রোমান্টিকতায় ভরা ধনবাড়ির নবাববাড়ি

প্রকাশিত: ২৯ জানুয়ারী, ২০২০ ০৪:৫৪:৫৫ || পরিবর্তিত: ২৯ জানুয়ারী, ২০২০ ০৪:৫৪:৫৫

রোমান্টিকতায় ভরা ধনবাড়ির নবাববাড়ি

লিখেছেন ফয়সাল আহমেদ, টাঙ্গাইল প্রতিনিধিঃ রাজপ্রাসাদের সামনের সুবিস্তৃত বাগানও শুধুই বাগান নয়, শত বছরে হয়তো শত হাজারবার ঝরে গেছে গোলাপের পাপড়ি, কামিনীর পাতা, তবুও আজ পাতায় পাতায় লেখা রয়ে গেছে রাজারানির রোমান্টিকতার কড়চা, পাঁপড়িগুলোয় রাজকুমারীর হাতের স্পর্শ।

তেমনি একটা ঐতিহ্যবাহী জমিদার বাড়ি  ধনবাড়ি। ধনবাড়ী জমিদার বাড়িটি টাঙ্গাইলের ধনবাড়ীতে অবস্থিত বলে এর নাম ধনবাড়ী জমিদার বাড়ি। খান বাহাদুর সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরীর (১৮৬৩-১৯২৯) যিনি ছিলেন ঢাকা বিশ্বদ্যিালয়ের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা, রাষ্ট্রভাষা বাংলা করার প্রথম প্রস্তাবক এবং ব্রিটিশ সরকারের প্রথম মুসলিম মন্ত্রী। তাঁরই অমর কৃর্তি ধনবাড়ী জমিদার বাড়ি বা নওয়াব প্যালেস।

এই জমিদারবাড়ির রয়েছে একটি সুদীর্ঘ ইতিহাস। ধারণা করা হয়, মোগল সম্রাট জাহাঙ্গীরের আমলে ধনপতি সিংহকে পরাজিত করে মোগল সেনাপতি ইস্পিঞ্জর খাঁ ও মনোয়ার খাঁ ধনবাড়ীতে জমিদারি প্রতিষ্ঠা করেন।

বাংলাদেশে এখন আর নেই জমিদারি শাসনব্যবস্থা, ধনবাড়ীও তার ব্যতিক্রম নয়। জমিদার নেই, জমিদারি নেই কিন্তু চুন-সুরকির নওয়াব প্যালেস ঐশ্বর্যে ও ঐতিহ্যে ঠিকই আজও মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে। অপূর্ব স্থাপত্যকর্মের কারণে ক্রমে জমিদারবাড়িটি পরিণত হতে থাকে পর্যটকদের জন্য আকর্ষণীয় স্থানে। তাই নবাবের উত্তরাধিকারীরা জমিদারবাড়িতে গড়ে তোলেন পিকনিক স্পট, যা নবাব সৈয়দ হাসান আলী রয়্যাল রিসোর্ট হিসেবে বেশ খ্যাতি লাভ করেছে। রিসোর্টটি দেখাশোনার দায়িত্বে আছে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান লাইট হাউস গ্রুপ।

বংশাই ও বৈরান নদীর মধ্যবর্তী অঞ্চলে অবস্থিত এই প্রাচীন জমিদারবাড়িটি অপূর্ব স্থাপত্যশৈলী এবং কারুকার্যে সত্যিই মনোরম এবং মনোমুগ্ধকর। তবে রিসোর্ট তৈরির পর নবাব প্যালেসে বেড়েছে চাকচিক্য এবং আধুনিকতা। চার গম্বুজবিশিষ্ট অপূর্ব মোগল স্থাপত্যরীতিতে তৈরি এই শতাব্দীপ্রাচীন নবাব প্যালেস।

পুরো নবাব মঞ্জিল বা নবাব প্যালেসটি প্রাচীরে ঘেরা। প্রাসাদটি দক্ষিণমুখী এবং দীর্ঘ বারান্দাসংবলিত। ভবনের পূর্বদিকে বড় একটি তোরণ রয়েছে। তোরণের দুই পাশে প্রহরীদের জন্য রয়েছে দুটি কক্ষ। তোরণটি জমিদার নওয়াব আলী চৌধুরী  ব্রিটিশ গভর্নরকে অভ্যর্থনা জানানোর জন্য নির্মাণ করেন। প্রাচীরঘেরা চত্বর অংশে আবাসিক ভবন দুটি ছাড়া আরো আছে ফুলের বাগান, চিড়িয়াখানা, বৈঠকখানা, নায়েবঘর, কাচারিঘর, পাইকপেয়াদা বসতি এবং দাস-দাসি চত্বর; যা এখনো আপনি দেখতে পাবেন।

দর্শনার্থীদের জন্য প্রাসাদের ভেতরের বেশ কয়েকটি কামরা ঘুরে দেখার সুযোগ আছে। তা ছাড়া বারান্দাতেও শোভা পাচ্ছে মোগল আমলের নবাবি সামগ্রী, সেগুলো ছুঁয়ে দেখতে পারেন। মোগল আমলের আসবাবপত্র আপনাকে মুগ্ধ করবে। প্যালেসটির পাশেই রয়েছে ৩০ বিঘার বিশালাকার দিঘি, যার কূলকিনারা খুঁজে পাওয়া দায়। সেখানে দর্শনার্থীদের ঘোরার জন্য রয়েছে দুটি সাম্পান, চড়তে পারেন আপনিও।

