বন্যা হওয়ার ৮ কারণ

প্রকাশিত: ১৩ জুলাই, ২০১৭ ১১:৩৫:০৮

বন্যা হওয়ার ৮ কারণ

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ঘনঘন বন্যাকবলিত হচ্ছে দেশ। মধ্য এপ্রিল থেকে শুরু করে আগস্টের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে বন্যা আসার মৌসুম ধরা হলেও গত কয়েক বছর ধরে এপ্রিলের শুরুতেই বন্যা চলে আসছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন প্রধানত জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে আগাম বন্যা দেখা দিচ্ছে। একই সঙ্গে ঘনঘন বন্যা হওয়ার পেছনে ৮টি কারণ চিহ্নিত করেছেন তারা। বুয়েটের পানি ও বন্যা ব্যবস্থাপনা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক একেএম সাইফুল ইসলাম  বলেন, এখন ভরতের আসামসহ কয়েকটি প্রদেশ ও বাংলাদেশের পাহাড়ি অঞ্চলে অল্প বৃষ্টি হলেই বন্যা হয়ে যায়। এর কয়েকটি কারণ আমরা নির্ধারণ করেছি। এগুলো হলো- বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তন, নদীর তলদেশ ভরাট, নদীর পাড় দখল, নগরায়ণের ফলে জলাভূমি দখল, গাছপালা ও পাহাড় কাটায় নদীর তলদেশে পলি বৃদ্ধি, সময়মতো বন্যা প্রতিরোধকারী অবকাঠামো মেরামত না করা, বন্যা ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে সরকারি সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয়ের অভাব ও আগাম বন্যার তথ্য প্রচার শক্তিশালী না করা। দুযোর্গ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকেও সংশ্লিষ্ট জেলার ডিসিগুলোর রিপোর্টের ভিত্তিতে বন্যার কারণ নির্ধারণ করা হয়েছে। এগুলোর সঙ্গে বিশেষজ্ঞদের নির্ধারিত কারণগুলোর সমন্বয় করে আগামীতে বন্যার কারণ ও বন্যা কবলিত হওয়ার পর যুগোপযোগী করণীয় নির্ধারণ করা হবে।

বিশেষজ্ঞরা জানান, বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বায়ুমণ্ডল গরম থাকে। বাতাসে প্রচুর পরিমাণ জলীয়বাষ্প বহন করে। এগুলো জমতে জমতে একপর্যায়ে ভারি বৃষ্টিপাত হয়। আর ভারতের কয়েকটি রাজ্যসহ বাংলাদেশের পাহাড়ি অঞ্চল থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে প্রথমে উত্তরাঞ্চলে বন্যা হয়। এটি বিভিন্ন নদনদী দিয়ে বঙ্গোপসাগরে নেমে যায়। এসব নদনদীর তলদেশে পলি জমে নাব্যতা সংকট হওয়াসহ নদীগুলোর পাড় দখল করে নদনদীকে সংকুচিত করায় এখন সামান্য পানি নামলেই নদী তীরবর্তী এলাকা প্লাবিত হয়। এছাড়া কয়েক দশক আগে সারাদেশে পর্যাপ্ত পানি রিজার্ভ করার মতো জলাশয় ছিল। কিন্তু বর্তমানে নগরায়ণের ফলে সেসব জলাশয়ের অধিকাংশই দখল হয়ে যাওয়ায় পানি রিজার্ভের জায়গা নষ্ট হয়ে গেছে। পাহাড়ি অঞ্চলের বৃক্ষ কেটে উজাড় করায় বৃষ্টিতে পাহাড় কেটে নদীতে পালি ও মাটি জমে। এতে নদীর নাব্যতা সংকট দেখা দেয়ায় বর্ষা মৌসুমে বন্যার সৃষ্টি হয়। এছাড়া, সংশ্লিষ্ট জেলাগুলোয় পানি উন্নয়ন বোর্ড, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরসহ বিভিন্ন সরকারি সংস্থা বন্যা মোকাবিলায় কাজ করে থাকে। এসব সংস্থার মধ্যে সমন্বয়হীনতার কারণেও অল্প বৃষ্টিতে বন্যার সৃষ্টি হয়। সময়মতো বন্যা প্রতিরোধকারী অবকাঠামো উন্নয়ন না করা ও বন্যার তথ্য প্রচার শক্তিশালী না করার কারণে হঠাৎই বন্যা দেখা দেয়।

সাধারণত বছরের এপ্রিল মাসে পাহাড়ি ঢলে দেশের হাওর অঞ্চলে প্রি-মৌসুমি বন্যা হয়ে থাকে। এতে সংশ্লিষ্ট এলাকার বাড়িঘর না তলালেও ফসল তলিয়ে যায়।

