ধর্ষণের পরিসংখ্যান

প্রকাশিত: ০৭ জানুয়ারী, ২০২০ ০৫:২৩:৪৩ || পরিবর্তিত: ০৭ জানুয়ারী, ২০২০ ০৫:২৩:৪৩

ধর্ষণের পরিসংখ্যান

 

'ধর্ষণ' এক ধরনের যৌন আক্রমণ। সাধারণত, একজন ব্যক্তির অনুমতি ব্যতিরেকে তার সঙ্গে যৌনসঙ্গম বা অন্য কোনো ধরনের যৌন অনুপ্রবেশ ঘটানোকে ধর্ষণ বলা হয়। ধর্ষণ শারীরিক বলপ্রয়োগ, অন্যভাবে চাপ প্রদান কিংবা কর্তৃত্বের অপব্যবহারের মাধ্যমে সংঘটিত হতে পারে। অনুমতি প্রদানে অক্ষম (যেমন- কোনো অজ্ঞান, বিকলাঙ্গ, মানসিক প্রতিবন্ধী কিংবা অপ্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি) এরকম কোনো ব্যক্তির সঙ্গে যৌনমিলনে লিপ্ত হওয়াও ধর্ষণের আওতাভুক্ত। ধর্ষণের অভিযোগ, বিচার ও শাস্তিপ্রদান বিভিন্ন শাসনব্যবস্থায় বিভিন্ন রকম।

বাংলাদেশে দিন-দিন বাড়ছে ধর্ষণ, বেড়েই চলছে। নারীর প্রতি সহিংসতার এতএত আইন করেও কমানো যাচ্ছে না ঘৃন্য ও বর্বর এই কাজটি।গত কয়েক বছরের পরিসংখ্যান দেখলেই তা সহজে অনুমান করা যায়। মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্য (আসক) এর হিসাব অনুযায়ী ২০১৭ সালে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ৮১৮ জন নারী। ২০১৮ সালে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ৭৩২ জন। ২০১৯ সালে হয়েছে ১ হাজার ৩১৩ জন।২০১৭ ও ১৮ সালের তুলনায় ধর্ষণের ঘটনা বেড়েছে দ্বিগুণ যা ভয়াবহ বলে উল্লেখ করেছে সংস্থাটি৷ ২০১৯ সালে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে ৭৬ জনকে। আর আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছেন ১০ জন নারী। ২০১৮ সালে যৌন হয়রানির শকিার হয়েছে ১৭০ জন , ২০১৯ সালে বেড়ে হয়েছে ২৫৮ জন।

আইন ও সালিশ কেন্দ্রের সাবেক নির্বাহী পরিচালক এবং মানবাধিকার নেত্রী সুলতানা কামাল নারীর প্রতি সহিংসতা বেড়ে যাওয়ার কারণ হিসেবে বিচারহীনতাকেই দায়ী করেন৷ তবে রাষ্ট্র ও সমাজে নারীর প্রতি সহিংসতার আরো অনেক উপাদান আছে বলে মনে করেন তিনি৷

তিনি বলেন, ‘‘ধর্ষণসহ নারীর প্রতি সহিংসতার যেসব ঘটনা ঘটে তার একটি অংশ জানা যায় না৷ এ বিষয়ে কোনো মামলা হয় না৷ আর যেগুলোর মামলা হয় বিশেষ করে ধর্ষণের ক্ষেত্রে সেখানে শতকরা মাত্র তিন ভাগ ঘটনায় শেষ পর্যন্ত অপরাধী শাস্তি পায়৷ আর ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনায় শাস্তি হয় মাত্র শূন্য দশমিক তিন ভাগ৷ তাহলে বোঝা যাচ্ছে এ ধরনের কোনো ঘটনায় বিচার হয় না৷’’ তবে এর বাইরেও আরো অনেক বিষয় আছে বলে মনে করেন তিনি৷

এ মানবাধিকার নেত্রী বলেন, ‘‘যারা ধর্ষক তারা ধর্ষণের শিকার নারীর চেয়ে শক্তিশালী৷ অন্যদিক বাদ দিলেও লৈঙ্গিকভাবে পুরুষ শক্তিশালী৷ তারা সামাজিক এবং রাজনৈতিকভাবেও শক্তিশালী৷ নারীদের সামাজিকভাবে সুরক্ষা দেয়ার রাষ্ট্রের যে দায়িত্ব রয়েছে রাষ্ট্র তা পালন করছে না৷ আর নারীদের বাইরে বের হওয়া কিংবা কাজে যাওয়ার বিষয়গুলোকে সমাজে এখনো ভালো চোখে দেখা হয় না৷ নারীর বাইরে বের হওয়াকে পুরুষের ক্ষমতা খর্ব হওয়া হিসেবে দেখা হয়৷ আর প্রতিদিন নানা জায়গায় নারীর বিরুদ্ধে কথা বলা হয় কিন্তু সরকার ব্যবস্থা নেয় না৷ ফলে নারীর প্রতি সহিংসতা বাড়ছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ও অপরাধ বিজ্ঞানের অধ্যাপক শেখ হাফিজুর রহমান কার্জনের মতে নারীর প্রতি সহিংসতার বিরুদ্ধে বাংলাদেশে শক্ত আইন আছে৷ ‘‘কিন্তু শাস্তি দিয়ে খুব বেশি অপরাধ কমানো যায় না৷ আর এটা ধর্ষণ এবং ধর্ষণের পর হত্যার ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য৷ আমাদের এখানে সমাজের ভিতরে অসংখ্য উপাদান আছে যা ধর্ষণ বা নারীর প্রতি সহিংসতাকে উসকে দেয়৷

আমাদের দেশে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন বিশেষ আইন ২০০৩ সেকশন ৯ অনুসারে ধর্ষণের শাস্তি হলো, ধর্ষণের কারণে বা ধর্ষণের পর ভিক্টিমের কোনো ক্ষতি হলে বা ভিক্টিম  র্ধষণের পর মারা গেলে  ধর্ষণকারীকে মৃত্যুদন্ড দিতে হবে এবং এক লাখ টাকা জরিমানাও করা হবে।

প্রজন্মনিউজ২৪/জাহিদ

পাঠকের মন্তব্য (০)

লগইন করুন



আরো সংবাদ














ব্রেকিং নিউজ