তাছাড়া নবাবি কায়দায় পুরো রিসোর্ট ঘুরে দেখার জন্য রয়েছে ঘোড়া ও ঘোড়ার গাড়ির ব্যবস্থা। ইচ্ছে হলে দেখতে পারেন গারোদের সংস্কৃতি ও নাচ। এ জন্য আপনাকে আগেই জানিয়ে রাখতে হবে রিসোর্ট কর্তৃপক্ষকে। তা ছাড়া এখানে আরো দেখতে পাবেন বিলুপ্তপ্রায় লাঠিখেলা।

রিসোর্টটির আরেকটি বিরাট আকর্ষণ নবাব মসজিদ। রয়েল রিসোর্টের ঠিক পাশেই রয়েছে ৭০০ বছরের পুরোনো এক মসজিদ। মোগল স্থাপত্যের নিদর্শন এই মসজিদের মোজাইকগুলো এবং মেঝেতে মার্বেল পাথরে নিপুণ কারুকার্য অসাধারণ। মসজিদটির পাশে একটি কক্ষ রয়েছে, যা নবাব বাহাদুর সৈদয় নওয়াব আলী চৌধুরীর মাজার। ১৯২৯ সালে নবাবের মৃত্যুর পর থেকে এখানে ২৪ ঘণ্টা কোরআন তিলাওয়াত হচ্ছে, যা এখনো এক মিনিটের জন্য বন্ধ হয়নি। বর্তমানে সাতজন কারি নিযুক্ত রয়েছেন। তাঁরা প্রতি দুই ঘণ্টা পরপর একেকজন কোরআন তিলাওয়াত করে থাকেন।

মোগল স্থাপত্যরীতিতে নির্মিত মসজিদটির আকার-অবয়বে বেশ কয়েকবার পরিবর্তন সাধন করা হয়েছে। তিন গম্বুজবিশিষ্ট মসজিদ লাগোয়া সুদৃশ্য ও জাঁকজমকপূর্ণ একটি মিনার রয়েছে। মসজিদকে কেন্দ্র করে মানত-প্রথা প্রচলিত রয়েছে। মসজিদটি প্রায় দশ কাঠা জমির ওপরে অবস্থিত। আদি মসজিদটি ছিল আয়তাকার। তখন এর দৈর্ঘ্য ছিল ১৩.৭২ মিটার (৪৫ ফুট) এবং প্রস্থ ছিল ৪.৫৭ মিটার (১৫ ফুট) কিন্তু সংস্কারের পর মসজিদটির আকার রীতিমতো পরিবর্তিত হয়ে যায়।

বর্তমানে এটি একটি বর্গাকৃতির মসজিদ এবং সাধারণ তিনগম্বুজবিশিষ্ট আয়তাকৃতির মোগল মসজিদের সঙ্গে বৈসাদৃশ্যপূর্ণ। সংস্কারের পর বর্তমানে এর অনেক বৈশিষ্ট্যই ভিন্ন আঙ্গিক গ্রহণ করেছে এবং সেই সঙ্গে এর প্রাচীনত্ব লুপ্ত হয়েছে এবং চাকচিক্য অনেক বেড়েছে। সুন্দর কারুকার্যময় এ মসজিদের পূর্বদিকে বহু খাঁজবিশিষ্ট খিলানযুক্ত তিনটি প্রবেশপথ, এ ছাড়া উত্তর ও দক্ষিণে আরো একটি করে সর্বমোট পাঁচটি প্রবেশপথ রয়েছে। মসজিদটি বর্ধিতকরণ ও সংস্কার সাধনের পরেও এর ওপরের তিনটি গম্বুজ ও পাঁচটি প্রবেশপথে প্রাচীনত্বের ছাপ লক্ষ করা যায়।

প্রচলিত নিয়মে এ মসজিদের পূর্বদিকের তিনটি প্রবেশপথ বরাবর এর অভ্যন্তরে কিবলা দেয়ালে তিনটি মিহরাব নির্মিত হয়েছে। কেন্দ্রীয় মিহরাবের কুলুঙ্গিটি অষ্টভুজাকার ও বহু খাঁজবিশিষ্ট খিলান সহযোগে ফুলের নকশায় অলংকৃত। উভয় পাশের দুটি ও বহু খাঁজবিশিষ্ট খিলানযোগে গঠিত তবে অলংকারহীন। কেন্দ্রীয় মিহরাবের পাশে একটি মিম্বার রয়েছে। মসজিদের অভ্যন্তরভাগ সর্বত্র চীনামাটির টুকরো দ্বারা মোজাইক নকশায় অলংকৃত, যার অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ফুলের নকশা লক্ষণীয়।

অর্ধবিঘা আয়তনের অনুচ্চ প্রাচীরবেষ্টিত একটি প্রাচীন কবরস্থান রয়েছে এখানে। আর এর পাশেই রয়েছে একটি মসজিদ। ধারণা করা হয় ইস্পিঞ্জার খাঁ ও মনোয়ার খাঁ মসজিদটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এ মসজিদে একসঙ্গে ২০০ জন মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারেন। এখনো মসজিদ অভ্যন্তরে মোগল আমলের তিনটি ঝাড়বাতি শোভা পাচ্ছে। নওয়াব প্যালেস দর্শনে আপনিও হতে পারেন ঐতিহ্যের সাক্ষী। রিসোর্টের ভেতরে প্রবেশ করতে আপনাকে খরচ করতে হবে মাত্র ৩০ টাকা।

প্রজন্মনিউজ২৪/সজীব
    
    

 

পাঠকের মন্তব্য (০)

লগইন করুন



আরো সংবাদ














ব্রেকিং নিউজ












A PHP Error was encountered

Severity: Core Warning

Message: PHP Startup: Unable to load dynamic library '/opt/cpanel/ea-php56/root/usr/lib64/php/modules/redis.so' - /opt/cpanel/ea-php56/root/usr/lib64/php/modules/redis.so: cannot open shared object file: No such file or directory

Filename: Unknown

Line Number: 0

Backtrace: