প্রশ্ন: ইকামতের সময় মুসল্লিগণ কখন দাঁড়াবেন?

প্রকাশিত: ১১ জুন, ২০১৭ ০৪:৫২:৫০

প্রশ্ন: ইকামতের সময় মুসল্লিগণ কখন দাঁড়াবেন?

কেউ কেউ ইকামতের পূর্বেই দাঁড়িয়ে যায় কেউ বা "হাইয়্যা য়া'লা চ্ছালাহ্" বলার পরে দাঁড়াতে দেখা যায়; কোনটি সঠিক প্রদ্ধতি

হযরত আবু কাতাদাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলে করীম [ﷺ] ইরশাদ ফরমায়েছেনঃ

عن أبى قتادة قال قال رسول الله [ﷺ] إزا أقيمت الصلاة فلا تقوموا حتى ترونى.

"নামাযের ইকামত দেওয়া শুরু হলে তোমরা আমাকে (হুজরা শরীফ থেকে বের হতে) দেখার পূর্বে দাঁড়াবে না।"

হাদিস থেকে কয়েকটি বিষয় প্রতিয়মান হয়ঃ

(১) প্রিয় নবীজী [ﷺ] ইকামত শুরু হওয়ার পর হুজরা মোবারক থেকে বের হতেন।

(২) হুজুর [ﷺ] বেরিয়ে আসার পূর্বে মুসল্লিদের দাঁড়াতে নিষেধ করেছেন।

(৩) ইকামতে দাঁড়ানোর বিষয়টি ইমামের সাথে সম্পৃক্ত।

প্রকাশ থাকে যে, প্রিয় নবীজী [ﷺ]'র হুজরা মোবারক মসজিদে নববী'র মেহরাবের অতি নিকটবর্তী ছিল। অতি সামান্য ব্যবধানেই তিনি মেহরাবে তাশরীফ নিতেন।

[(ক) আবূ দাউদ; খন্ড-০১, পৃ.১৪৮, হাদীস: ৫৩৯, ৫৪০;

(খ) তিরমিযী; খন্ড-০২, পৃ.৪৮৭, হাদীস: ৫৯২;

(গ) নাসাঈ; খন্ড-২, হাদীস: ৬৮৭;

(ঘ) সহীহ ইবনু হিব্বান; খন্ড-৫, পৃ.৬০১, হাদীস:২২২৩

(ঙ) শুয়াবুল ঈমান; খন্ড-২, পৃ.২০, হাদীস: ২১২০;

(চ) সহীহ মুসলিম; খন্ড-০১, পৃ.৪২২, হাদীস: ৬০৪]

রাসূলাল্লাহ [ﷺ] হুজরা শরীফ থেকে ইকামতের কোন মুহূর্তে মেহরাবে আসতেনঃ

ব্যাপারে মোল্লা আলী ক্বারী (রহঃ) "মিরকাতুল মাফাতীহ" গ্রন্থে লিখেনঃ

لعله عليه الصلاة والسلام كان يخرج منا الحجرة بعد شروع المؤزن في الاقامة ويدخل في محرب المسجد عند قوله حي على الصلاة .

"আর সম্ভবত নবী করিম [ﷺ] হুজরা শরীফ থেকে বের হতেন মুয়াজ্জিন ইকামত শুরু করার পর এবং 'হাইয়্যা আলাছ ছালাহ' বলার সময় তিঁনি মেহরাবে প্রবেশ করতেন।" [মিরকাতুল মাফাতীহ লিল মোল্লা আলী ক্বারী]

নবী করিম [ﷺ] ইকামত বলা শুরু করার পরই হুজরা শরীফ থেকে বের হতেন এবং তাঁকে দেখার পূর্বে দাঁড়াতে নিষেধ করেছেন। সুতরাং হাদীসের মাধ্যমে বুঝা গেল ইকামতের পূর্বে দাঁড়ানো নিষেধ।

 ইকামতের পূর্বে না পরে কাতার সোজা করবেনঃ

[ عن انس بن مالك رضى الله عنه قال: اقيمت الصلاة فاقبل علينا رسول الله بوجهه فقال: وأقيموا صفوفكم وتراصوا فإنى أراكم من وراء ظهرئ. ]

