যে ১০ বই ওবামার পছন্দের

প্রকাশিত: ০৯ মার্চ, ২০১৭ ০১:০৯:৫০

যে ১০ বই ওবামার পছন্দের

সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা পড়তে খুব পছন্দ করেন। যে কারণে অনেকেই তাকে ‘গ্রন্থকীট’ হিসেবে উল্লেখ করেন। সাহিত্যের প্রতি তার অগাধ ভালোবাসার প্রমাণ ছড়িয়ে রয়েছে তার লেখা ‘ড্রিমস ফ্রম মাই ফাদার’ বইটিতে। সেখানে এক জায়গায় তিনি বলেছেন, ‘সাপ্তাহিক ছুটির দিনে যখন আমার কোনো কাজ থাকে না তখন নিজের শূন্য অ্যাপার্টমেন্টে বই-ই হয় আমার একমাত্র সঙ্গী।’

সম্প্রতি নিউ ইয়র্ক টাইমস পত্রিকার পুস্তক সমালোচক মিচিকো কাকুতানি ওবামার সঙ্গে সাহিত্য নিয়ে আলোচনার জন্য মিলিত হয়েছিলেন। তার সঙ্গে আলাপকালে ওবামা ১০টি বইকে শতাব্দীর সেরা বই হিসেবে উল্লেখ করে বলেছেন, ‘এগুলো সবার পড়া উচিত।’ নিজের মেয়ে মালিয়াকেও তিনি বইগুলো পড়তে বলেছেন।

দ্য নেকেড অ্যান্ড দ্য ডেড

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় একদল মার্কিন সেনা জাপানের আনোপোপেই দ্বীপ দখল করার চেষ্টা করে। যাতে তাদের পক্ষে প্রতিবেশী ফিলিপাইনের ওপর হামলা করাটা সহজ হয়। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করেই লেখক নরমান মেইলার বইটি লিখেছিলেন ১৯৪৮ সালে। এটি ইতোমধ্যে বিশ শতকের সেরা একশ’ ইংরেজি বইয়ের তালিকায় ঠাঁই পেয়েছে।

ওয়ান হানড্রেড ইয়ার্স অব সোলিটিউড

নোবেল বিজয়ী লেখক গাব্রিয়াল গার্সিয়া মার্কেজের এই উপন্যাসটি পড়ে দেখা উচিত। এই উপন্যাসে বুয়েন্দাই পরিবারের কয়েক পুরুষের ঘটনা তুলে ধরা হয়েছে। যা একই সঙ্গে একাকীত্ব এবং ভালোবাসার প্রয়োজনীয়তার কথা বলে। যাদু বাস্তবতার স্টাইলে লেখা বইটি ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকার সাহিত্যাঙ্গনে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। ১৯৬৭ সালে বইটি প্রকাশ হওয়ার পর এ পর্যন্ত ৩৭টি ভাষায় অনূদিত হয়েছে এবং ৩শ’ কোটিরও বেশি কপি বিক্রি হয়েছে।

দ্য গোল্ডেন নোটবুক

অ্যানা একজন সফল লেখক। তার একটি বই বেশ পাঠকপ্রিয়তা পেয়েছে। তিনি এখন চারটি ডায়েরি লিখছেন। কালো মলাটের ডায়েরিতে লিখছেন নিজের আফ্রিকা ভ্রমণের অভিজ্ঞতার কথা। লাল রংয়ের ডায়েরিতে লিখছেন তার রাজনৈতিক জীবনের উল্লেখযোগ্য ঘটনাবলী যার অন্যতম হচ্ছে কমিউনিজম থেকে নিজের মোহমুক্তির বিষয়টি। আর হলুদটাতে লিখছেন উপন্যাস। একজন চিত্রাভিনেত্রীর অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে গড়ে উঠেছে উপন্যাসের কাহিনি। আর নীল রঙের ডায়েরিতে লিখছেন তার ব্যক্তিজীবনের একান্ত কিছু ঘটনাবলী। অবশেষে একজন আমেরিকান লেখকের সঙ্গে ওই নারী লেখিকার প্রেম হওয়ার পর তার বোধোদয় ঘটে। তখন তিনি চারটি ডায়েরিকে একত্রিত করে গোল্ডেন নোটবুক তৈরি করেন। সাহিত্যে নোবেল বিজয়ী ব্রিটিশ লেখিকা ডোরিস লেসিংয়ের উল্লেখযোগ্য বই এটি। ১৯৬২ সালে বইটি প্রকাশ হয়েছিল। তবে এত বছর পেরিয়ে যাওয়ার পরও এর পাঠকপ্রিয়তা ও গ্রহণযোগ্যতা হ্রাস পায়নি। এ কারণেই ২০০৫ সালে টাইম ম্যাগাজিনের করা শতাব্দীর সেরা একশ’ বইয়ের তালিকায় রয়েছে ‘দ্য গোল্ডেন নোটবুক’।

