সন্ত্রাসবাদে অর্থায়ন বন্ধ করতে হবে : স্পিকার

প্রকাশিত: ০৯ ডিসেম্বর, ২০১৯ ০৩:১১:৫৫ || পরিবর্তিত: ০৯ ডিসেম্বর, ২০১৯ ০৩:১১:৫৫

সন্ত্রাসবাদে অর্থায়ন বন্ধ করতে হবে : স্পিকার

সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় সবার আগে সন্ত্রাসী অর্থায়ন বন্ধের ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। তিনি বলছেন, উগ্রবাদী হয়ে কেউ জন্ম নেয় না। নানা অনিষ্পত্তিমূলক বিরোধ পরিস্থিতি তাদের বিপথগামী করে তোলে। সারাবিশ্বের সকল সফলতার জন্য উগ্রবাদ আজ হুমকি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। উগ্রবাদ মোকাবিলায় ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। এক্ষেত্রে উগ্রবাদ দমনে সবার আগে সন্ত্রাসী অর্থায়ন বন্ধ করতে হবে। উগ্রবাদ বিরোধী জাতীয় সম্মেলন-২০১৯’ এর উদ্বোধন শেষে এসব কথা বলেন স্পিকার। রাজধানীর কুড়িলে বসুন্ধরা কনভেনশন সেন্টারে দুই দিনব্যাপী যৌথভাবে এ সম্মেলনের আয়োজন করেছে সিটিটিসি, ইউএস-এইড, ইউএন। প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্পিকার বলেন, উগ্রবাদ বিরোধী কার্যক্রমকে জোরদার করতে হলে সকল স্তরের মানুষের কাছে পৌঁছাতে হবে। এক্ষেত্রে উগ্রবাদ বিরোধী জাতীয় সম্মেলনসহ অন্যান্য সকল কার্যক্রম জোরদার করতে হবে। তিনি বলেন, সহিংসতা ও উগ্রবাদ বৈশ্বিক সমস্যা। কোনো একটি দেশ এককভাবে জঙ্গিবাদ মোকাবিলা করতে পারবে না। এর চাইতে বড় বাস্তবতা হচ্ছে সারাবিশ্ব জঙ্গিবাদ-উগ্রবাদ সহিংসতার সম্মুখীন। উগ্রবাদ সহিংসতা থেকে নিজেদের সুরক্ষার জন্য নিজের দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে অন্য দেশে অর্থাৎ আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে ফোরামগুলোতে আমাদের একসঙ্গে কাজ করতে হবে। ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, এ ব্যাপারে সমগ্র বিশ্বে একটি কনসেপ্ট বা ঐক্যমত আছে। জঙ্গিবাদ সন্ত্রাসবাদে জড়িতরা দেশের শত্রু, সভ্যতার শত্রু, মানবতার শত্রু। আজকে সারাবিশ্বে জঙ্গিবাদ সহিংসতা ও সন্ত্রাসবাদ শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য চরম হুমকি হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। টেরোরিজম এক্সট্রিমিজম ভায়োলেন্স কোনোভাবেই সারাবিশ্বের কাছে আর গ্রহণযোগ্য নয় সেটা আজ স্পষ্ট। সেজন্য আমাদের ব্যক্তিগতভাবে, সমষ্টিগতভাবে জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসবাদ সহিংসতার বিরুদ্ধে কাজ করতে হবে। বিভিন্ন কনসেপ্ট কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে। তিনি বলেন, জাতিসংঘ কর্তৃক একটি গ্লোবাল স্ট্র্যাটেজি ২০০৬ সালে গ্রহণ করা হয়েছে। সারাবিশ্বের নেতৃবৃন্দরা ওই গ্লোবাল স্ট্র্যাটেজিতে সন্ত্রাসবাদ-জঙ্গিবাদ মোকাবিলায় ঐক্যবদ্ধ হয়েছেন। কীভাবে সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গিবাদের উত্থান ঘটছে তা আগে চিহ্নিত করার কথা উল্লেখ করে স্পিকার বলেন, সন্ত্রাসীরা কীভাবে কী কারণে সন্ত্রাসী হয়ে উঠছে? কোনো মানুষ কিন্তু সন্ত্রাসী হয়ে, জঙ্গি হয়ে, উগ্রবাদী হয়ে, জন্মগ্রহণ করে না। তাহলে কী কারণে তারা এই পথ বেছে নেয়, সেটি আমাদের চিহ্নিত করতে হবে, এটা খুবই জরুরি। সেই দিকটি লক্ষ্য রেখেই গ্লোবাল স্ট্র্যাটেজিতে বলা হয়েছে, দীর্ঘসূত্রতার সঙ্গে যদি কোনো বিরোধ চলমান থাকে, তাহলে এই ধরনের উগ্রবাদের জন্ম হতে পারে। যেহেতু মানুষ উগ্রবাদী, জঙ্গি হয়ে জন্মায় না, সেজন্য জঙ্গিকে কোনো ধর্মের বা কোনো গোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত করা যাবে না। আমরা জানি, কোনো সন্ত্রাসী, জঙ্গির কোনো দেশ নেই, কোনো ধর্ম নেই। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গিবাদের ব্যাপারে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছেন। জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসবাদ সহিংসতাকে মোকাবিলা করতে হলে আমাকে দারিদ্র্যতাকে দূর করতে হবে, সামাজিক বৈষম্য দূর করতে হবে। আমাদের তরুণ প্রজন্মকে জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসবাদ সহিংসতার ব্যাপারে সচেতন করে তুলতে হবে। তাদের মধ্যে এমন একটি ধারণা তৈরি করতে হবে যাতে করে তাদের মধ্যে কোনো ধরনের হতাশা ও নৈতিকতার অবক্ষয় না ঘটে। আমাদের আর্থসামাজিক বৈষম্য দূর করার ক্ষেত্রে লক্ষ্য রাখতে হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সে ধরনের কার্যক্রমই গ্রহণ করেছেন। কোনো সন্ত্রাসবাদ-জঙ্গিবাদের জন্য যেন দেশের ভূখণ্ড ব্যবহার না হয়, সেদিকে সজাগ দৃষ্টি রাখার আহ্বান জানান স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। তিনি বলেন, সন্ত্রাসবাদ-জঙ্গিবাদের জন্য অভ্যন্তরীণ কোনো ভূখণ্ড ব্যবহার করতে দেব না। এই জায়গাটাতে আমাদের সবাইকে অটল থাকতে হবে। কোনো ধরনের উগ্রবাদ-জঙ্গিবাদের কোনো ক্যাম্প বা প্রশিক্ষণ কেন্দ্র যেন আমাদের দেশের কোনো ভূখন্ডে গড়ে না ওঠে, সেদিকে আমাদেরকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে।তিনি বলেন, পারিবারিক অবস্থান থেকে শুরু করে শিক্ষাব্যবস্থার ক্ষেত্রেও সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে অবস্থান স্পষ্ট হতে হবে। সে চেষ্টা আমাদের সবাইকে করতে হবে। স্পিকার আরও বলেন, এখন তথ্যপ্রযুক্তির যুগ। সোশ্যাল মিডিয়াতেও কাউন্টার ন্যারেটিভ অর্থাৎ উগ্রবাদ বিরোধী যুক্তিগুলো সক্রিয়ভাবে তুলে ধরতে হবে, প্রচার করতে হবে। এটা খুবই জরুরি। আজকে আমরা বিচারহীনতা থেকে বেরিয়ে আসতে পেরেছি বলে মন্তব্য করেন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার সঙ্গে যারা জড়িত ছিল তাদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে পেরেছি, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সম্পন্ন হয়েছে। সেই ধারাবাহিকতায় হলি আর্টিসানে হামলার মামলার রায়ও নিশ্চিত করা হয়েছে।তিনি বলেন, সমগ্র বিশ্বের সকল সফলতাকে নিমিষেই শেষ করে দিতে পারে সহিংসতা, সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গিবাদ। আমাদের সফলতা বিফলে যেন না যায়, সেজন্য সবাইকে সহিংসতা ও উগ্রবাদ রুখে দিতে হবে। এজন্য জনসচেতনতা ছাড়া এটা সম্ভব না।অনুষ্ঠানের শুরুতে শুভেচ্ছা বক্তব্যে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার ও কাউন্টার টেররিজম প্রধান মনিরুল ইসলাম বলেন, সমন্বয়ের মাধ্যমে উগ্রবাদ বিরোধী কাজ করার জন্য প্ল্যাটফর্ম তৈরি হয়নি। এই সম্মেলনের মাধ্যমে তা শুরু হলো। আলোচনার মাধ্যমে উগ্রবাদ দমন প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে। তাই আইনগত ব্যবস্থার মাধ্যমে পুনর্বাসন কার্যক্রম চালিয়ে বিপথগামীদের সুস্থ জীবনে ফিরিয়ে আনতে হবে।ইউএন রেসিডেন্ট কো-অর্ডিনেটর মিয়া সেপ্পো বলেন, উগ্রবাদ শুধু বাংলাদেশের জন্যই নয়, পুরো বিশ্বের জন্য থ্রেট। উগ্রবাদ নির্মূলে নারীরা উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে পারে। তাদের হাত ধরেই এই সংকট সমাধানের পথ খুঁজতে হবে। আন্তর্জাতিক অংশীজনদের উগ্রবাদ বিরোধী কার্যক্রমে যুক্ত হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিক সম্পর্কবিষয়ক উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভী বলেন, তিন বছর আগে উগ্রবাদ এ দেশে মাথাচারা দিয়েছিল। পরবর্তীতে সকলের সম্মিলিত চেষ্টায় সেই পরিস্থিতির উত্তরণ হয়েছে। তবে উগ্রবাদ বিরোধী এই কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে হবে। আন্তর্জাতিক সহায়তা ছাড়া উগ্রবাদ দমন সম্ভব না বলে জানান তিনি।বিশেষ অতিথি মার্কিন রাষ্ট্রদূত আর আর মিলার বলেন, যুক্তরাষ্ট্র সরকার উগ্রবাদ প্রতিরোধে ২০১৬ সাল থেকে বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করছে। উগ্রবাদ দমনে ইতোমধ্যেই ৩৫ মিলিয়ন ডলার সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। প্রয়োজনে আরও সহায়তা করতে যুক্তরাষ্ট্র সরকার প্রস্তুত রয়েছে।

প্রজন্মনিউজ২৪/নাজিম উদ্দীন

পাঠকের মন্তব্য (০)

লগইন করুন



আরো সংবাদ














ব্রেকিং নিউজ