প্রকাশিত: ০৬ নভেম্বর, ২০১৭ ১১:২৫:৪৪
আমরা মানুষ। আমরা সামাজিক জীব। তাই একে অপরে মিলে সমাজে বসবাস করি। মহান প্রভূ সকল প্রাণীর ভিতরেই প্রেম-ভালোবাসা ও বিপরীত লিঙ্গের সঙ্গীর প্রতি বিশেষ দূর্বলতা দিয়েছেন। সেই বিশেষ দূর্বলতা চরিতার্থ করার জন্য যদি আমরা ধর্মীয় ও সামাজিক রীতির বাইরে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণকরি তবে সেটি যেমন অধর্ম হয় তেমনি সামাজিক সভ্যতা ভেঙ্গেচুরে অসভ্যতায় রূপদেয়। প্রত্যেকটি মানুষের মনেই একটি দানবীয় সত্তা বাসকরে। যে সেই দানবীয় সত্তাকে দমিয়ে সুচারুরূপে জীবন যাপন করে সেই হয় অনন্য মানব।
সাম্প্রতিককালে নারী-শিশু ধর্ষণ, অপহরণ ও হত্যার ঘটনা সমাজে উদ্বেগ জনক হারে বেড়ে গেছে। অবলীলায় নির্যাতন ধর্ষণ সহিংসতা ও হত্যার শিকার হচ্ছে নারী ও শিশুরা। কোনোভাবেই যেন লাগাল টেনে ধরা যাচ্ছে না এ পাগলা ঘোড়ার। কোমলমতি শিশুথেকে মায়ের বয়সি নারীরাও হচ্ছে ধর্ষণের শিকার। ধর্ষক শুধু ধর্ষণ করেই ক্ষান্ত হচ্ছে না। ধর্ষিতাকে ধর্ষণের আগে পরে অমানবিক শারীরিক নির্যাতন করে
চলন্তবাস, একাকী বাসায়, কোচিং সেন্টারে এমনকি ক্যান্টনমেন্টের ভিতরেও চলছে এই ধর্ষণ নামক ভয়ানক ভাইরাসের মহরা। ভিক্টোরিয়া কলেজের ছাত্রী তনু; গারো তরুণী; একাকী বাসের যাত্রী গার্মেন্টস কর্মী নারী; ভারতের ২০১২ সালের ১৬ই ডিসেম্বরের সেই চাঞ্চল্যকর চলন্ত বাসের মেডিকেল শিক্ষার্থীকে তার প্রেমিকের সামনে ছয়জন মিলে গণধর্ষণ; বনানীর হোটেলে সাফাতের দেশকে ঝাকুনি দেয়া সেই ধর্ষণ; নায়িকা ভাবনার ধর্ষণ আমাদেরকে ভাবিয়ে তোলে বারংবার।
শিশু ধর্ষণ ও হত্যার কিছু নমুনা হচ্ছেঃ খাবারের প্রলোভন দেখিয়ে ঘরে ডেকে নিয়ে রাজধানীর বাড্ডায় তিন বছরের শিশু তানহাকে ধর্ষণের পর হত্যা করে শিপন নামের এক নরপশু। এরপর শিপন লাশটি তানহাদের ভাড়া বাড়ির শৌচাগারে ফেলে যায়।
গতবছরের ১৮ অক্টোবর দিনাজপুরের পার্বতীপুরে পাঁচ বছর বয়সী এক শিশু নিখোঁজ হয়। পর দিন অচেতন অবস্থায় তাকে পাওয়া যায় বাড়ির পাশের হলুদ ক্ষেতে। অবুঝ শিশুটি যাকে কাকু বলে জানতো সেই নরপিচাস সাইফুল শিশুটির ওপর হায়েনার মতো ঝাপিয়ে পড়ে। সঙ্গে তার সহযোগী। শিশুটিকে বাঁচিয়ে রাখতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গঠিত বোর্ডের সদস্যরা বলেছেন, তাদের চিকিৎসা জীবনে এমন নিষ্ঠুরতা দেখেননি। পাষণ্ডের পাশবিকতায় ভেঙ্গে গেছে শিশুটির প্রজনন হাঁড়। ব্লেড দিয়ে কাটা হয়েছে বিশেষ অঙ্গ। কী পাষণ্ডতা! কী নির্মমতা! কী পশুত্ব! কী অবক্ষয়ে তলিয়ে যাচ্ছে জাতি ও সমাজ!
