ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ড নিয়ন্ত্রণে মরিয়া শর্টগান সোহেল

প্রকাশিত: ০৪ জানুয়ারী, ২০২০ ১১:৪৪:২৬

ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ড নিয়ন্ত্রণে মরিয়া শর্টগান সোহেল

ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ড নিয়ন্ত্রণে মরিয়া হয়ে উঠেছে সোহেল শাহরিয়ার। ঢাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী জাফর আহম্মেদ মানিকের এই সেকেন্ড ইন কমান্ড প্রায় দুই মাস ধরে ঢাকায় অবস্থান করে তার সহযোগীদের সক্রিয় করছে। একই সাথে তার সহযোগীরা রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজিসহ বিভিন্ন অপরাধ কর্মকাণ্ড শুরু করেছে।

এর মাধ্যমে ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ড নিয়ন্ত্রণে নেয়ার চেষ্টা করছে সোহেল। সম্প্রতি কমলাপুর রেলওয়েতে টেন্ডারবাজি করতে গিয়ে গ্রেফতার হয়েছে তার এক সহযোগী। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ঢাকার পুরস্কার ঘোষিত শীর্ষ সন্ত্রাসী জাফর আহম্মেদ ওরফে মানিকের সেকেন্ড ইন কমান্ড সোহেল শাহরিয়ার।

ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বাসভবনে হামলার ঘটনায় হওয়া মামলার অন্যতম আসামি তৎকালীন ফ্রিডম পার্টির নেতা মানিক পলাতক ও সাজাপ্রাপ্ত একজন সন্ত্রাসী। তাকে গ্রেফতারের জন্য পুরস্কারও ঘোষিত রয়েছে। তার হাত ধরেই অপরাধ জগতে উত্থান সোহেলের। ২০০৮ সালের ৪ মার্চ রাজধানীর শাহজাহানপুরে স্বেচ্ছাসেবক লীগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণের মতি-মহসিন কমিটির সদস্য ও ৩৪ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মো: কাউসার আলীকে দিনেদুপুরে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করা হয়।

এ ঘটনায় কাউসারের চাচা মো: আমির আলী মতিঝিল থানায় অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন। ২০১৬ সালে সিআইডি দীর্ঘ তদন্ত শেষে এই মামলায় আদালতে যে চার্জশিট দাখিল করে, তাতে সোহেল শাহরিয়ার ওরফে শর্টগান সোহেলের নাম আসে। মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে উঠে আসে মানিকের নাম। এর আগে ২০০২ সালে হাবীবুল্লাহ বাহার কলেজের ছাত্রলীগ নেতা মিজানকে গুলি করার পর মিজান কলেজ ক্যাম্পাস ছেড়ে গেলে সোহেল সেখানকার নিয়ন্ত্রণ নেন।

ওই সময় থেকেই মানিকের সহযোগী হিসেবে ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডে তার প্রভাব রয়েছে। কাউসার হত্যায় সোহেল শাহরিয়ার নাম উঠে এলে সে কানাডা চলে যায়। গত বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর যুবলীগ নেতা খালিদ মাহমুদ ভূঁইয়া ও পরবর্তী সময়ে যুবলীগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাবেক সভাপতি ইসমাঈল চৌধুরী সম্রাট গ্রেফতার হওয়ার পর কানাডা থেকে দেশে ফেরে সোহেল।

সোহেলের দেশে ফেরার খবরে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে কাউসারের পরিবারে। কাউসারের পরিবার থেকে জানানো হয়েছে তারা এখন চরম আতঙ্কের মধ্যে আছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র বলেছে, দেশে ফেরার পর সোহেল শাহরিয়ার যুবলীগের কমিটিতে নিজের স্থান করে নেয়ার জন্য তোড়জোড় শুরু করে। গ্রেফতারি পরোয়ানা নিয়ে ঢাকায় ফিরলেও সে গুরুত্বপূর্ণ অনেক ব্যক্তির সাথে দেখা করে এবং যুবলীগের কমিটিতে নিজেকে অন্তর্ভুক্ত করতে লবিং করে।

এর মধ্যেই তার গ্রুপের সদস্যরা রাজধানীর শাহজাহানপুর, মতিঝিল, পল্টন, কমলাপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় চাঁদাবাজি, ডিশ ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ, মাদক কারবারের নিয়ন্ত্রণ ও টেন্ডারের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। কমলাপুর রেলওয়েতে টেন্ডারবাজি করতে গিয়ে গত সপ্তাহে গ্রেফতার হয় তার এক সহযোগী।

এ দিকে কাউসার হত্যায় গ্রেফতারি পরোয়ানা থাকার পরও কিভাবে সে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির সাথে দেখা করল, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। দেশে ফেরার পর এসব যোগাযোগ নীরবে করলেও এখন ক্রমেই সোহেল প্রকাশ্যে চলে আসছে। বিভিন্ন এলাকায় তার ছবি দিয়ে পোস্টার ঝোলানো হয়েছে। এর আগে সোহেল ২০১৮ সালে কানাডা স্বেচ্ছাসেবকলীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়।

পরে তৎকালীন স্বেচ্ছাসেবকলীগের শীর্ষ নেতাদের মধ্যে বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। শোনা যায়, ম্যানেজ করেই নাকি সোহেল ওই পদ বাগিয়ে ছিল। জানা গেছে, কানাডা থেকে সে যে দিন ঢাকায় এসেছে সে দিন বিমানবন্দরে যারা তাকে রিসিভ করতে গিয়েছিল তাদের মধ্যে অস্ত্র মামলার এক পলাতক আসামিও ছিল।

ঢাকার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক কর্মকর্তা বলেছেন, সোহেল শাহরিয়ারের ঢাকায় আসার বিষয়টি তাদের নজরে আছে। এমনকি সোহেল শাহরিয়ার কোথায় অবস্থান করে, কাদের সাথে দেখা করে সে সম্পর্কেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অবগত। তারা শুধু গ্রিন সিগন্যালের অপেক্ষায় আছেন।

 

পাঠকের মন্তব্য (০)

লগইন করুন



আরো সংবাদ














ব্রেকিং নিউজ