ইসলামী ব্যাংকের দখল নিয়ে বেক্সিমকো, বসুন্ধরা ও এস আলম গ্রুপের দ্বন্দ্ব


দেশের বেসরকারি খাতের সবচেয়ে বড় ব্যাংক বাংলাদেশ ইসলামী ব্যাংক-এর মালিকানা নিয়ে নতুন করে প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে।গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে, ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংক-আইডিবির অধীনে থাকা শেয়ারের বড় অংশ বিক্রি করে দেয়ার কথা আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করার পর আগ্রহীরা অনেকেই সক্রিয় হয়ে উঠেছেন। ইসলামী ব্যাংক ও বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃপক্ষের জ্যেষ্ঠ পর্যায়ের কয়েকটি সূত্রের সঙ্গে কথা বলে এমন আভাস পাওয়া গেছে।

ব্যাংকটির মালিকানা পেতে সক্রিয় হয়ে উঠেছে বেক্সিমকো গ্রুপ। ব্যাংকটিতে বিনিয়োগ করে শেয়ার কিনে মালিকনায় আসতে তৎপর তারা। এ গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমান বর্তমানে আইএফআইসি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান। সেখানে গ্রুপটির বড় বিনিয়োগ রয়েছে।

অন্যদিকে, দেশের বড় শিল্পগোষ্ঠী বসুন্ধরা গ্রুপও আইডিবি’র ছেড়ে দেয়া শেয়ার কিনে ইসলামী ব্যাংকে বিনিয়োগ করতে চায় বলে গুঞ্জন রয়েছে। বর্তমানে গ্রুপটির চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহানসহ তার পরিবারের কেউ কোনও ব্যাংকের সঙ্গে জড়িত নন। তবে আহমেদ আকবর সোবহান বেসরকারি খাতের সোসাল ইসলামী ব্যাংক প্রতিষ্ঠার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তিনি ব্যাংকটিতে এক সময়ে চেয়ারম্যানও ছিলেন। তবে এক পর্যায়ে তিনি তার শেয়ার বিক্রি করে চলে যান।

তৃতীয় যে নামটি শোনা যাচ্ছে সেটি হলে আব্দুল মোনেম লিমিটেড। গ্রুপটিওর উদ্যোক্তারাও কোনও ব্যাংকে বিনিয়োগ করেননি। তারাও আগ্রহী দেশের বড় ইসলামী ব্যাংকে বিনিয়োগে। আব্দুল মোনেম লিমিটেড দেশের অবকাঠামো নির্মাণে পরিচিত নাম। ঢাকার বেশিরভাগ ফ্লাইওভারসহ দেশের অনেক অবকাঠামো নির্মাণের ঠিকাদারি পায় কোম্পানিটি।

তবে কেউ কেউ বলছেন, ইসলামী ব্যাংকে হঠাৎ বড় পরিবর্তনে ব্যাংকের দখলে আসা চট্টগ্রামের এস আলম গ্রুপ আপাতত কাউকে আসতে দিতে আগ্রহী নয়। নতুন কোম্পানি গঠন করে প্রতিষ্ঠানটি আইডিবির ছেড়ে দেয়া শেয়ার কিনে ব্যাংকটিতে নিজেদের একচেটিয়া দখল ও কর্তৃত্ব অব্যাহত রাখতে সক্রিয়।

সূত্রগুলো বলছে, সবপক্ষই সক্রিয় শেয়ার কিনে ইসলামী ব্যাংকের মালিকানায় যেতে। এসব গ্রুপের শীর্ষ ব্যক্তিরা সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে নিবিড়ভাবে যোগাযোগ রক্ষা করছেন।

সূত্রগুলো বলছে, গত ২৩ মে অনুষ্ঠিত বার্ষিক সাধারণ সভায় ইসলামি উন্নয়ন ব্যাংক তার শেয়ার ছেড়ে দেয়ার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়। প্রতিষ্ঠানটির কাছে সাড়ে সাত শতাংশ শেয়ার রয়েছে। কিন্তু আইডিবি এর ৫ দশমিক ৪ শতাংশ বিক্রি করে দেবে বলে এজিএম এ জানায়। বাকি ২ দশমিক ১ শতাংশ শেয়ার নিজেদের মালিকনায় রাখতে চায় প্রতিষ্ঠানটি।

সূত্রগুলো বলছে, আইডিবি দীর্ঘদিন ধরেই তাদের শেয়ার ছেড়ে দেয়ার কথা বলে আসছিলো। কিন্তু কোনও অগ্রগতি না থাকলেও গত ৫ জানুয়ারি হঠাৎ বড় পবির্তনের পর আবারও বিষয়টি সামনে আনে প্রতিষ্ঠানটি এবং সবশেষ এজিএমে শেয়ার ছাড়ার ঘোষণা দেয়।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক শুভংকর সাহা বলেন, ‘ইসলামী ব্যাংকের মালিকানায় কারা আসবে সেটি আমাদের বিষয় নয়। আমরা দেখব, ইসলামী ব্যাংক সঠিকভাবে চলছে কিনা কিংবা পরিবর্তনগুলো আইন ও বিধি মেনে হয়েছে কিনা।’

অপরদিকে, ব্যাংকের বর্তমান চেয়ারম্যান আরাস্ত খান বলেন, ‘আমি এ ব্যাপারে কোন মন্তব্য করতে পারব না। আইডিবি তার শেয়ার ছেড়ে দেবে বলে আমাদের এজিএমে জানিয়েছে। তার এই ৫ দশমিক ৪ শতাংশ শেয়ার কিনতে বড় বিনিয়োগ লাগবে। কিভাবে কে করবে সেটি সময় হলে দেখা যাবে।’

জানা গেছে, জানুয়ারিতে বড় পরিবর্তন এনে ইসলামী ব্যাংককে জামায়াত ও শিবিরমুক্ত করতে উদ্যোগ নেয়া হয়। ওই সময় পর্ষদসহ ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে বড় পরিবর্তন আনা হয়। তবে ৬ মাস যেতে না যেতেই পর্ষদে কোন্দল শুরু হয়েছে। ব্যাংকে সরকারের সমর্থিত ব্যক্তি হিসেবে পরিচত সৈয়দ আহসানুল আলমের সঙ্গে চেয়ারম্যান আরাস্ত খানের বিরোধ বাইরে চলে আসে।

এক পর্যায়ে এজিএমের পর জরুরি বোর্ড সভায় সৈয়দ আহসানুল আলমকে সরিয়ে দিতে ভাইস চেয়ারম্যান পদ কমিয়ে একটি করা হয়। পরে তিনি পরিচালক পদ থেকে নিজেই ইস্তফা দেন। তার সঙ্গে ব্যাংকের নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান আব্দুল মাবুদকেও সরিয়ে দেয়া হয়। তিনিও পদত্যাগ করেছেন পরিচালক পদ থেকে।আস