অর্থাৎঃ খাদেমে রাসূল হযরত আনাস বিন মালেক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, "নামাযের ইকামত হয়ে গেছে। অতঃপর প্রিয় রাসূল [ﷺ] আমাদের দিকে সামনা-সামনি হয়ে ফিরে গেলেন এবং বললেনঃ তোমাদের কাতার বা লাইনসমূহ সোজা কর এবং একে অন্যের সাথে লাগিয়ে মিলিয়ে দাঁড়াও। কেননা নিশ্চয়ই আমি আমার পিছনের দিক থেকেও তোমাদেরকে দেখতে পাই।" [বুখারী শরীফ; ১ম খন্ড, পৃ.১০০, হাদীস: ৭১৯]

বর্ণিত হাদিস থেকে বুঝা গেল, ইকামত বলার পূর্বে না দাঁড়ানো, তাকবীরে তাহরীমা'র পূর্বে (ইকামতের পূর্বে নয়) কাতার সোজা করা, এবং পিছনের দিক থেকেও অদৃশ্যে জ্ঞানের বদৌলতে মুসল্লিগণের রুকু, সিজদা এমনকি অন্তরের অবস্থা পর্যন্ত প্রিয় নবী [ﷺ] দেখতেন। আমরা কিন্তু দেখিনা তাহলে বুঝা গেল নবী আমাদের মত না। [বুখারী শরীফ, ১ম খন্ড, ২৬৩ পৃষ্ঠার ৮টি হাদিস, মিশকাত শরীফ, ১১১ পৃ. এবং ১৭৯ পৃ.]

সুতরাং প্রমাণিত হয়ে গেল, ইকামত শুরু করার পূর্বে কাতার সোজা করার উদ্দেশ্যে দাঁড়িয়ে যাওয়া খেলাফে সুন্নাত। বরং ইকামত দেওয়ার পর কাতার সোজা করার কথা বলা হয়েছে।

আবূ দাউদ শরীফের ১ম খন্ড ৯৭ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছেঃ

[ عن النعمان بن بشير رضى الله عنه قال كان رسول الله صلى الله عليه وسلم يسوئ صفوفنا اذا قمنا للصلاة فاذا استوينا كبر. ]

অর্থাৎঃ হযরত নু'মান বিন বশীর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা যখন নামাযের জন্য দাঁড়িয়ে যেতাম, তখন প্রিয় রাসূল [ﷺ] আমাদের (নামাযের) কাতার সোজা করতেন। কাতার যখন সম্পূর্ণ সোজা হয়ে যেত তখন তিনি তাকবীরে তাহরীমা বলতেন। [মিশকাত শরীফ; পৃ. ৯৮, হাদীসঃ ১০২৭]

উক্ত হাদীস শরীফ থেকে বুঝা যায়, প্রিয় নবীজী [ﷺ] কাতার সোজা করতেন ইকামতের পরে। দেখুন! রাসূলে করীম [ﷺ] মুসল্লিদের কাতার সোজা করার পরপরই তিনি তাকবীরে তাহরীমা বলে নিয়ত করতেন কারণ পূর্বেই ইকামত দেওয়া সম্পন্ন হয়ে গেছে।

জামাআতের সময় ইমাম মুসল্লীগণ কখন দাঁড়াবেন?

বাংলাদেশের কোন কোন মসজিদের ইমাম ও ময়াজ্জিনকে ইকামতের পূর্বে এই ঘোষণা দিতে শুনা যায়- আপনারা দাঁড়িয়ে কাতার সোজা করুন। মুক্তাদীগণকে দাঁড় করিয়ে তারপর ইকামত শুরু করা হয়। হানাফী মাযহাব মতে কখন দাঁড়াতে হবে তা অনেক ইমাম এবং মুয়াজ্জিন জানেন না। শুধু দেখাদেখি আমল করেন। এটা ঠিক নয়। ইকামতের সময় কখন ইমাম ও মুসল্লীগণের দাঁড়ানো সুন্নত- সে সম্পর্কে নিন্মে হানাফী মাযহাবের নির্ভরযোগ্য ফিকাহ ও ফতোয়ার ইবারত পেশ করা হলো। আল্লাহ সঠিক আমল করার তৌফিক দিন।

