আগামী তিন বছরের মধ্যে ‘অদক্ষ-ছোট’ বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ

প্রকাশিত: ০২ জানুয়ারী, ২০২০ ১১:২৮:১৭

আগামী তিন বছরের মধ্যে ‘অদক্ষ-ছোট’ বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ

বিদ্যুৎ নিয়ে গত কয়েক বছর থেকে কম আলোচনা হয় নি। কুইক রেন্টাল, রামপালে কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, রূপপুরে পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র ইত্যকার সব মিলিয়ে তুমুল আলোচনা-সমালোচনার মধ্যে এবার  
তেলনির্ভর ‘অদক্ষ-ছোট’ বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো ৩ বছরের মধ্যে বন্ধ করে দেবে সরকার।

‘অপ্রয়োজনীয়’ তেলচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়ে সমালোচনার মধ্যেই নতুন এই সিদ্ধান্তের কথা জানালো বিদ্যুৎ বিভাগ। যদিও এর আগে থেকেই মেয়াদ শেষ হওয়া কেন্দ্রগুলোর চুক্তি অনুমোদন করা হচ্ছে না বলে জানিয়েছিল বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)।

বর্তমানে ফার্নেস অয়েল থেকে ৪ হাজার ৪৮৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে, যা মোট বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রায় ২৫ ভাগ। ডিজেল থেকে দুই হাজার ২০৫ মেগাওয়াট, যা ১১ ভাগ। এরমধ্যে ২০০৯ সালে এই সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর যেসব কেন্দ্রকে রেন্টাল এবং কুইক রেন্টাল হিসেবে স্থাপন করা হয়েছিল, সেগুলোর প্রায় সব ক’টির মেয়াদ বাড়িয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগ। কিন্তু এই উচ্চ দরের বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল।

জানতে চাইলে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, ‘আমার চিন্তা করছি তিন বছরের মধ্যে অদক্ষ ও ছোট  তেলচালিত সব বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ করে দেওয়া হবে।’ তিনি বলেন, ‘‘চলতি বছরের শুরুতেই উৎপাদনে আসছে দেশের সবচেয়ে বড় কেন্দ্র ‘পায়রা ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াটসম্পন্ন বিদ্যুৎকেন্দ্র’।

এই কেন্দ্রটি উৎপাদনে এলে দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা আরও এক হাজার মেগাওয়াট বাড়বে। ফলে এই পরিমাণ ছোট বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ করে দেওয়া সম্ভব হবে। যদিও সেটি  করতে হবে খুব ধীরে ধীরে। এই কাজ একদিনে হবে না।’’ সব মিলিয়ে এই তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বেরিয়ে আসতে হলে কমপক্ষে তিন বছর সময় লাগবে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।

পিডিবির তথ্য মতে, বর্তমানে দেশে ১৯ হাজার ৪৬৭ মেগাওয়াট ক্ষমতার বিদ্যুৎকেন্দ্র আছে। এরমধ্যে উৎপাদন করা যায় ১৮ হাজার ৯৪৪ মেগাওয়াট। তবে, আমাদের বিদ্যুতের চাহিদা এখন মাত্র ৮ হাজার ৭০২ মেগাওয়াট। সে হিসাবে প্রায় ১০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হয় না।

এদিকে, এসব বিদ্যুৎকেন্দ্র না চালালে বসে থাকা বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোকে দিতে হয় ক্যাপাসিটি চার্জ। ২০২০ সালে ২০ হাজার ৩১ কোটি টাকা হবে সম্ভাব্য ক্যাপাসিটি পেমেন্ট। এ অবস্থায় তেলভিত্তিক বেশি মূল্যের বিদ্যুৎ থেকে বের হয়ে আসার দরকার বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

বিদ্যুৎ বিভাগও চাইছে বের হয়ে আসতে। কিন্তু পিডিবি বের হয়ে আসছে না। বরং একের পর এক তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের মেয়াদ বাড়ানো হচ্ছে। তারা বলছে, বড় ও সাশ্রয়ী বিদ্যুৎকন্দ্রে না আসার কারণেই তারা তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর মেয়াদ বাড়াচ্ছে।

এদিকে, বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বড় ও সাশ্রয়ী বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো আনার ক্ষেত্রে অবহেলার কারণেই তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বের হতে পারছে না সরকার। ফলে, বাড়ছে ক্যাপাসিটি চার্জ, বাড়ছে বিদ্যুতের মূল্য।

বিদ্যুৎ বিভাগ জানায়, তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বের হয়ে আসতে হলে শুধু বড় বিদ্যুৎকেন্দ্র নয়, নবায়নযোগ্য জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুতে গুরুত্ব দিচ্ছি। এখন এই বিদ্যুতের মূল্য বেশি হলে বিশ্বের বহুদেশ এই বিদ্যুতের দিকে ঝুঁকছে। একসময় এই বিদ্যুতের মূল্য কমে আসবে। তাই এখন থেকেই এই ধরনের বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে সরকারকে।

তেলচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো গড়ে ইউনিট প্রতি (ফার্নেসচালিত) ১৫ টাকা আর ডিজেলে ২৩ টাকায় বিদ্যুৎ উৎপাদন করে। অন্যদিকে, গ্যাসে এই খরচ আড়াই টাকা, কয়লায় সাড়ে ছয় টাকা খরচ হয়। আর নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে (সোলার) এই খরচ এখন নেমে এসেছে ছয় থেকে সাত টাকার মধ্যে। উৎপাদন খরচ নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখতে এখন তেলচালিত বিদ্যুৎ উৎপাদন নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখার পক্ষে বিদ্যুৎ বিভাগ।

প্রজন্মনিউজ২৪/এম.এ.এম

পাঠকের মন্তব্য (০)

লগইন করুন





ব্রেকিং নিউজ