কিন্তু চলতি বছর মার্চ মাসেই প্রি-মৌসুমি বন্যা শুরু হয়ে যায়। অন্যদিকে বছরের মধ্য জুলাই থেকে আগস্টের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে মৌসুমি বন্যা শুরুর সময় হলেও চলতি বছর মৌসুমী বন্যা শুরু হয়েছে জুলাই মাসের শুরুতেই। গত মার্চে হাওর অঞ্চল প্রি-মৌসুমি বন্যার কবলে পড়ার পর জেলা প্রশাসনগুলোর পক্ষ থেকে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়কে জানানো হয়, পাহাড়ি ঢল ও অতি বৃষ্টির কারণে আগাম বন্যা হয়েছে। কিন্তু মন্ত্রণালয় মনে করে, এর পেছনে অন্য কোনো কারণ থাকতে পারে। এ কারণে গত মে মাসে আগাম বন্যার কারণ ও করণীয় খুঁজতে সংশ্লিষ্ট জেলার ডিসিদের নির্দেশনা দিয়েছে সরকার। ওই নির্দেশনার পাশাপাশি আগামীদিনে এ ধরনের বন্যা হলে কী করণীয় হতে পারে তা-ও জানাতে বলা হয়েছে। ডিসিদেরকে কৃষি, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়সহ মাঠপর্যায়ে কর্মরত সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপ করে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী কারণ ও সুপারিশগুলো পাঠাতে বলা হয়। চিঠি পাওয়ার পর সংশ্লিষ্ট জেলাগুলোর ডিসিরা কারণ অনুসন্ধান করে এবং বন্যায় করণীয় বিষয় উল্লেখ করে সুপারিশ পাঠিয়েছে মন্ত্রণালয়ে।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. শাহ কামাল জানান, জেলার ডিসিরা বন্যার কারণ অনুসন্ধান করে কয়েকটি কারণের তালিকা পাঠিয়েছে আমাদের কাছে। এতে বলা হয়েছে প্রধানত ভারতের কয়েকটি অঞ্চলে হওয়া বন্যার পানি, পাহাড় থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানি, সংশ্লিষ্ট এলাকায় পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত, পর্যাপ্ত বন্যা প্রতিরোধী অবকাঠামোর অভাব ও নদীর নাব্যতা সংকটের কারণে এমন বন্যা হয়ে থাকে। সঙ্গে সঙ্গে বন্যার সময় করনীয় বিষয়গুলোর বিষয়েও তারা সুপারিশ পাঠিয়েছে। এগুলো নিয়ে ইতিমধ্যে আমরা কয়েকটি বৈঠক করেছি। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় ও আন্তঃমন্ত্রণালয় সমন্বয় কমিটির উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাদের নিয়েও বৈঠক করা হয়েছে।

যে রিপোর্ট আমরা পেয়েছি এটি নিয়ে জাতীয় বিশেষজ্ঞরা বিশ্লেষণ করবেন। এরপর চূড়ান্ত রিপোর্ট তৈরি করে সেই অনুযায়ী বন্যা মোকাবিলায় বিভিন্ন যুগোপযোগী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তবে এখন পর্যাপ্ত পরিমাণে ত্রাণ বিতরণ ও ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার মানুষের পাশে দাঁড়ানোর বিষয়ে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে।

এ সম্পর্কিত খবর

ঢাকা শিশু হাসপাতালে আগুন, নিয়ন্ত্রণে ৫ ইউনিট

ভোট দিতে গিয়ে শুনলেন তিনি মারা গেছেন, নিরাশ হয়েই ফিরলেন বৃদ্ধা

ইরানে হামলার পর নাগরিকদের ইসরায়েল ছাড়তে বলল অস্ট্রেলিয়া

ছাত্রলীগ নেতার পর একই নারীর সঙ্গে ইউপি চেয়ারম্যানের ভিডিও ভাইরাল

কণ্ঠের সুরক্ষায় ঝাল-তৈলাক্ত খাবার পরিহারের পরামর্শ

৩টি ড্রোন ধ্বংস করল ইরান, নিরাপদে আছে ইসফাহানের পারমাণবিক স্থাপনা

আগামীকাল ফিটনেস পরীক্ষা, থাকছেন কি সাকিব?

ফরিদপুরে মন্দিরে আগুন, এলাকাবাসীর পিটুনিতে নিহত ২

ঈদের আমেজ কাটেনি বাজারে, ফাঁকা ঢাকাতেও দাপট গরু-খাসির

ভাসানচর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এক ব্যক্তিকে গলা কেটে হত্যা

পাঠকের মন্তব্য (০)

লগইন করুন



আরো সংবাদ














ব্রেকিং নিউজ