ভারতের পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী কোলকাতায় সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন ‘সিএএ’ বিরোধী আন্দোলনকারীদের ‘বাংলাদেশি মুসলিম’ এবং তাঁদের ভারত ছাড়তে হবে হবে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বিজেপি’র কেন্দ্রীয় সম্পাদক রাহুল সিনহা। গতকাল (রোববার) তিনি ওই মন্তব্য করেন।

বিজেপি নেতা রাহুল সিনহার ওই মন্তব্যের তীব্র নিন্দা করেছেন কংগ্রেস, তৃণমূল ও সিপিএম নেতারা। কোলকাতার পার্কসার্কাসে গত ৭ জানুয়ারি থেকে মুসলিম নারী ও তাঁদের সঙ্গে থাকা শিশুরা ‘সিএএ’ বিরোধী ধর্না-অবস্থান আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা তাঁদের সমর্থন জানিয়েছেন।কিন্তু বিজেপি নেতা রাহুল সিনহা বলেছেন, ‘পার্ক সার্কাসে যে বাচ্চারা আন্দোলন করছে, ওরা বিদেশি! ওখানে সব বাংলাদেশি মুসলমান।

ওদের ভারত ছাড়তেই হবে। ‘আজাদি’  স্লোগান এখানে চলবে না। ভারতকে টুকরো করতে চায় যারা, তারা জাতীয় পতাকা হাতে ধরলেই কি সব মেনে নিতে হবে? যত চেষ্টাই করুন, যাঁরা এদেশের নন, তাদের এদেশ ছাড়তেই হবে!’

রাহুল সিনহার ওই মন্তব্যের বিরোধিতা করে লোকসভার কংগ্রেসের দলনেতা  অধীর চৌধুরী এমপি বলেন, ‘যাঁরা এখানে আন্দোলন করছেন, তাঁরা সকলে  এদেশের মানুষ।

রোববার অধীর বাবু পার্কসার্কাসে আন্দোলনকারীদের পাশে দাঁড়াতে সেখানে গিয়েছিলেন।তিনি বলেন, ‘এখানে যারা আন্দোলন করছেন তাঁরাই প্রকৃতপক্ষে এদেশের বাসিন্দা। যদি অধীর চৌধুরী এখানে এসে থাকে, অধীর চৌধুরীকে বিদেশি, বাংলাদেশি বলতে পারেন। কিন্তু এখানে যারা আন্দোলন করছেন তারা সবাই ওঁদের চেয়ে বেশি এদেশি। এরা এদেশি বলেই ওঁদের এত মাথা ব্যাথা।’

অধীর বাবু বলেন, ‘ আমাকে  ওঁরা (বিজেপি) ‘বিদেশি বা অনুপ্রবেশকারী’ বলতে পারেন। কিন্তু এ দেশের সংবিধানকে বাঁচাতে যাঁরা আন্দোলন করছেন, তাঁদের এমন কথা বলা যায় না। সব মানুষ এক হয়ে প্রতিবাদে নেমেছেন বলে বিজেপির মাথা খারাপ হয়ে গিয়েছে।’

অন্যদিকে, রাজ্যের মন্ত্রী ও তৃণমূলের নারী সংগঠনের নেত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য বিজেপি নেতাদের নাম না করে কটাক্ষ করে বলেন, ‘কেউ পোশাক দেখে অনুপ্রবেশকারী চিনে ফেলছে! কেউ খাওয়া দেখে অনুপ্রবেশকারী চিনে ফেলছে! যারা প্রতিবাদী তাঁদেরকে দেশদ্রোহী, অনুপ্রবেশকারী বলা হচ্ছে! আমরা তীব্র ধিক্কার জানাই। মানুষে মানুষে বিভাজন, এটা কেউ মেনে নেবে না।’

বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান ও সিপিএম নেতা বিমান বসু বলেছেন, ‘অবাক কাণ্ড! যারা প্রতিবাদ করবে, ভারতীয় সংবিধানের আদর্শ রক্ষা করার জন্য কাজ করবে তাঁরাই বাংলাদেশি হবে! তাঁরাই বিদেশি হবে? এসব জঘন্য কার্যকলাপ থেকে রাহুল বাবুদের বিরত থাকা উচিত।’

বাম পরিষদীয় নেতা ও সিপিএম বিধায়ক সুজন চক্রবর্তী বলেন, ‘নির্বোধ এবং অসভ্যের মতো কথা না বললে বিজেপি হওয়া যায় না! বাংলাকে ভাগ করার উত্তরাধিকার যাঁদের, তাঁরাই আবার প্রতিবাদীদের বাংলাদেশি বলে আক্রমণ করছেন। মানুষই এসবের জবাব দেবেন।’ সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র বলেন, রাহুল সিনহা নির্বোধের মতো মন্তব্য করছেন।

 প্রজন্মনিউজ২৪/নাজিম উদ্দীন