 

দ্য ওমেন অরিয়র

চীনা বংশোদ্ভূত এক নারীর জীবনচরিত এটি। ক্যালিফোর্নিয়ায় বেড়ে ওঠা গল্পের নায়িকা চীনা মিথ আর পরিবারের গল্প বলেছেন। ১৯৭৬ সালে প্রকাশিত এ উপন্যাসের লেখক ম্যাক্সাইন হং কিংস্টোন।

দ্য আন্ডারগ্রাউন্ড রেইলরোড

এই উপন্যাসের নায়িকা কোরা একজন ক্রীতদাসী। যে কাজ করে জর্জিয়ার তুলা খামারে। অন্য সব নিগ্রোদের মতই নির্যাতন আর বঞ্চনায় ভরা তার জীবন। একসময় তাকে জোর করে লাগানো হয় পাতালরেলের কঠিন কাজে। কাজ করতে করতেই জীবনের ওপর চরম ঝুঁকি নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করে কোরা। কিন্তু পরিকল্পনা মাফিক সবকিছু হয় না। পালানোর সময় তাকে দেখে ফেলে এক শ্বেতাঙ্গ বালক। বাধ্য হয়ে তাকে খুন করে কোরা। শেষতক রেলস্টেশন পর্যন্ত যেতে সক্ষম হয় সে এবং উত্তরের দিকে যাত্রা শুরু করে। কিন্তু পিছনে ধাওয়া করে শিকারীরা। মার্কিন ঔপন্যাসিক কোলসন হোয়াইটহেডের লেখা ‘দ্য আন্ডারগ্রাউন্ড রেইলরোড’ গতবছরের মাঝামাঝিতে বাজারে আসার পর থেকেই ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। সম্মানজনক ন্যাশনাল বুক অ্যাওয়ার্ডসহ বেশ কিছু পুরস্কারও বগলদাবা করেছে বইটি।

গেলিয়াড

মেরিলিন রবিনসনের ‘গেলিয়াড’ উপন্যাসটি প্রকাশিত হয়েছিল ২০০৪ সালে। পরের বছরই সাহিত্যের সম্মানজনক পুলিৎজার এবং ন্যাশনাল বুক ক্রিটিকস সার্কেল পুরস্কার পেয়েছে। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার প্রিয় বই হওয়াও তো এক ধরনের পুরস্কার। এটি লেখিকার দ্বিতীয় উপন্যাস। তিনি লেখেন কম। কিন্তু যা লেখেন দীর্ঘ সময় নিয়ে লেখেন। এজন্যই প্রথম উপন্যাস ‘হাউসকিপিং’ প্রকাশিত হওয়ার দীর্ঘ ২৫ বছর পর বাজারে আসে তার দ্বিতীয় উপন্যাস। আত্মজীবনীধর্মী উপন্যাসটি লেখা হয়েছে চিঠিপত্রের মাধ্যমে যার কাল বিশ্বযুদ্ধ থেকে শুরু করে বিংশ শতাব্দী পর্যন্ত বিস্তৃত। পিতামহ, পিতা, সন্তান- এই তিন পুরুষ আর তাদের আধ্যাত্মিক লড়াইকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠেছে গেলিয়াডের গল্প। এই উপন্যাসের মাধ্যমে মেরিলিন রবিনসন প্রকারান্তরে আমেরিকানদের আত্মার কথাই ফুটিয়ে তুলেছেন যা পাঠকের হৃদয়কেও আর্দ্র করে তোলে।

