মহিষ কখন গরু হয়

প্রকাশিত: ১৭ জুন, ২০১৭ ১১:৫৯:০৮

মহিষ কখন গরু হয়

মগবাজারের দিলু রোডের বাসিন্দা জিল্লুর রহমান কারওয়ানবাজারে গিয়েছিলেন মহিষের মাংস কিনতে। এক দোকানে তিনি কী মাংস জানতে চান তিনি। বিক্রেতা বলেন, গরুর মাংস। এরপর অন্য দোকান ঘুরে এসে সেই একই দোকানে জিল্লুর জিজ্ঞেস করেন, মহিষের মাংস আছে কি না। এবার বিক্রেতা জবাব দেন, ‘এইটাই মহিষের মাংস।’ কিছুক্ষণ আগে যে বললেন গরুর মাংস-অবাক হয়ে জানতে চান জিল্লুর। এরপর ওই বিক্রেতা বলেন, ‘আরে এইটাই গরু, এইটাই মহিষ।

 গাবতলী হাটে রাতে অপেক্ষা করলেই দল বেঁধে মহিষ নিয়ে আসতে দেখা যায় নগরীর জবাইখানাগুলোর দিকে। জবাইখানা থেকে সেগুলো যায় বিভিন্ন বাজারে। কিন্তু বাজারে গিয়ে মহিষের মাংস পাওয়া যায় না। বিক্রেতারা সবাই বলেন, তারা বিক্রি করেন গরুর মাংস। তাহলে এত মহিষ যায় কোথায়? জবাব নেই কারও কাছে। ঢাকা সিটি করপোরেশন চলতি রমজানে গরুর মাংসের দাম নির্ধারণ করেছে কেজিপ্রতি ৪৭৫ টাকা আর মহিষের ৪৪০ টাকা। অর্থাৎ কেজি প্রতি দরের পার্থক্য ৩৫ টাকা।

আর এই পার্থক্যই মহিষকে গরু হিসেবে বিক্রি করে দেয়ার কারণ। বিষয়টি নিয়ে মাংস বিক্রেতা, জবাইখানার কর্মী এবং সিটি করপোরেশনের কর্মীদের মধ্যে এক ধরনের সখ্য রয়েছে। সিটি করপোরেশনের দুটি জবাইখানায় গিয়েও সেখানে কতগুলো মহিষ আর কতগুলো গরু জবাই হয়েছে তার কোনো হিসাব পাওয়া গেল না। সেখানকার কেউই এই তথ্য দিতে রাজি নয়। রাজধানীর বিজিবির সদরদপ্তর পিলখানার পাশেই একটি জবাইখানা রয়েছে সিটি করপোরেশনের। রাতে এখানে জবাইয়ের পরই মাংস আশেপাশের বাজারে নিয়ে যান বিক্রেতারা।

পশু জবাইয়ের আগে সেগুলোর স্বাস্থ্য পরীক্ষার নিয়ম আছে। তবে সেটা মানা হয় কমই। আবার বাজারে নেয়ার আগেই মাংসের গায়ে সিল দেয়ার কথা। এ ক্ষেত্রে গরু এবং মহিষের আলাদা সিল থাকার কথা। কিন্তু সেই সিল কি কখনও নগরবাসী দেখে? পান্থপথ এলাকার বাসিন্দা রাহাত কারওয়ান বাজার গরুর মাংস কিনতে এসে বারবার দোকানিকে অনুরোধ করছিলেন যেন গরুর মাংস বলে তাঁকে মহিষের মাংস না দেয়া হয়। কারণ তিনি গরুর মাংস ও মহিষের মাংসের মধ্যে পার্থক্য জানেন না।

রাহাত বলেন, ‘আমার বাজার করার অভিজ্ঞতা নেই বললেই চলে। বাবা বাসায় না থাকায় আম্মু গরুর মাংস কেনার জন্য আমাকে টাকা দিয়ে বারবার বলেন, দেখো আবার মহিষের মাংস নিয়ে এসো না। কিন্তু আমি কি করে বুঝব কোনটা গরুর মাংস আর কোনটা মহিষের? কাওরান বাজারের মাংস ব্যবসায়ী আমজাদ বলেন, ‘অনেক ব্যবসায়ী আছে যারা গরু বলে মহিষ বিক্রি করে। বেশির ভাগ ক্রেতা গরু-মহিষের  মাংসের পার্থক্য বোঝে না। আমরা যেটা দেই সেটাকে আসল গরুর মাংস মনে করে নিয়া যায়।

