বাংলাদেশ ব্যাংকের বিজ্ঞপ্তিতে ‘নারীর ঠিকানার শর্ত’ নিয়ে রুল

প্রকাশিত: ০১ জানুয়ারী, ২০২০ ১১:০৩:২৩

বাংলাদেশ ব্যাংকের বিজ্ঞপ্তিতে ‘নারীর ঠিকানার শর্ত’ নিয়ে রুল

বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে ‘বিবাহিত মহিলা প্রার্থীদের ক্ষেত্রে স্বামীর স্থায়ী ঠিকানাকে প্রার্থীর স্থায়ী ঠিকানা হিসেবে উল্লেখ করতে হবে’- বাংলাদেশ ব্যাংকের এমন শর্ত কেন আইনগত কর্তৃত্ব বহির্ভূত হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট।

নারী সাংবাদিক কেন্দ্রের সভাপতি বলেন, ‘আর কোনো সরকারি চাকরিতে তো এ রকম নিয়ম নেই। আর কে কী ঠিকানা দেবে, সেটা তার নিজস্ব ব্যাপার। যার প্রয়োজন সে শ্বশুরবাড়ির ঠিকানা ব্যবহার করবে, যার প্রয়োজন সে বাবার বাড়ির ঠিকানা ব্যবহার করবে। এটা এভাবে বলে দেয়া বাস্তবসম্মত নয়। অনেকের তো শ্বশুর বাড়ির সাথে সম্পর্ক খারাপও থাকতে পারে’

আগামি চার সপ্তাহের মধ্যে জনপ্রশাসন সচিব, বাণিজ্য সচিব, অর্থ বিভাগের সচিবসহ পাঁচজনকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

জনস্বার্থে দুই সংগঠনের করা রিট আবেদনের শুনানি নিয়ে মঙ্গলবার হাইকোর্টের বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি মো. খায়রুল আলমের অবকাশকালীন বেঞ্চ এ রুল জারি করেন।

আবেদনের পক্ষে এদিন শুনানি করেন আইনজীবী আইনুন্নাহার সিদ্দিকা। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।

পরে আইনুন্নাহার সিদ্দিকা সাংবাদিকদের বলেন, ১ ডিসেম্বর ওই নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি জারি করে। ওই বিজ্ঞপ্তির ১৪ নম্বর পয়েন্টে বলা হয়, ‘বিবাহিত মহিলা প্রার্থীদের ক্ষেত্রে স্বামীর স্থায়ী ঠিকানাকে প্রার্থীর স্থায়ী ঠিকানা হিসেবে উল্লেখ করতে হবে।’ এটা সংবিধানের সমতার ক্ষেত্রে লঙ্ঘন। কারণ সংবিধানের ২৮ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘(১) কেবল ধর্ম, গোষ্ঠী, বর্ণ, নারী-পুরুষভেদ বা জন্মস্থানের কারণে কোন নাগরিকের প্রতি রাষ্ট্র বৈষম্য প্রদর্শন করিবেন না। (২) রাষ্ট্র ও গণজীবনের সর্বস্তরে নারী-পুরুষের সমান অধিকার লাভ করিবেন।’

২৯ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘(১) প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োগ বা পদ-লাভের ক্ষেত্রে সকল নাগরিকের জন্য সুযোগের সমতা থাকিবে। (২) কেবল ধর্ম, গোষ্ঠী, বর্ণ, নারী-পুরুষভেদ বা জন্মস্থানের কারণে কোন নাগরিক প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োগ বা পদ-লাভের অযোগ্য হইবেন না কিংবা সেই ক্ষেত্রে তাহার প্রতি বৈষম্য প্রদর্শন করা যাইবে না।’ এজন্য রিট করা হয়। ওই রিটের শুনানি নিয়ে আদালত রুল জারি করেছেন বলে জানান আইনুন্নাহার সিদ্দিকা।

আদালতে আবেদনটি দায়ের করে বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট) ও নারীপক্ষ। আবেদনে ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের বিজ্ঞপ্তিতে নারীর ঠিকানার শর্তের সমালোচনা’ শীর্ষক প্রকাশিত প্রতিবেদন যুক্ত করা হয়।

ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশ ব্যাংকের এক নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে বিবাহিত নারীদের স্বামীর স্থায়ী ঠিকানাকে স্থায়ী ঠিকানা হিসেবে ব্যবহারে নির্দেশনা থাকায় তা নিয়ে উঠেছে সমালোচনা। গত ১ ডিসেম্বর ব্যাংকের মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগ সহকারী পরিচালক (জেনারেল) পদে নিয়োগের আবেদন চেয়ে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে।

মহাব্যবস্থাপক নূর-উন-নাহার স্বাক্ষরিত ওই বিজ্ঞপ্তির ১৪ নম্বর পয়েন্টে বলা হয়, বিবাহিত মহিলা প্রার্থীদের ক্ষেত্রে স্বামীর স্থায়ী ঠিকানাকে প্রার্থীর স্থায়ী ঠিকানা হিসেবে উল্লেখ করতে হবে।

বিজ্ঞপ্তি দেখে ইন্টারনেটে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকেই সমালোচনা করেন। বিষয়টি নিয়ে নারী সাংবাদিক কেন্দ্রের সভাপতি নাসিমুন আরা হক মিনু এক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, এটি যেমন বাস্তবসম্মত নয়, তেমনই প্রাসঙ্গিক নয়। এটা প্রাসঙ্গিক নয়, কারণ যারা চাকরি দেবে, তারা দেখবে যে প্রার্থী যোগ্য কি-না? সে কি বিবাহিত, না সে অবিবাহিত, সেটি দেখার বিষয় নয়।


বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের সরকারি সার্কুলার মেনে চলতে হয়। তবে, জনগণের যেন কোনো অসুবিধা না হয়, সে বিষয়টি আমরা দেখব। আমরা সংশ্লিষ্ট বিভাগকে অনুরোধ করব এ বিষয়ে প্রার্থীদের চাহিদা অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে।’

 

প্রজন্মনিউজ২৪/ সজীব

পাঠকের মন্তব্য (০)

লগইন করুন



আরো সংবাদ














ব্রেকিং নিউজ