আল্লাহর পথে দাওয়াতের গুরুত্ব

প্রকাশিত: ১৮ নভেম্বর, ২০১৭ ০১:০২:৪৫

আল্লাহর পথে দাওয়াতের গুরুত্ব

দাওয়াত শব্দটি বহূল পরিচিত একটি আরবী শব্দ। এর আভিধানিক অর্থ ডাকা, আহবান করা, আমন্ত্রন জানানো, আবেদন নিমন্ত্রন, প্রচার করা ইত্যাদী। পরিভাষায় ইহকালীন শান্তি ও পরকালীন মুক্তির একমাত্র মুক্তির এক মাত্র গ্যারান্টি পরিপূর্ণ জীবন বিধান “আল ইসলামের”দিকে আহবান করাকে দাওয়াত বলে।অন্ধকার থেকে গোটা মানব মন্ডলীকে উদ্ধার করে আলোর পথে আনয়নের জন্য একমাত্র নির্ভরযোগ্য পন্থা ও বৈজ্ঞানিকভাবে  স্বীকৃত সঠিক পদ্ধতিই হচ্ছে দাওয়াত। যুগে যুগে আল্লাহর মনোনিত নবী ও রাসূলগণ মানব মন্ডলীকে নিশ্চিত ধবংসের হাত থেকে রক্ষার জন্যে একমাত্র আল্লাহর দিকেই দাওয়াত দিয়েছি লেন এমনকি সর্বকালের সর্বসেরা মহামানব রাসূলে আকরাম (স.)এই বিপ্লবী দাওয়াতের মাধ্যমেই অজ্ঞ ও নিষ্ঠুর আরবদেরকে সত্য, সুন্দর ও আলোর দিকে এনেছিলেন।

দাওয়াতের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা:

১)দাওয়াত দানকারী পৃথিবীর সর্বোত্তম ব্যক্তিঃ একজন দাওয়াতদানকারী মহাপরাক্রমশালী আল্লহর নিকট তাঁর সর্বোত্তম বান্দা বলে পরিচিতি লাভ করেন। এ স্পর্কে আল্লাহ পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেছেন,ঐ ব্যক্তির কথার চেয়ে আর কার কথা অধিক উত্তম হতে পারে  যে মানুষকে আল্লাহর দিকে আহবান করে, নিজে সৎ কাজ করেএবং ঘোষণা করে যে আমি মুসলমান (হামীম আস সিজদাহ : ৩৩)।

নবী(স.)বলেন, আল্লাহ ঐ ব্যক্তির মুখ উজ্জল করবেন যে আমার কোন হাদীস শুনেছে সেভাবেই তা অপরের নিকট পৌঁছিয়েছে।কেননা অনেক সময় যাঁকে পৌঁছানো হয় সে ব্যক্তি সরাসরি শ্রোতা অপেক্ষা অধিক রক্ষনা বেক্ষনকারী বা জ্ঞানী হয়ে থাকে (তিরমিযী ও ইবনে মাযাহ)

২) নবী-রাসূলগণের প্রথম এবং প্রধান কাজ ছিল দাওয়াত:

ইসলামে দাওয়াতের প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্ব অপরিসীম। সকল নবী ও রাসূলের প্রথম এবং প্রধান কাজই ছিল পথহারা, পথভোলা, টলমান ধ্বংসের পাহাড়ে দন্ডায়মান মানুষগুলোকে দাওয়াতে হকের মাধ্যমে আল্লাহমূখী করে তোলা। সকলের চাওয়া-পাওয়ার, আশা আকাংখার কেন্দ্র জান্নাতের চির সবুজ পথ ধরিয়ে দেয়া।মহা-গ্রন্থ আলকুরআনে বিভিন্ন নবীর স্বীয় জাতিকে দাওয়াতের ঘোষনা বর্ণিত হয়েছে। যেমন হযরত শোয়াইব (আ:) এর দাওয়াত আর মাদইয়ানবাসীদের প্রতি তাদেরই ভাই শোয়াইব (আ:) কে পাঠিয়েছিলাম।তিনি তাঁর সম্প্রদায়কে ডাক দিয়ে বললেন “হে আমার জাতি, তোমরা আল্লাহর দাসত্ব কর। তিনি ছাড়া কোন ইলাহ নেই।হযরত সালেহ (আ:) এর দাওয়াত  আর আমি সামূদ জাতির কাছে তাদের ভাই সালেহকে পাঠিয়েছিলাম। তিনি তাঁর জাতিকে ডাক দিয়ে বললেন, হে আমার সম্প্রদায়ের লোকেরা তোমরা আল্লাহর দাসত্ব কবুল করো। তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ নেই। (আরাফ:৭৩)হযরত হুদ (আ:) এর দাওয়াত:আর আদ জাতির প্রতি তাদের ভাই হুদ (আ:) কে পাঠিয়েছিলাম, তিনি তাঁর সম্প্রদায়কে ডাক দিয়ে বললেন, “হে আমার সম্প্রদায়ের লোকেরা তোমরা আল্লাহর দাসত্ব কর। আল্লাহ ছাড়া তোমাদের আর কোন ইলাহ নেই। (আরাফ: ৬৫) আর আমাদের প্রিয় নবী হযরত মোহাম্মদ (সা:) এর প্রথম গণ ভাষণের মূল প্রতিপাদ্য বিষয় ছিল :  হে মানব মন্ডলী! তোমরা ঘোষণা কর যে, আল্লাহ ছাড়া সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী কেউ নেই। তাহলে তোমরা সফল হবে”।

৩) দাওয়াতী কাজের জন্য আল্লাহর আদেশ:

পবিত্র কুরআনুল কারীমে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন “(মানুষকে) ডাক তোমার রবের পথে হিকমত ও উত্তম নসীহতের মাধ্যমে। (নাহাল: ১২৫)

রাসূল (সা:) ইরশাদ করেছেন:

আমার পক্ষ থেকে একটি আয়াত হলেও তা (মানুষের কাছে) পৌঁছে দাও। (বুখারী)দাওয়াত সমাজকে সুন্দরভাবে ঢেলে সাজানোর উপায়। দাওয়াতের মাধ্যমে সমাজ থেকে অন্যায়-অবিচার, জোর-জুলুম, মিথ্যা,অজ্ঞতা, নিষ্ঠুরতা,সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি. টেন্ডারবাজি সহ যাবতীয় সব পাপাচার দূরীভূত করে একটি পরিচ্ছন্ন সুন্দর সমাজে রুপান্তরিত করা যায়। রাসূল (সা:) ইরশাদ করেছেন।তোমাদের কেউ যদি কোন অন্যায় কাজ অনুষ্ঠিত হতে দেখে তাহলে সে যেন তা হাত দিয়ে প্রতিহত করে। আর যদি তার সে ক্ষমতা না থাকে, সে যেন মুখ দ্বারা বাধা দেয়। যদি তাতেও সে অক্ষম হয় তাহলে সে যেন অন্তরে  উক্ত কাজকে ঘৃনা করে এবং তা প্রতিহত করার পরিকল্পনা পোষন করে) আর এটাই হল ঈমানের র্দূবলতম লক্ষণ। (এরপরে আর মুমিন থাকার সুযোগ নেই)। (মুসলিম, অনুচ্ছেদ-২০, হাদীস নং-৮৫)

৪) দাওয়াত বন্ধ হলে আল্লাহর গজব নাযিল হয়:

মানুষ যদি সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজে নিষেধ না করে তাহলে সমাজে অন্যায়, জুলুম, অত্যাচার ইত্যাদি বাড়তেই থাকে। যা আল্লাহর গজবকে ত্বরান্বিত করে। এ সম্পর্কে রাসূল আকরাম (সা:) ইরশাদ করেছে আমি আল্লাহর শপথ করে বলছি যার হাতে তোমার প্রাণ অবশ্যয়ই  তোমরা সৎকাজের আদেশ দিবে এবং অন্যার্য ও পাপাচার থেকে লোকদেরকে বিরত রাখবে। নতুবা শীঘ্রই তোমাদের উপর আল্লাহর গজব নাযিল হবে। তখন তোমরা তা থেকে নিস্কৃতি পাওয়ার জন্য ফরিয়াদ করতে থাকবে কিন্তু তোমাদের ফরিয়াদ কবুল করা হবে না।হযরত ঈসা (আ:) ও হযরত দাউদ (আ:) এর ভাষায় বনী ইসরাঈলদের লানত করা হয়েছে। আর এ লানতের কারন ছিল এই যে, তাদের সমাজে গুনাহ ও জুলুম ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছিল। অথচ লোকেরা পরষ্পরকে সৎকাজের দাওয়াত ও অসৎকাজে বাধা দেয়া থেকে বিবৃত থাকত।

আল্লাহর বানী:

বনী ইসরাঈলদের মধ্যে যারা কাফির, তাদেরকে দাউদ ও মরিয়ম তনর ঈসা (আ:) এর মুখে অভিশপাত করা হয়েছে। এটা এ কারনে যে তারা অবাধ্যতা করত এবং সীমা লংঘন করত।তারা পরষ্পরকে মন্দ কাজে নিষেধ করতা, যা তারা করত। তারা যা করত অবশ্যয়ই তা মন্দ ছিল।(মায়িদাহ: ৭৮, ৭৯)

৫) ক্ষতি থেকে নিস্কৃতির হাতিয়ার হচ্ছে দাওয়াত: মূলত দাওয়াত ব্যতীত মানব জীবন মহাক্ষতির মধ্যে নিমজ্জিত থাকাটা অস্বাভাবিক নয়। দাওয়াতের মাধ্যমেই সে ক্ষতির হাত থেকে মুক্তি লাভ করে একজন খাঁটি মানবে পরিণত হতে পারে। সূরা আল আসরের ভাষ্যানুযায়ী একমাত্র “দায়ী ইলাল্লাহ”ব্যক্তিরাই ক্ষতি এবং মহা ক্ষতি থেকে নিতৃতি লাভ করতে সক্ষম হবে।

আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেছেন:

মহাকালের শপথ। নিশ্চয়ই মানব মন্ডলী মহাক্ষতির মধ্যে নিমজ্জিত। তারা ব্যতীত যারা ঈমান এনেছে, সৎকার্য করেছে পরষ্পরকে সৎকাজের দাওয়াত দিয়েছে এবং ধৈর্য্য ধারনের পরামর্শ দিয়েছে। (সূরা আসর)

দাওয়াত দানের প্রকারভেদ:

বিভিন্ন ইসলামি মনিষী বিভিন্নভাবে দাওয়াতের প্রকারভেদ বর্ণনা করেছেন। আল্লামা আব্দুল বাদী সাকার (মিশরী) দাওয়াতের প্রকারভেদ পাঁচটি অধ্যায়ে ভাগ করেছেন:

ক)    ব্যক্তিগত ভাবে দাওয়াত দান।

খ)    সাধারণ দাওয়াত দান।

গ)    পুস্তকের মাধ্যমে দাওয়াত দান।

ঘ)    চরিত্র মাধুর্য দ্বারা দাওয়াত দান।

ঙ)    মিডিয়ার মাধ্যমে দাওয়াত দান।

আর বর্তমানে এই মিডিয়াই হতে পারে দাওয়াত দানের বড় হাতিয়ার।আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে একজন দায়ীর যাবতীয় গুনাবলী অর্জন করে পথহারা, পথভোলা,বিপদগামী মানব মন্ডলীকে আল্লাহর দিকে ডাকার তাওফীক্ব দিন। দাওয়াত দানের অসীলা আমাদের গুনাহ  ক্ষমা করে দিন, বিশেষ করে মহাক্ষতি থেকে রক্ষা করুন, আমীন!

প্রজন্মনউিজ২৪.কম/নাছির

 

পাঠকের মন্তব্য (০)

লগইন করুন





ব্রেকিং নিউজ