এক পরিসংখ্যানে জানা যায়, গত চার বছরে ১২ হাজার ৮৫টি শিশু হত্যার শিকার হয়েছে। ২০১৬ সালে নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছিল ২১ হাজার ২২০টি। যা আগের বছরের তুলনায়ও বেশি। এটা নিঃসন্দেহে আতঙ্কজনক ঘটনা।
এরকম হাজারো ঘটনা দেখে আমরা অভ্যস্ত। টিভি খুললেই ধর্ষণ ও হত্যার সংবাদ। পত্রিকার পাতায় পাতায় নারী ও শিশু ধর্ষণের পর হত্যার খবর ছেয়ে গেছে। কিন্তু কেন এই ধর্ষণ? অনেকেই বলে পোশাকে শালীনতা নেই তাই ধর্ষণের হার বেড়ে গেছে। আমার প্রশ্ন তাহলে কি একটি তিন বছরের শিশুর কি পোশাকে শালীনতা লাগবে? কেন তবে এই তিন বছরের শিশুটি হচ্ছে ধর্ষণ ও হত্যার শিকার?
মূল ঘটনা হলো আমরা তথ্য-প্রযুক্তির ছোঁয়ায় হচ্ছি অত্যাধুনিক। আমাদের হাতের মুঠোয় আজ সারা পৃথিবী। আমরা সারাটাদিন প্রায় পড়ে থাকি ঘরে আবদ্ধ হয়ে। চোখগুলো সবার নিবিষ্ট মোবাইল, ট্যাব ও পিসির পর্দায়। সবার স্টোরেজ মেমরিগুলোতে ভরপুর পর্নোগ্রাফিতে। ওয়েবসাইটগুলোতে আছে অবাধ বিচরণ। খেলতে বেড়োইনা কোথাও। এভাবে এক উম্মত্ত ও উন্নাসিক মানসিক বিকৃতি নিয়ে বাস করছি সবাই।
ডিভাইসগুলোতে যা দেখি তা বাস্তবে করার জন্য মনটাও আকুপাকু করে। আর সেই সাইটগুলোতে বিকৃত মস্তিস্কের পাশবিকতাও দেখানো হয়। যার ফলে আমরা ভুলে যাই কোনটা নৈতিকতা আর কোনটা অনৈতিকতা।কোনটা মানবিক আর কোনটা অমানবিক। ফলে বেড়েই চলছে সমাজ বিধ্বংসী এ সকল কার্যকলাপ।
বড়দের প্রতি নেই সম্মান। ছোটদের প্রতিও নেই আর আগের মতো স্নেহ-মমতা। স্বামীর প্রতি নেই স্ত্রীর আস্থা। স্ত্রীর প্রতিও নেই স্বামীর বিশ্বাস। পরকীয়ায় সবাই মত্ত। বিশ্বাসহীনতার এ সময়ে আরো যোগ হয়েছে বিচার বিভাগের দীর্ঘসূত্রীতা।
পেশিশক্তির প্রভাবও এই সংস্কৃতির জন্য অনেকাংশেই দায়ী। আমরা ডুবেছি অবক্ষয়ে। আমরা মত্ত আজ মানবিকতামুক্ত, নৈতিকতাহীনতা ও ধর্মহীনতায়। আমরা আজ তলিয়ে যাচ্ছি ধ্বংসের অতল গহ্বরে। জাতির এ ক্রান্তি লগ্নে আমাদের
মানবিকতা ও নৈতিকতার চর্চা বড্ড প্রয়োজন।
লেখক: হাসিব মাহমুদ মোশাররফ
সাংবাদকর্মী
ডিআরইউর সভাপতি শুভ সম্পাদক মহিউদ্দিন
বলে লালা ব্যবহার গ্লেন ফিলিপসের, কী বলছে আইসিসি?
খাগড়াছড়িতে অপহৃত ব্যবসায়ীকে উদ্ধারের দাবিতে মানববন্ধন
যশোরে সড়ক দুর্ঘটনায় ১ শিশু নিহত
শুটিংয়ে মারা গেলেন মালয়েশিয়ার অভিনেত্রী কুইনজি চেং
সেঞ্চুরি করে ইতিহাস গড়লেন শান্ত
নৌকার মনোনয়ন দাখিলে ছাত্রলীগের দুগ্রুপের সংঘর্ষে আহত ৫