 মাংস ব্যবসায়ী আমজাদ অনেক বছর এই ব্যবসার সাথে আছেন। তাই তিনি ও তাঁর মতো যারা মাংস ব্যবসার সাথে জড়িত তাঁরা সহজেই বলে দিতে পারেন কোনটা মহিষের কোনটা গরুর। কিন্তু সাধারণ মানুষ কি করে পার্থক্য করবেন গরু ও মহিষের মাংসের? আমজাদ বলেন, ‘মহিষের মাংস লালচে হয়। আর গরুর মাংসে লালচে ভাবটা থাকে কম। গরুর মাংসের মাঝখানে থাকা রেওয়াজের (চর্বি সদৃশ) ভিন্নতা রয়েছে। যেমন ষাঁড়ের রেওয়াজ সাদা, গাভীর রেওয়াজ হলুদ, মহিষের রেওয়াজ সাদা।

গরুর মাংসে চর্বি বেশি, মহিষের মাংসে কম। মহিষের মাংসের আঁশ মোটা হয়, গরুর মাংসের আঁশ চিকন হয়।’অনেক বড় গরুর মাংসের আঁশ মোটা হয়। তাই অনেক সময় সঠিকভাবে বোঝা যায় না কোনটা গরুর কোনটা মহিষের। মাংস ব্যবসায়ী আমজাদের দোকান মাড়িয়ে কয়েক কদম সামনে এগিয়ে আরেক মাংস ব্যবসায়ীর কাছে জানতে চাইলে তিনি মহিষের মাংস বিক্রির কথা অস্বীকার করেন। অথচ পাশের দোকানি আমজাদের তথ্য মতে, এই দোকানে যে মাংস ছিল সবই ছিল মহিষের।

এই কথা জানানোর পর ওই মাংস বিক্রেতা সুর পাল্টে ফেলেন। স্বীকার করেন, তার কাছে যে মাংস আছে সেটা মহিষের। আরেক মাংসের ব্যবসায়ী বাদল হোসেন কে বলেন, ‘আমরা মহিষের মাংস বিক্রি করি। মানুষকে বলে দেই বাবা এটা মহিষের মাংস, এটা গরুর দেইখ্যা নেন।’ মহিষের মাংস চেনার উপায় সম্পর্কে এই বিক্রেতা বলেন, ‘মাংস লাল ও আঁশ বেশি। গরুর মাংসের লাল রঙটা কম, কিছুটা সাদাটে এবং আঁশ কম। মহিষের চাইতে গরুর মাংসের স্বাদ বেশি।’ কাওরান বাজারে কমবেশি সব দোকানে মহিষের মাংস বিক্রি হয়।

মহিষের মাংসের ক্রেতাদের বেশির ভাগই রেস্টুরেন্ট ব্যবসায়ী। মাংস ব্যবসায়ীদের তথ্যমতে, বিভিন্ন রেস্টুরেন্টে কালো ভুনা তৈরি হয় মহিষের মাংস দিয়ে। গরুর মাংস বেশি সময় ধরে জ্বাল  দিলে গলে যায়, কিন্তু মহিষের মাংস তুলনামূলক বেশি জ্বাল সইতে পারে। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের কারওয়ান বাজার আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা এস, এস, অজিয়র রহমান কে বলেন, ‘কারওয়ান বাজারই একমাত্র বাজার যেখানে মহিষের মাংস, মহিষের মাংস ডিক্লেয়ার করে বিক্রি করা হয়। তবে দু একটা ব্যতিক্রম হতেও পারে।

 প্রতিদিন কারওয়ান বাজার কী পরিমাণ মহিষ জবাই হয় এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘বাজার মনিটর যারা করে তাদের কাছে এর ডাটা পাওয়া যাবে, আমাদের কাছে নাই তবে প্রয়োজন পড়লে তারা আমাদের দিয়ে যায়

প্রজন্মনিউজ২৪/আ.হামিদ

 

পাঠকের মন্তব্য (০)

লগইন করুন



আরো সংবাদ














ব্রেকিং নিউজ