুরোগমন করানো, গোল আলু মালচিং করা, ঢেউয়ের হাত থেকে বসত ভিটে রক্ষার কাজে কচুরিপানা ব্যবহার করেন।

বর্তমানে ভাসমান সবজি চাষে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করার জন্য সরকারিভাবে কিছু কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। সরকারি-বেসরকারি এই এই কার্যক্রমে জনগোষ্ঠীকে আরো বেশি সম্পৃক্ত করা হলে কচুরিপানার যথাযথ ব্যবহার আরো বেশি বৃদ্ধি পাবে।স্থানীয় জনগোষ্ঠীর ব্যবহার পদ্ধতিগুলোর বিস্তৃতির মাধ্যমেও কচুরিপানাকে সম্পদে পরিণত করার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই কচুরিপানার ব্যবহার পদ্ধতি সম্পর্কে জনগোষ্ঠী ব্যপক ধারণা লাভ করলে কচুরিপানা আগাছার পরিবর্তে প্রাকৃতিক সম্পদ হয়ে উঠবে।

প্রজন্ম নিউজ২৪