সিন্ডিকেটের কবলে ঢামেক-৩

কর্মচারীদের ৮০ এম্বুলেন্সের কাছে জিম্মি লাখো রুগী

প্রকাশিত: ০৯ অগাস্ট, ২০১৭ ০৬:৫৫:০৭ || পরিবর্তিত: ০৯ অগাস্ট, ২০১৭ ০৬:৫৫:০৭

কর্মচারীদের ৮০ এম্বুলেন্সের কাছে জিম্মি লাখো রুগী

সাইফুর ইসলাম মাসুম, নিজস্ব প্রতিবেদক: ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের রমরমা এম্বুলেন্স ব্যবসার কাছে জিম্মি পুরো হাসপাতালের লাখো রুগী ও তাদের স্বজন। প্রায় ৮০-১০০টি নিজস্ব এম্বুলেন্সের মাধ্যমে দিন-রাত ২৪ ঘন্টা রোগীর স্বজনদের পকেট কাটতে সক্রিয় একটি চক্রটি।

গত কয়েকদিনের নজরদারী ও বিভিন্ন মহলে সাথে কথা বলে এমনই ভয়াবহ চিত্র তুলে এনেছে প্রজন্মনিউজ২৪কম।

সরেজমিনে দেখা যায়, কোনো রোগী ঢাকা মেডিকেলে সেবা নিয়ে নিজস্ব গাড়ী বা এম্বুলেন্স নিয়ে হাসপাতাল ত্যাগ করলে চাইলে পথ রোধ করে দালাল চক্র। এমনকি কোনোভাবেই হাসপাতাল থেকে তাদের গাড়ী ছাড়া নিজস্ব যানবাহনে বের হওয়া যায়না। এমনকি কোনো ব্যাক্তগত গাড়ীও জরুরী বিবাগের সামনের পার্কিংয়ে রাখতে চাইলে নিয়ম বহিভূতবাবে চক্রের চাহিদা মতো বকশিস দিতে বাধ্য করা হয়।

এছাড়া হাসপাতালের জরুরী বিভাগের সামনে সরকারি এম্বুলেন্স ও ভাড়ার চার্ট থাকার বিধান থাকলেও তা মানার বালাই নেই। এমনকি সরকারি এম্বুলেন্স নিতে গেলেও সর্বনিম্ন ভাড়া তো দূরের কথা আগে চুক্তি করে গলাকাটা বাড়া নির্ধারণ হলে পরে মেলে সেবা।

এছাড়া বিভিন্ন বেসরকারি এম্বুলেন্স হাসপাতালের সামনে ও বাইরের রাস্তায় প্রস্তুত রাখা হয়। কোনো রোগীর স্বজন যানবাহন চাইলেই নানা অজুহাতে তাদের সেই এম্বুলেন্সে চড়তে বাধ্য করা হয়। সাধারণত পুরানো মাইক্রোবাস কিনে তাতে রং করে এম্বুলেন্স বানিয়ে শুরু হয় এসব ব্যবসা। নামে এম্বুলেন্স হলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সাইরেন ছাড়া তেমন কোনো বিশেষ সেবা চোখে পড়েনি অধিকাংশ গাড়ীতে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অভ্যন্তরে ও বাহিরে ৮০-১০০টি এম্বুলেন্সের মাধ্যমে এ এম্বুলেন্স সেবা নিয়ন্ত্রন করছে হাসপাতালটির বিভিন্ন শ্রেণীর কর্মকর্তা-কর্মচারির একটি চক্র। যারা বিভিন্ন দালাল ও অতিউৎসাহী ব্যাক্তির মাধ্যমে এ ব্যবসা নিয়ন্ত্রন করছেন। এর মাধ্যমে হাসপাতালে আসা রোগীর স্বজনদের কাছ থেকে প্রতিদিন কয়েক লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। স্বজনদের জিম্মি করে মোটা অঙ্কের এ টাকা আদায় করছেন অ্যাম্বুলেন্স ব্যবসায়ীরা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক এম্বুলেন্স ড্রাইভার বলেন, রোগীরা সব সময় সরকারি এম্বুলেন্স পান না। তাদের বিপাক থেকে বাঁচাতে ও স্বল্প সময়ে এম্বুলেন্স সেবা পেতে আমরা সাহায্য করি। রোগীদের সেবা দিতে বেসরকারিভাবে ৮০-১০০টির মতো এম্বুলেন্স রয়েছে বলেও জানান তিনি।