দলীল সমূহ-

১। আইনী শরহে বুখারীতে (৪র্থ খন্ডের ৩৫৭ পৃষ্টায়) উল্লেখ আছে-

[ قال ابو حنيفة ومحمد يقومون فى الصف ازا قال حى علي الصلوة . ]

অর্থাৎ- ইমাম আবু হানিফা [ رحمه الله عليه ] ও তার শাগরীদ ইমাম মুহাম্মদ [ رحمه الله عليه ] বলেছেন - যখন মুয়াজ্জিন 'হাইয়্যা আলাছ ছালাহ' বলবে তখন মুসল্লীগণ দাঁড়াবেন।

২। ফতহুল বারী শরহে বুখারীতে (২য় খন্ডের ১৪০ পৃষ্ঠায়) উল্লেখ আছে-

[ عن ابى حنيفة يقومون ازا قال حى علي الفلاح. ]

অর্থাৎ- ইমাম আবু হানিফা [ رحمه الله عليه ] হতে বর্ণিত আছে যে- যখন মুয়াজ্জিন 'হাইয়্যা আলাল ফালাহ' বলবে তখন মুসল্লিগণ দাঁড়াবেন।

৩। আল্লামা নববী [ رحمه الله عليه ] শরহে মুসলিমের মধ্যে (১ম খন্ডের ২২১ পৃষ্ঠায়) উল্লেখ করেছেন-

[ قال ابو حنيفة رضى الله عنه والكوفيون - يقومون فى الصف ازا قال حى علي الصلوة. ]

অর্থাৎ- ইমাম আবু হানিফা [رضي الله عنه এবং কুফার ফকিহগণ বলেছেন- যখন মুয়াজ্জিন 'হাইয়্যা আলাছ ছালাহ' বলবে তখন মুসল্লীগণ দাঁড়াবেন।

৪। আউনুল মা'বুদ শরহে আবু দাউদ -এ (২য় খন্ডের ১২৮ পৃষ্ঠায়) উল্লেখ আছে-

[ عن ابى حنيفة يقومون ازا قال حى علي الفلاح. ]

অর্থাৎ- ইমাম আবু হানিফা [ رحمه الله عليه ] হতে বর্ণিত, যখন মুয়াজ্জিন 'হাইয়্যা আলাল ফালাহ' বলবে তখন মুসল্লীগণ দাঁড়াবেন।

বিঃ দ্রঃ উপরের দুইটি প্রদ্ধতি ইমাম আবু হানিফা [ رحمه الله عليه ] থেকে বর্ণিত হয়েছে। দুইটি বর্ণনায় "হাইয়্যা আলাল ফালাহ" উল্লেখ করা হয়েছে। উক্ত বর্ণনার ফয়সালা বা সমন্বয় মুফতীগণ এভাবে করেছেন "হাইয়্যা আলাছ ছালাহ" বলার সময় দাঁড়ানো শুরু করবে "হাইয়্যা আলাল ফালাহ" বলার সময় পূর্ণভাবে দাঁড়াবে।

৫। তাহতাভী আলা মারাকিল ফালাহ' তে (২য় খন্ডের ২২০ পৃষ্ঠায়) উল্লেখ আছে-

[ اذا اخذ المؤذن فى الاقامة ودخل رجل فى المسجد فانه يقعد ولا ينتظر قائما فانه مكروه كما فى المضمرات قهستانى ويفهم منه كراهة ابتداء الاقامة - والناس عنه غافلون . ]

