উল্টোপথে বাংলাদেশের ফুটবল

প্রকাশিত: ১৩ অগাস্ট, ২০১৭ ০২:৫৮:১০ || পরিবর্তিত: ১৩ অগাস্ট, ২০১৭ ০২:৫৮:১০

উল্টোপথে বাংলাদেশের ফুটবল

কেএম লুৎফর রহমান, ক্রীড়া প্রতিবেদক: বিশ্বের একটি জনপ্রিয় খেরার নাম ফুটবল। নাম শুনলেই ছোট-বড়,আবাল-বৃ্দ্ধ বনিতা সবার ভিতরে এক আনন্দ - উম্মাদনার পরিবেশ তৈরি হয়। কিন্তু বাংলাদেশের সেই ফুটবল খেলায় উম্মাদনা যেন স্তিমিত হয়ে পড়েছে।  

সারা বিশ্বে যে ফুটবল খেলা যুগ যুগ ধরে মানুষের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছে। ‘হাজার হাজার’ কোটি টাকা বিনিয়োগ করে চলছে ‘লাখ লাখ’ কোটি টাকা আয়ের চিন্তা। বাংলাদেশের ফুটবল সেখানে উল্টোপথে। বাংলাদেশের ফুটবল একটি লস প্রোজেক্টের নাম।

বিশ্বের দেশগুলোর সাথে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশের ফুটবল উন্নতির পথে আগাচ্ছেনা। বাংলাদেশের ফুটবল ফেডারেশন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত  আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করে জাতীয় ফটবল দল। এটি এএফসির সদস্য। দলটি এখন পর্যন্ত বিশ্বকাপের মূল পর্বে অংশগ্রহণের যোগ্যতা অর্জন করতে পারেনি।

এশিয়ান কাপে ১৯৮০ সালে তারা মাত্র একবার অংশ নিতে পেরেছে এবং সেখানে তারা প্রথম রাউন্ড থেকেই বিদায় নিয়েছে। বিশ্বের  অন্যান্য দেশের মত বাংলাদেশেও ফুটবল খেলাটি একটি জনপ্রিয় খেলা ।

কিন্তু তার উন্নতি না হওয়ায় খেলাটির জনপ্রিয়ত আস্তে আস্তে স্তিমিত হয়ে পরছে। স্বাধীনতার পর ১৭২ সালে দলটি প্রতিষ্ঠিত হয় এবং ১৯৭৪ সালে ফিফার  সদস্যপদ লাভ করে ১৯৮৬ সালে বাংলাদেশের প্রথম বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে  ইন্দোনেশিয়া ও থাইল্যান্ডের বিরুদ্ধে  শুভসূচনা করলেও বিজয় ধরে রাখতে পারেনি।

মহাদেশীয় প্রতিযোগিতা এশিয়ান কাপেও বাংলাদেশের ফলাফল আশানুরুপ নয়। বর্তমানে ঘরোয়া লীগ ও যুব ফুটবল উন্নয়নে কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে। ফুটবল উন্নয়নের এই সিদ্ধান্ত সঠিক সময়ে হয়েছে কিনা তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন অনেক ফুটবল বোদ্ধারা।

ফুটবল বাংলাদেশে এখনও খুব জনপ্রিয়। তার ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দল ২০০৩ সালের দক্ষিণ এশিয়ান ফুটবল ফেডারেশন কাপ চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। ৫০,০০০ সমর্থকের উপস্থিতিতে মালদ্বীপের বিরুদ্ধে টাইব্রেকারে বাংলাদেশ এ বিজয় অর্জন করেছে।

এই ফলাফল বাংলাদেশের কাছে এতদিন অধরাই থেকে যাচ্ছিল। জয়ের ধারায় বাংলাদেশ উপমহাদেশের পরাশক্তি ভারতকে ২-১ গোলে সেমিফাইনালে পরাজিত করে। বাংলাদেশের সবাই আশা করেন এ ধরনের ফলাফল মহাদেশীয় পর্যায়ে তাদেরকে সফলতা অর্জনে মাইফলক  হিসেবে কাজ করবে।

কাজী সালাউদদ্দিন বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় কিংবদন্তি খেলোয়ার। তিনি হংকংয়ে পেশাদারী ফুটবল খেলেছেন, যা কোন বাংলাদেশী ফুটবলার হিসেবে প্রথম। ২০১১ সালের ৬ সেপ্টেম্বর, আর্জেন্টিনা এবং নাইজেরিয়া মধ্যকার খেলা অনুষ্ঠিত হয় বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে।

যা ছিল বাংলাদেশ ফুটবলের সাম্প্রতিক স্মরণীয় ঘটনা।এসব সফলতা বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় খুবই নগন্য। বাংলাদেশ জাতীয় দলের কোচ অ্যান্ড্রু ওর্ড বলেন, বর্তমানে আন্তর্জাতিক ফুটবলে প্রতিযোগিতা করার মত অবস্থায় বাংলাদেশ নেই।

এএফসি অনূর্ধ্ব ২৩ চ্যাম্পিয়নশিপের বাছাইপর্বে ভরাডুবির পর একথা বলেছেন কোচ খোদ নিজেই। ফিলিস্তিন অভিযানে বাংলাদেশ তিন ম্যাচে ১৩ গোল খেয়েছে। তিনি বলেছেন, দোষ পুরোটাই ফুটবলারদের। ফিটনেস ঠিক রাখার মত কোন তাড়নাই খেলোয়ারদের মধ্যে নেই তাই এই ভড়াডুবি।

ফুটবল বিশ্বের শক্তিশালী দেশ গুলোর মধ্যে আর্জেন্টিনা ব্রাজিল ,জার্মানি,ফ্রান্স ,নেদারল্যান্ড,পর্তুগাল ,স্পেন   বিশ্বকাপের নিয়মিত পরাশক্তি হয়েছে অনেক আগেই। বাংলাদেশ তার ধারে কাছেও নেই।

১৯৭২ সালের ১৫ জুলাই প্রতিষ্ঠিত হয় বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন । ১৯৭৩ সালের ২৬ জুলাই, প্রথম অফিসিয়াল খেলায় থাইল্যাণ্ডে  মুখোমুখি হয় বাংলাদেশ। খেলাটি ২–২ সমতায় শেষ হয়।

২৬ জুলাই থেকে ১৪ আগস্ট পর্যন্ত এশিয়ার বিভিন্ন দলের বিপক্ষে ১৩টি প্রীতি খেলায় অংশগ্রহণ করে বাংলাদেশ, যার তিনটিতে ড্র এবং দশটিতে পরাজিত হয় তারা। এক বছর পর আরও দুইটি প্রীতি খেলায় তারা অংশগ্রহণ করে এবং দুইটিতেই পরাজিত হয়।

এশিয়া কাপ বাছাইপর্বেও তাজিকিস্তানের কাছে হেরে যায়। পরে ভুটানের কাছে প্লে অফ ম্যাচে হেরে এশিয়া কাপে খেলার যোগ্যতা হারায়। যাকে বাংলাদেশের ফুটবলের ইতিহাসে একটি কালো অধ্যায় হিসেবে ঊল্লেখ করা হয়।

এই হারের ফলে পর্রবর্তী বাছাইপর্বের আগে ফ্রেন্ডলি ম্যাচ ছাড়া আর কোন খেলা নেই। তবে এই সময় বয়সভিত্তিক ও জাতীয় দলকে দেখবালের জন্য এন্ড্রিউ ওর্ডকে নিয়োগ দেয়া হয়। তাই বাংলাদেশের ফুটবলকে এগিয়ে নেয়ার জন্য আর বড় পদক্ষেপ নিতে হবে ফুটবল ফেডারেশনকে।

এমনটাই মনে করেন এদেশের ফুটবল প্রিয় দর্শকেরা। বিশ্বকাপ কিংবা অন্য বড় কোন টুর্নামেন্ট খেলার জন্য বাংলাদেশ দলকে বেশি বেশি আন্তর্জাতিক পর্যায় ম্যাচ খেলতে হবে। বাংলাদেশ প্রিমিয়ারলীগ সহ বিভিন্ন ধরনের টুর্নমেন্টের আয়োজন করতে হবে।

যাতে করে খেলোয়াররা তাদের যোগ্যতাকে প্রমান করতে পারে এবং মানেসিকভাবে তারা আর উন্নতি করতে পারে। তাহলেই হয়তো মামুনুল ইসলাম, জাহিদ হাসান এ্যামিলি, তপু বর্মণ জামাল ভৈঞার মত ফুটবল খেলোয়াররা বাংলাদেশের ফুটবলকে কাঙ্ক্ষিত মানে নিয়ে যেতে পারবেন।

বর্তমানে কঠিন অবস্থা পার করছে এদেশের ফুটবল।কিছুদিন আগে ভুটানের কাছে হেরে চরম লজ্জায় পরেছে লাল-সবুজের দল।এই ব্যর্থতায় ‍র‌্যাঙ্কিংয়েও  অনেক অবনতি হয়েছিল বাংলাদেশের ফুটবলে। তবে এবার এক ধাপ এগিয়েছে তারা।

ফিফার সর্বশেষ ‌‌র‌্যাঙ্কিংয়েও ১৯০তম স্থান থেকে ১৮৯তম স্থানে উঠে এসেছে বাংলাদেশ।এরপর মালদ্বীপ রয়েছে ১৪২, আফগানিস্তান ১৫৬, ভুটান ১৬৫, নেপাল ১৬৯, শ্রীলঙ্কা ১৯৭ এবং পাকিস্তান ২০০তম স্থানে রয়েছে।

তবে দক্ষিণ এশিয়ার দলগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ভালো অবস্থানে আছে ভারত। তাদের অবস্থান ৯৭তম।এদিকে শীর্ষস্থানে ফিরেছে ব্রাজিল। আর জার্মানি দ্বিতীয় স্থানে নেমে গেছে। তিন নম্বরে আছে আর্জেন্টিনা। চার ও পাঁচ নম্বরে রয়েছে সুইজারল্যান্ড ও পোল্যান্ড।

বর্তমানে জাতীয় ফুটবল দলের কোচের দায়িত্ত্ব পালন করছেন অ্যান্ড্রু ওর্ড। কিন্তু এ অবস্থায় বাফুফে আর ওর্ডের মধ্যে চলছে ভিন্ন রকম বক্তব্য।জাতীয় দলের কোচ বলেন এক আর বাফুফে বলেন আরেক কথা। এরকম অবস্থা আগেও ছিল এখন আছে।

সব শেষ অ্যান্ড্রু ওর্ড বলেন,আমি জাতীয় দলের প্রধান কোচ আর অনূর্ধ্ব-১৮ দলের কেবল উপদেষ্টা।অপরদিকে বাফুফে বলছে ওর্ডই অনূর্ধ্ব-১৮ দলের প্রধান কোচ।এবিষয় জাতীয় দলের ম্যানেজার সত্যজিৎ দাশ রুপু বলেন ওর্ডই অনূর্ধ্ব -১৮ দলের প্রধান কোচ।তার সঙ্গে সেভাবেই কথা হয়েছে।

গতকাল বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে প্রিমিয়ার লীগের খেলা দেখতে আসেন ওর্ডে।সাংবাদিকরা তার সঙ্গে কথা বলতে চাইলে তিনি রাগান্বিত হয়ে কোন কথাই বলেননি।এ পরিস্থিতিতে তিনি কতটুকু সফলাতার মুখ দেখাতে পারবে বাংলাদেশের ফুটবল অঙ্গনে সেটাই এখন দেখার বিষয়।

পাঠকের মন্তব্য (০)

লগইন করুন





ব্রেকিং নিউজ