শীতের আগমণ


বাতাসে এখন হিমের ছোঁয়া। রহস্যময় কুয়াশায় প্রকৃতিতে ছাতিম আর শিউলি ফুলের মিষ্টি ঘ্রাণ। চিরচেনা সেই গন্ধই প্রকৃতিকে জানিয়ে দিচ্ছে শীতের বারতা। কবি বলেন- শিউলির প্রলোভনেই হেমন্তের হাত ধরে আসে শীত। ছাতিম আর শিউলি ফুলের ঘ্রাণ ছাড়া শীতের আগমন যেন নিষ্প্রাণ, ছন্দ-গন্ধহীন।হেমন্তকেই বলা হয় শীতের পূর্বাভাস। হেমন্তের রাতে এখন মৃদু কুয়াশা; বাতাসে শীতের হিম হিম স্পর্শ। কুয়াশার আঁচল সরিয়ে শিশিরবিন্দু মুক্তো দানার মতো দ্যুতি ছড়াতে শুরু করেছে ভোরের নরম রোদে।বাংলা বর্ষপঞ্জিতে কার্তিকের পর অগ্রহায়ণ পেরিয়ে পৌষ-মাঘ শীতকাল ধরা হলেও এবার মধ্য-কার্তিকেই শীত শীত অনুভূত হচ্ছে। নির্মল আকাশে থোকা থোকা মেঘের ভেলা। মেঘের আড়ালে সূর্যের দেখা মিলছে না অবিরত।দিনে গরম, রাতে শীতল হাওয়া আর ভোরের ঘন কুয়াশা বলে দিচ্ছে- শীত আর দূরে নেই। এর মধ্যে অনেকেই আলমারি থেকে শীতবস্ত্র বের করে রোদে মেলে দিচ্ছেন। গায়েও চাপিয়েছেন কেউ কেউ। শীতকে বরণ করার এও এক প্রস্তুতি।

গত দু'দিন ধরে পশ্চিমা বায়ু ও পুবালি বায়ুর প্রভাবে আকাশ মেঘলাসহ বিভিন্ন স্থানে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। ঝড়ো হাওয়া বয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় নদীবন্দরগুলোকে ১ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, মৌসুমি লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে। যার বর্ধিতাংশ উত্তর-পূর্ব বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত। আবহাওয়াবিদ রফিজুল ইসলাম বলেন, 'পরিবেশ বিপর্যয়ের কারণে এমন বিরূপ প্রভাব পড়েছে। কিছুদিন ধরে ভারত, পাকিস্তান ও নেপালেও এমন ধোঁয়াশা দেখা দিয়েছে।' তিনি আরও বলেন, 'ভারতের দিল্লি থেকে বিহার, পশ্চিমবঙ্গ ও পূর্বাঞ্চলের ৭ রাজ্য হয়ে ঘন কুয়াশার আবরণটি বাংলাদেশ পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে।'ষড়ঋতুর এই দেশে শীতের আগের ঋতুটি হেমন্ত। প্রকৃতিতে চলে বর্ষার বিদায় আর শীতের আগমনের প্রস্তুতি। প্রকৃতিতে শীত আসে একটু একটু করে। শিশিরে ভিজে লাল টকটকে হয়ে ওঠে চিলেকোঠার টবের লাল গোলাপ। শীতের শুস্ক-রুক্ষ প্রকৃতির অপবাদ ঘোচাতে এ সময় গাঁদা, মল্লিকা, গোলাপ, ডালিয়া, কসমস ফিরে পায় পূর্ণ জৌলুস; গাঢ় হয় কলাপাতার রঙ।হঠাৎ কুয়াশার আগমন সম্পর্কে আবহাওয়া দপ্তর জনায়, বাতাসে ধূলিকণা জমে যাওয়ার কারণে কুয়াশার মতো অনুভূত হতে পারে। আবহাওয়াবিদ সাইফুল আলম জানান, ধুলো-মেঘের কারণে সূর্যের আলো নিচে নামতে পারছে না।

এশিয়ার দেশগুলোতে বছরে একাধিকবার ফসল উৎপাদনের কারণেই আকাশে ধুলোর আস্তরণ জমছে। বাংলাদেশসহ এশিয়ার অন্য দেশেও এমন কুয়াশা পড়েছে। তিনি বলেন, 'আবহাওয়া ক্রমেই বৈরী আচরণ করছে। আগে একটা বড় সময় বিরতি দিয়ে অতি শীত, অতি গরম বা অতি বৃষ্টির ঘটনা ঘটত। কিন্তু এখন উল্টো ঘটছে। ভবিষ্যতে আবহাওয়া আরও বৈরী হয়ে উঠতে পারে। বৃষ্টি কমলেই শীতের দাপট বাড়তে থাকবে।'কুয়াশা ও শীতের কারণে মধুর বিপদে পড়েছেন কৃষক। শীত এবার দীর্ঘায়িত হলে শীতকালীন ফসল গম, ভুট্টা ও চায়ের উৎপাদন বাড়বে। শীতের স্বাভাবিক আচরণ ঠিক থাকলে যথাসময়ে আলু, গম, সরিষা ও ভুট্টা ঘরে তুলে একই জমিতে বোরো চাষ করতে পারবেন কৃষকরা। মাঠে এখন আলুর বীজ থেকে চারা গজিয়েছে। তৈরি হচ্ছে বোরো ধানের বীজতলা। শীত আগাম সবজির জন্য শুভ হলেও কুয়াশায় কোল্ড ইনজুরিতে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা করছেন কৃষিবিদরা। কৃষি বিশেষজ্ঞরা জানান, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে গত কয়েক বছর ধরে সিলেট অঞ্চলে শীতের সময়সীমা কমে যাচ্ছিল। ফলে চায়ের উৎপাদনও বছরের পর বছর কমে যাচ্ছে। শীত ক্রমেই পূর্বদিক থেকে উত্তরে প্রসারিত হওয়ার কারণে সিলেটের পর বাংলাদেশে চা উৎপাদনের নতুন কেন্দ্রে পরিণত হচ্ছে উত্তরবঙ্গ। এবারের শীত চা চাষের জন্য আশীর্বাদ হতে পারে।

প্রজন্মনিউজ২৪.কম/নাছির পাটোয়ারি