জানা গেছে, ঢামেক ঘিরে এসব এম্বুলেন্সের মালিক ওই হাসপাতালের তৃতীয়-চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী। ঢাকা মেডিকেলের প্রায় ৮০টি এম্বুলেন্স মালিকের মধ্যে ১০৩ নম্বর ওয়ার্ডের অপারেশন থিয়েটারের এমএলএসএস কামালের দুটি, মাহফুজের দুটি, বার্ন ইউনিটের রেকর্ড কিপার শেখ মো. ওমর ফারুকের দুটি, এমএলএসএস আলমগীরের দুটি, জাকিরের একটি, মেডিসিন ওয়ার্ডের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী কামালের একটি, একই ওয়ার্ডের দীনার একটি, চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী সুমন আলীর একটি, টিকিট কাউন্টারের মনোয়ার আলীর একটি, ভাই জমির আলীর একটি, ৩০৩ নম্বর ওয়ার্ডের এমএলএসএস আক্তারের একটি, তার শ্যালকের একটি করে অ্যাম্বুলেন্স রয়েছে।

এছাড়াও একই হাসপাতালের জমদ্দার সুমনের দুটি, এমএলএসএস বিউটির দুটি যার একটির ড্রাইভার তার স্বামী আবুল হোসেন। হাসপাতালের গাড়িচালক মো. আলী, নাজির ও মেডিকেল শাখার হাশেমেরও অ্যাম্বুলেন্স ব্যবসা রয়েছে। এমনকি ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গের ডোম সেকান্দারের তিনটি এম্বুলেন্স রয়েছে। বাকিগুলোর মধ্যে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে হাসপাতালেরই কর্মকর্তা-কর্মচারির নিয়ন্ত্রন রয়েছে।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে সরকারি জায়গায় অবৈধভাবে বেসরকারি এই অ্যাম্বুলেন্স ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করেন চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী দীনা, হাসেম, ওসমান, রমিজ।  তাদের প্রভাবে অন্যকোনো বেসরকারি এম্বুলেন্সও এখানে সেবা দিতে পারেনা। এ নিয়ে একাধিকবার গনমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হলেও যেন দেখার কেউ নেই।

ঢামেক হাসপাতালের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী জসিম প্রজন্মনিউজকে বলেন, অনেক আগে থেকেই অ্যাম্বুলেন্স ব্যবসার সঙ্গে জড়িত তিনি। অ্যাম্বুলেন্স ব্যবসা করতে গিয়ে বিভিন্ন জায়গায় টাকা দিতে হয়। ঢাকা মেডিকেলের সামনে এ ব্যবসা হাশেম ও জামাল দেখাশোনা করে বলেও জানান তিনি। প্রতিসপ্তাহে অ্যাম্বুলেন্স প্রতি তিনশ' টাকা করে চাঁদা তোলেন।

পুরনো গাড়ি কেটে অবৈধভাবে অ্যাম্বুলেন্স তৈরি করে ব্যবসা করে আসছে এসব ব্যবসায়ী। অ্যাম্বুলেন্সের ভেতরে মুমূর্ষু রোগীর জন্য যেসব সেবা থাকার কথা তা ছিটেফুটা ও নেই এসব এম্বুলেন্সে। নেই পর্যাপ্ত সেবার ব্যবস্থা।

এ বিষয়ে হাসপাতালের সহকারী পরিচালক (প্রশাসন) ডা. খাজা আবদুল গফুর প্রজন্মনিউজকে বলেন, বার্ন ইউনিটসহ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এখন ছয়টি অ্যাম্বুলেন্স রয়েছে। এর মধ্যে একটি অকেজো। প্রয়োজনের তুলনায় অ্যাম্বুলেন্সের সংখ্যা অনেক কম।

তিনি আরও বলেন, হাসপাতালের বাহিরে বেসরকারিভাবে কেউ অ্যাম্বুলেন্স ব্যবসা করলে তা নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের নয়। তবে হাসপাতালের কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী অ্যাম্বুলেন্স ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

 

প্রজন্মনিউজ২৪/সাইফুল/নুর

পাঠকের মন্তব্য (০)

লগইন করুন



আরো সংবাদ