অর্থাৎ- যখন মুয়াজ্জিন ইকামত শুরু করবে, এমন সময় যদি কোন মুসল্লী মসজিদে প্রবেশ করে তা হলে তাকে বসে যেতে হবে। দাঁড়িয়ে (হাইয়্যা আলাছ ছালাহ বা ফালাহ) পর্যন্ত অপেক্ষা করতে পারবে না কেননা উহা মাকরুহ। আল্লামা কাহাস্তানীর মুজমিরাত গ্রন্থে এরুপই বর্ণিত আছে। তাহতাভী প্রণেতা বলেন কাহাস্তানীর ইবারত দ্বারা বুঝা গেল - ইকামতের শুরুতে দাঁড়িয়ে যাওয়া মাকরুহে তাহরীমী। কিন্তু লোকেরা এ সম্পর্কে খুবই গাফেল।

(উল্লেখ্য যে, আল্লামা তাহতাভীর যুগের লোকেরাও এ সম্পর্কে গাফলতি করে একটি মারাত্মক মাকরুহ কাজে লিপ্ত ছিল। বর্তমান কালে এরুপ করা কোন নতুন বিষয় নয়। আমাদের বিপরীত চিন্তার লোকেরা ভারতের জন্মলাভ করার পূর্বে ফতোয়ায়ে আলমগীরী রচিত হয়েছে। বাদশাহ আলমগীর ৭০০ বিজ্ঞ আলেম দিয়ে তৎকালীন ষোল লক্ষ টাকা ব্যয় করে উক্ত ফতোয়া রচনা করেছেন যাদের মধ্যে শাহ্ আব্দুর রহীম দেহলভী [ رحمه الله عليه ] অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। তখন দেওবন্দ মাদ্রাসা ছিল না। উক্ত ফতোয়ায় মুসল্লিগণের দাঁড়ানোর একটি মাত্র পদ্ধতিই বর্ণনা করা হয়েছে তা হল "হাইয়্যা আলাল ফালাহ" তে দাঁড়ানো শেষ করা। নিন্মে আলমগীরীর ইবারত দেখুন।)

৬। (ফতোয়ায়ে) আলমগীরীতে উল্লেখ আছে-

[ اذا دخل رجل عند الاقامة يكره له الانتظار قائما - ولكن يقعد ثم يقوم اذا بلغ المؤذن قوله حى علي الفلاح كذا المضمرات ان كان المؤذن غير الامام وكان القوم مع الامام فى المسجد فانه يقوم الامام والقوم اذا قال المؤذن حى علي الفلاح عند علمائنا الثلاثة وهو الصحيح. ]

অর্থাৎ- ইকামতের সময় কোন মুসল্লী মসজিদে প্রবেশ করলে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করা মাকরুহ বরং সে বসে যাবে। মুয়াজ্জিন যখন "হাইয়্যা আলাল ফালাহ" বলবে তখন সে পূর্ণভাবে দাঁড়াবে। মুজমিরাত গ্রন্থে এরুপ ফতোয়ায় উল্লেখ করা হয়েছে। অনুরুপভাবে ইমাম ও মুসল্লীগণ একসাথে মুয়াজ্জিনের "হাইয়্যা আলাল ফালাহ" বলার সময় দাঁড়াবে যদি তারা ইকামতের পূর্ব হতেই মসজিদে বসা থাকেন। হানাফী মাযহাবের প্রথম তিন ইমাম আবু ইউসূফের ইহা ঐক্যমত। ফতোয়ার নীতিমালা অনুযায়ী ইহাকে বিশুদ্ধ সহীহ্ একমাত্র গ্রহণযোগ্য ও নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বলা হয়। (ফতোয়ায়ে আলমগীরী, ১ম খন্ড ৫৭ পৃঃ)

অন্য তিন মাযহাবের মতামতঃ

১। ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল [ رحمه الله عليه ] এর মতামত সম্পর্কে ইমাম নববী শরহে মুসলিমে (মুসলিম শরীফ ১ম খন্ড ২২১ পৃষ্ঠায়) বলেন-

[ وكان انس رضى الله عنه يقوم اذا قال المؤذن قد قامت الصلوت وبه قال احمد. ]

