সেদিন মনে হয়েছিল পৃথিবী থমকে গেছে

প্রকাশিত: ৩১ জানুয়ারী, ২০২০ ১১:৫১:০০

সেদিন মনে হয়েছিল পৃথিবী থমকে গেছে

আমাকে বন্দি করে রাখা হয়েছে শুনে বন্ধুরা দেখতে আসে। আসলে তারা আমাকে দেখতে আসেনি। এসেছিল আমার এই অসহায়ত্ব নিয়ে মজা করতে। কিছু মানুষ আছে যারা অন্যের অসহায়ত্ব নিয়ে মজা করতে পছন্দ করে।

আমি জানালা খুলে তাদের সাথে কিছুক্ষণ কথা বলি। ঘনিষ্ঠ এক বন্ধুকে বললাম, আমাকে এক প্যাকেট সিগারেট দিয়ে যেতে। সে আমার মুখে সিগারেট কথা শুনে সাথে সাথে দোকানে গিয়ে সিগারেট নিয়ে এলো। আমার হাতে সিগারেট দিয়ে বলল, তুই সিগারেট খাস কবে থেকে? তার কথায় কোনো উত্তর দিলাম না।

খা খা তোর এখন সিগারেট খাওয়ার দিন। আমরা প্রেমে পড়ব না সিগারেটও খাব না। যখন তোর জীবনে প্রেম আসবে তখন তুই টের পাবি।সে চলে যায়। আমি একটার পর একটা সিগারেট টানতে থাকি। কিন্তু ধোঁয়া মস্তিষ্কে কোনো প্রভাব ফেলছে না। যত সিগারেট টানি তত মাহফুজার কথা মনে পড়ে। তারমানে সিগারেট যারা খায় তারা কোনকিছু ভুলার জন্য খায় না। যারা বলে মনের কষ্ট দূর করার জন্য সিগারেট খাই তারা আসলে ভাউতাজাতি করে।

আমি দশটি সিগারেট একসাথে গুলিয়ে পানি গিলে ফেলি। এরপর অবচেতনভাবে ঘুমিয়ে যাই। ঘুম থেকে উঠে মাথায় যন্ত্রণা অনুভব করি। সবকিছু এলোমেলো মনে হয়। কিন্তু মাহফুজার কথা ভুলতে পারিনি। শুধু তাকেই মনে পড়ছে। উপায় না পেয়ে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্নহত্যা করার চেষ্টা করি৷

জানালা দিয়ে মা দেখে চিৎকার করে বাড়ির সবাইকে জড়ো করে ফেলে। দরজা ভেঙে আমাকে উদ্ধার করে মা-বাবা দু’জন আমাকে জড়িয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন। তাদের কান্না দেখে উপলব্ধি করি তারা আমাকে যথেষ্ট ভালোবাসে৷ আমি আর পাগলামো করব না। যদি আমার ভাগ্যে থাকে তাহলে মাহফুজার সাথে আমার মিলন হবে।একদিন পর এক বন্ধু খবর নিয়ে এলো মাহফুজা আমাদের পাশের গ্রামে এসেছে। সেখানে তার খালার বাড়ি। খবর নিয়ে জানতে পারি আমার চাচাতো বোনের একই বাড়িতে বিয়ে হয়েছে। তারমানে চাচাত বোনের কাছে গেলেই সে মাহফুজার সাথে আমার সাক্ষাতের ব্যবস্থা করে দিতে পারবে।

বোন আমাকে দেখে আবেগ তাড়িত হয়ে পড়েন। নানা প্রশ্ন করেন। আমি তাকে মাহফুজার ব্যাপারে সব খুলে বলি। সব শুনে বোন আমাকে সাহায্য করতে রাজি হয়। আমাকে রুমে বসিয়ে রেখে সে মাহফুজার কাছে যায়। মাহফুজা আমার কথা শুনতে পেয়ে পাগলের মতো আমার কাছে ছুটে আসে।

দু’জন মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছি। চেহারা দেখে মনে হচ্ছে তার উপর দিয়ে কালবৈশাখী ঝড়, সাইক্লোন সব একসাথে বয়ে গেছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগে যেমন প্রকৃতিতে তার চিহ্ন রেখে যায়। মাহফুজার চোখেমুখেও এমন ক্ষত-বিক্ষত চিহ্ন দেখতে পারছি। কেউ কাউকে কিছু না বলে দু’জন দু’জনাকে বুকে জড়িয়ে নেই।আমিতাকে বুকে জড়িয়ে এতদিনের সব হতাশা, কান্তি, কষ্ট ভুলে ভালোলাগায় হারিয়ে যাই৷ শুনেছি একশ বছরের বিরহ ব্যথা নাকি মিলনের আনন্দে ভুলে যায়। মিলনের আনন্দ এতই শক্তিশালী শত বছরের কষ্ট, বিরহ মুহূর্তে ভুলিয়ে দেয়।

ক্লান্ত পথিক যেমন এক গ্লাস ঠাণ্ডা পানি পান করে তার পিপাসা মিটিয়ে তৃপ্ত হয় আমিও তেমন মাহফুজাকে বুকে জড়িয়ে তৃপ্ত হয়ে যাই। কতক্ষণ এভাবে ছিলাম আমার জানা নেই। মনে হয়েছিল তখন থমকে গেছি পৃথিবী থমকে গেছে সময়। আমি আর মাহফুজা বাস্তব পৃথিবীর বাকি সব কল্পনা।মাহফুজা নিজেকে ছাড়িয়ে বলল, চলো দু’জন পালিয়ে যাই। তোমাকে নিয়ে কোথায় যাব। আমার কোনো আয় নেই। তোমাকে খাওয়াব কী। তুমি কি আমাকে সত্যি ভালবাসো? এই প্রশ্ন কেন? ভালো না বাসলে কি তোমার জন্য দিন রাত কান্না করতাম। মা-বাবার অত্যাচার সহ্য করতাম। শোন আমিও তোমাকে ভালোবাসি। আমাদের এই ভালোবাসা সত্যি হলে একদিন না একদিন আমাদের মিলন হবেই৷

এরপর আর কিছু বলতে পারিনি। আপা এসে বলল জাহাঙ্গীর ওর মা এসেছে মাহফুজাকে বাসায় যেতে দে। পরে আবার কথা বলতে পারবি। মাহফুজা দ্রুত ঘর থেকে বের হয়ে যায়।আমি জানালা দিয়ে তাকিয়ে দেখি তার মা তাকে নিয়ে চলে যাচ্ছে। এ সময় ওর মা এখানে কেন? নিশ্চয় কেউ ওর মাকে খবর দিয়েছে আমি এখানে এসেছি।

বাসার ফিরে মাথায় যন্ত্রণা অনুভব করি। একসাথে এতগুলি সিগারেট খাওয়া ঠিক হয়নি। মাথার যন্ত্রণায় আবোল-তাবোল বকতে থাকি। মা-বাবা আমার অবস্থা দেখে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যান। ডাক্তার সব দেখে আমাকে মানসিক ডাক্তারের নিকট রেফার করেন। মানসিক ডাক্তার আমার কথা শুনে বললেন, তুমি মনোযোগ দিয়ে পড়ালেখা করো। ভালো রেজাল্ট করো। নিজেকে সমাজে প্রতিষ্ঠিত করো। তখন দেখবে মেয়ের মা-বাবা তোমার মা বাবার কাছে ক্ষমা চেয়ে তোমার হাতে তার মেয়েকে তুলে দিবে।

প্রজন্মনিউজ২৪/নাজিম উদ্দীন

পাঠকের মন্তব্য (০)

লগইন করুন



আরো সংবাদ














ব্রেকিং নিউজ