ফেইটস অ্যান্ড ফিউরিস

দুটি ভিন্ন পরিবেশে বেড়ে ওঠা ভিন্ন মানসিকতার দুই নারী-পুরুষের বিবাহ পরবর্তী জীবনের নানা টানাপোড়েন নিয়ে গড়ে উঠেছে ‘ফেইটস অ্যান্ড ফিউরিস’ উপন্যাসের গল্প। প্রতিটি গল্পেরই দুটি দিক থাকে। প্রতিটি রিলেশনশিপেরও রয়েছে দুটি পৃথক পরিপ্রেক্ষিত। কখনও কখনও তা প্রকট হয়ে দেখা দেয়। সফল বিয়ের অন্যতম শর্ত কিন্তু সততা নয়, বরং কিছু গোপনীয়তা। এই উপন্যাসের লেখিকা লরেন গ্রফকে তার জেনারেশনের সেরা লেখক হিসেবে বিবেচনা করা হয়ে থাকে। যদিও ২০১৫ সালে প্রকাশিত এই ফিকশনটি কোনো পুরস্কার জিততে ব্যর্থ হয়েছে। তবে বারাক ওবামাসহ প্রখ্যাত ব্যক্তিদের মন জিতে নিয়েছে ‘ফেইটস অ্যান্ড ফিউরিস’।

সং অব সলোমন

জন্মের পর থেকেই ওড়াউড়ির শখ দুধওয়ালা ডেডের। বাকি জীবন সে এই ব্যর্থ প্রচেষ্টাই চালিয়ে গেছে। এই উপন্যাসে মার্কিন ঔপন্যাসিক টনি মরিসন মিসিগানের এক দুধওয়ালার জন্ম থেকে বৃদ্ধ হওয়া পর্যন্ত সময়ের নানা ঘটনাবলী চিত্রিত করেছেন। এটির ভাষা বর্ণনার ক্ষেত্রে তিনি বেছে নিয়েছিলেন যাদুবাস্তবতার কৌশল। ১৯৭৭ সালে প্রকাশিত বইটির জন্য ১৯৯৩ সালে নোবেল পুরস্কার জিতে নিয়েছিলেন মরিসন। এই বইটিকে বিংশ শতাব্দীর সেরা একশ’ বইয়ের তালিকায় সেরা হিসেবে ঘোষণা করেছে রেডক্লিফ পাবলিশিং।

ব্যান্ড ইন দ্য রিভার

নোবেল বিজয়ী লেখক ভিএস নাইপলের এই উপন্যাসের বিষয়বস্তু প্রবাসী এক ভারতীয়ের গভীর জীবন। যিনি বাস করেন সদ্য স্বাধীনতাপ্রাপ্ত আফ্রিকার এক দেশে। উপন্যাসের প্রধান চরিত্র সেলিম যিনি একজন বহিরাগত হিসেবে অবলোকন করেন সদ্য স্বাধীনতাপ্রাপ্ত আফ্রিকার দ্রুত পরিবর্তন। ১৯৭৯ সালে প্রকাশিত হওয়ার পর বুকার প্রাইজের জন্য মনোনীত হয়েছিল নাইপলের এই উপন্যাসটি। তবে বুকার না জিতলেও এটি ইতোমধ্যেই মাস্টরপিস হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। এছাড়া ১৯৯৮ সালে মডার্ন লাইব্রেরি কর্তৃক বিংশ শতাব্দীর সেরা একশ’ ইংরেজি উপন্যাসের তালিকায় ঠাঁই পেয়েছে বইটি।

গন গার্ল

মেসৌরি অঙ্গরাজ্যের নর্থ কার্টেজ এলাকা। গ্রীষ্মের উষ্ণ সকাল। নিক ও তার স্ত্রী এমি ডানের পঞ্চম বিবাহবার্ষিকীর আয়োজন। অতিথি অভ্যাগতদের অানিত পুরস্কারে ভরে গেছে ঘর। এই সময়ই ঘটল সেই দুর্ঘটনা। নিকের সুন্দরী বউ এমিকে পাওয়া যাচ্ছে না। কোথায় গেলো মেয়েটা? তবে কি মিডিয়াব্যক্তিত্ব নিকই রয়েছে এই কুকর্মের পিছনে? অথচ দায়িত্বশীল আর প্রেমিক স্বামী হিসেবে নিকের সুনাম আছে। ২০১২ সালে প্রকাশিত জিলিয়ান ফ্লেনের এই ফিকশনধর্মী উপন্যাসের পাতায় পাতায় রয়েছে রোমাঞ্চ আর উত্তেজনার ছড়াছড়ি। আর এ কারণে প্রকাশিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পাঠকরা এটি লুফে নেয়। ঠাঁই পায় নিউ ইয়র্ক টাইমসের বেস্ট সেলার উপন্যাসের তালিকায়। ২০১৪ সালে এই কাহিনি অবলম্বনে চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছেন হলিউডনির্মাতা ডেভিড ফিনচার।

পাঠকের মন্তব্য (০)

লগইন করুন



আরো সংবাদ














ব্রেকিং নিউজ