অর্থাৎ- রাসূলে পাক [ﷺ] এর খাদেম হযরত আনাস [ رضى الله عنه ] ইকামতের সময় তখন দাঁড়াতেন যখন মুয়াজ্জিন বলতেন ক্বাদ ক্বামাতিছ ছালাহ। ইহাই ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বলের অভিমত।

২। আল্লামা আইনী শরহে বুখারীতে (৪র্থ খন্ড ৩৫৭ পৃষ্ঠায়) ইমাম আহমদের অভিমত এভাবে উল্লেখ করেছেন-

[ قال احمد اذا قال المؤذن قد قامت الصلوت يقوم الامام. ]

অর্থাৎ- ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল [ رحمه الله عليه ] এই অভিমত দিয়েছেন যে, যখন মুয়াজ্জিন বলবে " ক্বাদ ক্বামাতিছ ছালাহ" তখন ইমাম দাঁড়াবে।

৩। ইমাম শাফেয়ী [ رحمه الله عليه ] এর অভিমত সম্পর্কে আল্লামা কাস্তুলানী বলেন-

[ واختلف فى وقت القيام الى الصلوة فقال الشافعئ والجمهور عند الفراغ من الاقامة وهو قول ابى يوسف. ]

অর্থাৎ- নামাযের জামাতে দাঁড়ানোর সময়ের ব্যাপারে ইমামগণের মধ্যে বিভিন্ন মতামত রয়েছে। ইমাম শাফেয়ী এবং অধিকাংশ উলামাগণের মতে ইকামত সমাপ্ত হওয়ার পর ইমাম ও মুসল্লীগণ দাঁড়াবে। হানাফী মাযহাবের ইমাম আবু ইউসুফ [ رحمه الله عليه ] তাঁর পৃথক একটি মতে ইমাম শাফেয়ীর ন্যায় অভিমত দিয়েছেন। [মুসলিম শরীফ ১ম খন্ড ২২১ পৃষ্ঠা এবং শরহে মুসলিম শরীফেও রয়েছে]

৪। ইমাম মালেক [ رحمه الله عليه ] এর অভিমত সম্পর্কে আউনুল মা'বুদ শরহে আবু দাউদ (২য় খন্ড ১২৮ পৃষ্ঠায়) এবং ফতহুল বারী শরহে বুখারী গ্রন্থদ্বয়ে উল্লেখ রয়েছে-

[ وقال مالك فى الامؤطا لم اسمع فى قيام الناس حين تقام الصلوة بحد محدود الا انى ارى زلك على طاقه الناس فان فيهم الثقيل والضعيف وذهب الاكثرون الى انهم اذا كان الامام معهم فى المسجد لم يقوموا حتى يفرغ من الاقامة. ]

অর্থাৎ- ইমাম মালেক [ رحمه الله عليه ] বলেছেন- নামাযের ইকামতের কোন পর্যায়ে মুসল্লীগণকে দাঁড়াতে হবে- এ সম্পর্কে আমি কোন চুড়ান্ত হাদীছ এ পর্যন্ত শুনিনি। তবে আমি মুসল্লীগণের শারীরিক শক্তির উপর দাঁড়ানোর বিষয়টি ন্যস্ত করছি। কেননা, মুসল্লীদের মধ্যে কেউ আছে শারীরিকভাবে দূর্বল এবং কেউ আছেন হালকা পাতলা। তবে অধিকাংশ আলেমগণ (মালেকী) অভিমত দিয়েছেন যে, ইকামত শেষ না হওয়া পর্যন্ত ইমাম ও মুসল্লীগণ দাঁড়াবে না।

বিঃ দ্রঃ ইমাম মালেক [ رحمه الله عليه ] কর্তৃক পরিষ্কারভাবে দাঁড়ানোর সীমারেখা না দেওয়ার কারণ হলো - এ সম্পর্কিত কোন চুড়ান্ত হাদীস তাঁর নিকট তখনও পৌঁছেনি। তাই তিনি সুনির্দিষ্টভাবে সীমারেখা না দিয়ে মুসল্লীদের শারীরিক অবস্থার উপর ন্যস্ত করেছেন। কিন্তু মালেকী মাযহাবের উল্লেখযোগ্য একজন ইমাম আল্লামা যোরকানী [ رحمه الله عليه ] শরহে মোয়াত্তা ইমাম মালেক - এর মধ্যে উল্লেখ করেছেন যে, অধিকাংশ মালেকী উলামা এবং ফতোয়া বিশারদগণের মতে ইকামত শেষ না হওয়া পর্যন্ত ইমাম ও মুসল্লীগণ বসে থাকবেন।

পর্যালোচনাঃ

চার মাযহাবের মতামত পর্যালোচনা করলে দেখা যায়-

১। হানাফী মাযহাব মতে "হাইয়্যা আলাছ ছালাহ" বা "হাইয়্যা আলাল ফালাহ" বলার সময় ইমাম ও মুসল্লীগণের দাঁড়ানো সুন্নাত। এর পূর্বে দাঁড়ানো - মাকরুহ।

২। হাম্বলী মাযহাব মতে "ক্বাদ ক্বামাতিছ ছালাহ" এর সময় দাঁড়ানো সুন্নাত। [মুসলিম শরীফ ১ম খন্ড ২২১ পৃ.]

৩। শাফেয়ী মাযহাব মতে ইকামত শেষ হওয়ার পর দাঁড়ানো সুন্নাত।

৪। মালেকী মাযহাব মতে শারীরিক শক্তিভেদে ইকামত সমাপ্তির পর দাঁড়ানো সুন্নাত। অথবা ইকামত শেষ হলে দাঁড়ানো সুন্নাত। কোন মাযহাব মতেই ইকামত শুরুর পূর্বে বা "হাইয়্যা আলাছ ছালাহ" এর পূর্বে দাঁড়িয়ে থাকার কোন প্রমাণ বা বিধান নেই। যারা কাতার সোজা করার দোহাই দিয়ে মুসল্লীদেরকে পূর্বে দাঁড় করিয়ে রাখেন - তাদেরকে সুন্নাত তরকের দায়দায়িত্ব নিতে হবে। অপরদিকে যারা লোপ পেয়ে যাওয়া এই সুন্নাতকে পুনর্জীবিত করবেন- তারা একশত শহীদের সওয়াব পাবেন। [মিশকাত শরীফ, ৩০ পৃষ্ঠা, বায়হাকী শরীফ 'কিতাবুল জিহাদে' ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে]

কাতার কখন সোজা করবেন?

কাতার সোজা করা ওয়াজিব। ওয়াজিব কখন আদায় করবেন? এর দুটি পদ্ধতি রয়েছে।

একঃ হযরত ওমর [ رضى الله عنه ] কাতার সোজা করতেন ইকামতের পরে। তিনি হযরত আলী [ رضى الله عنه ] কে দিয়ে কাতার সোজা করে তারপর তাকবীরে তাহরীমা বাঁধতেন (মিশকাত)। মদিনা শরীফের মসজিদে নববীতে এই প্রথাই বর্তমানে চালু আছে।

দুইঃ বর্তমানে প্রায় সকল মসজিদেই কাতার চিহ্ন দেয়া থাকে। কোন গাফেল মুসল্লী যদি কাতার ভঙ্গ করে বসে থাকেন- তাহলে ইমাম সাহেব ইকামতের পূর্বে সকল মুসল্লীকে দাঁড় করিয়ে কাতার সোজা করে বসিয়ে দিয়ে মুয়াজ্জিনকে ইকামতের নির্দেশ দিলে ওয়াজিব এবং সুন্নাত উভয়টিই পালন করা সহজ হয়। এটা ইমামের সতর্কতার উপর নির্ভরশীল। তিনি জেনে শুনে মুসল্লীগণকে দিয়ে মাকরুহ' কাজ করালে সেজন্য তিনিই দায়ী থাকবে।

মুফতি নেয়ামত উল্লাহ,

বি এ (অনার্স),এম এ (মাষ্টারস)

চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

এম এফ,(কামিল ফিকহ)

জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলিয়া,চট্রগ্রাম

পাঠকের মন্তব্য (০)

লগইন করুন





ব্রেকিং নিউজ